সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ঘটছে একের পর এক ভুমিধসের ঘটনা

301

হবিগঞ্জ, ৭ জুলাই, ২০১৮ (বাসস): অতিমাত্রায় বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে কয়েক দফা ভুমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
এ অবস্থায় মারাত্বক হুমকির মধ্যে পড়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। অবাধে গাছ কাটা এবং ভাটিতে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মধ্যে পড়েছে জাতীয় উদ্যানের পরিবেশ ও প্রতিবেশ। ভূমি ধসে বড় বড় গাছ পড়ে যাচ্ছে।
২০১৭ সালে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মুল ট্রেইল এবং টাওয়ারে যাওয়ার রাস্তার পাশে কয়েক দফা ভাঙ্গন দেখা দেয়। এতে প্রায় দেড়শ ফুট ট্রেইল হুমকির মধ্যে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে বন বিভাগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি বার বার ভাঙ্গন মেরামত করে কোন রকম ট্রেইল চালু রাখে। চলতি বছর মওসুমের শুরুতেই টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলের কারণে পুনরায় কয়েক দফা ভাঙ্গন দেখা দেয়। পাহাড়ের ছড়াগুলো পাহাড়ী ঢলে একাকার করে দিয়েছে। ছড়ার চারপাশের গাছপালা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে ঢলের পানি। জাতীয় উদ্যানের এক ঘন্টা ও ৩ ঘন্টার ট্রেইল ও ওয়াচ টাওয়ারের ট্রেইলের কাছের ছড়াটি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে একেবারে ট্রেইলের কাছে চলে এসেছে। যে কোন সময় টানা বৃষ্টি হলেই এ ট্রেইল পানিতে ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে সরজমিনে গেলে দেখা যায়, ছড়ায় ঢলের পানিতে গাছপালাসহ ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। পাহাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে একেবারে ট্রেইলের কাছে এসে লেগেছে। পাহাড়ের অভ্যান্তরে অনেক স্থানে কয়েক দফার বৃষ্টি আর ঢলের পানি ছড়াগুলো ভেঙ্গে বড় করে ফেলেছে। কোন কোন স্থানে একেবারে খেলার মাঠের মতো হয়ে গেছে। বালিমাটির কারণে টিলার পানি নামার সাথে সাথে ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে গাছপালা ও ট্রেইল। এ অবস্থায় ট্রেইলের একমাত্র ব্রিজ ও পার্কের কাউন্টারসহ মুল ফটক হুমকির মধ্যে রয়েছে।
স্থানীয় ভাবে জানা গেছে, গত দুবছর ধরে টানা বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ের অভ্যান্তরের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। চির সবুজ এবং রেইন ফরেস্ট নামে খ্যাত সাতছড়ি ছড়ার মিলন এখন আর দেখা যায়না। ছড়াগুলো গতি পরিবর্তন করে যে দিকে নিচু এবং মাটি নরম পাচ্ছে সেদিকেই ভাঙ্গতে শুরু করেছে। একই সাথে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের উজান এবং ভাটিতে চা বাগান এবং বাইরে বিভিন্ন নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে পাহাড়ের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ভাটিতে পানি নামার সময় পানির সাথে বালুসহ সবকিছু ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। এতে নানা প্রজাতির বন্যপ্রািণও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। জাতীয় উদ্যানের মাত্র ৮ কিলোমিটারের মধ্যে সুতাং নদী থেকে এবং তেলিয়াপাড়া এলাকায় চা বাগানসহ বিভিন্ন ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করার কারণে মাটি সরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পানির সাথে পাহাড়ের মাটি গিয়ে বালু নেওয়া গর্ত ভরাট হচ্ছে। পাহাড় ধসের আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে অবাধে গাছপালা কাটা।
চুনারুঘাট বাজার থেকে সাতছড়ি হয়ে তেলিয়াপাড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার পুরাতন মহাসড়কের পাশে অসংখ্য ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে চুনারুঘাট থেকে তেলিয়াপাড়া সড়ক। ইতোমধ্যে গত বছর এবং চলতি বছর কয়েক দফা রামগঙ্গা ব্রিজ, চন্ডিছড়া ব্রিজ এবং সাতছড়ি পাহাড়ের অভ্যান্তরে পুরাতন মহাসড়ক ভেঙ্গেছে। দুবার ব্রিজ ভাঙ্গার কারণে ঐ সড়কে প্রায় দুমাস যান চলাচলও বন্ধ ছিল।
সরজমিনে চুনারুঘাট থেকে সাতছড়ি হয়ে তেলিয়াপাড়া আঞ্চলিক সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন স্থানে হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথের লোকজন বালিভর্ত্তি বস্তা দিয়ে রাস্তা মেরামত করছেন। তারা কোন রকম বল্লী দিয়ে প্যালাসাইড তৈরি করে সড়ক যোগাযোগ চালু রাখার চেষ্ঠা করছেন। এসড়কটি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে উদ্যানটি রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে।
বন বিভাগ এবং সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি চলতি বছর ক্রেল প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। চলতি মে মাসে কাজ শুরুর পর থেকেই কয়েক দফা বৃষ্টি এবং ঢলের পানিতে কাজের অনেক অংশ পানিতে তলিয়ে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় পুরো কাজ করাও দুস্কর হয়ে পড়েছে।
পাহাড় ভাঙ্গন এর ফলে সাতছড়িতে বসবাসকারী টিপরা পল্লীর লোকজনের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। গত বছর ভাঙ্গনের ফলে বেশ কয়েকটি বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারন সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান শুধু হবিগঞ্জ নয় এটি সারা দেশের সম্পাদক। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা এ বন দেশের পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণির অভয়াশ্রম। কিন্তু অবাধে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে বন এখন হুমকির মুখে। হবিগঞ্জের সরকারী বৃন্দাবন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ দেব জানান, জলবায়ূ ও পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে এখন অতিবৃষ্টি হয়। এখন কয়েকদিনে যে পরিমাণ বৃষ্টির পানি হয় আগে তেমন হত না। এ পরিবর্তনের জন্য আমরাই দায়ী। কারন আমরা পরিবেশ নষ্ট করেছি। এখও যদি এ বিষয়ে সচেতন না হয়ে গাছ কাটা এবং বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকে তাহলে আগামীতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশংকা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, যে কোন মূল্যে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানকে রক্ষা করতে হবে।
এবিষয়ে জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, আমরা ট্রেইলগুলো রক্ষার চেষ্ঠা করছি। কয়েক দফা কাজ করা হয়েছে।