র‌্যাঙ্কিংয়ের সবচেয়ে নীচের দল হিসেবে সেমিফাইনালে যেতে চায় রাশিয়া

270

ঢাকা, ৬ জুলাই ২০১৮ (বাসস) : এবারের টুর্নামেন্টে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের সবচেয়ে নীচু দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক রাশিয়া। ইউরো ২০১৬ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও না জেতার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ শুরু করে রাশিয়া। কিন্তু সব কিছুকে পিছনে ফেলে একের পর এক অঘটনের জন্ম দিয়েই এখন রাশিয়া শেষ আটে খেলছে। শনিবার সোচিতে শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে রাশিয়া। গত বছর কনফেডারেশন্স কাপের ব্যর্থতার পরে রাশিয়া জাতীয় দলের মান নিয়ে বিশ^জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। সৌদি আরবের বিপক্ষে বিশ^কাপের উদ্বোধনী ম্যাচের আগে সাত ম্যাচ জয়বিহীন ছিল রাশিয়া।
এজন্য অবশ্য দলের হেড কোচ স্তানিসলাভ চেরচেসভ, জনপ্রিয় মিডফিল্ডার আলেক্সান্দার গোলোভিন, আরটেম ডিজুবা ও দুর্দান্ত পারফর্ম করা গোলরক্ষক ইগর আকিনফিভ ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে পুরো দল এখন স্বাগতিক হিসেবে রাশিয়াকে আরো বড় কিছু উপহার দেবার জন্য মুখিয়ে আছে।
এদিকে শেষ আটে রাশিয়ার প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়াও ১৯৯৮ সালের পরে বিশ^কাপে সবচেয়ে বড় সাফল্যের অপেক্ষায় দিন গুনছে। মিডফিল্ডার ইভান পেরিসিচ বিশ^াস করেন সেই ক্ষমতা ক্রোয়েশিয়ার আছে। ১৯৯৮ সালে বিশ^কাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মত অংশ নিয়েই তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল ক্রোয়েটরা। ২০ বছর পরে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবার হাতছানি এখন মানজুকিচ, রাকিটিচ, মড্রিচদের সামনে। ফ্রান্স বিশ^কাপ ডাভোর সাকার, জোভিনিমির বোবান, রবার্ট প্রোসিনিস্কিদের নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া জার্মানদের পরাজিত করে অঘটনের জন্ম দিয়েছিল। তবে শেষ চারে ফ্রান্সের বিপক্ষে পরাজিত হয়ে পরে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে ধরাশায়ী করে।
এখন লুকা মোদ্রিচ, ইভান রাকিটিচদের নিয়ে গড়া নতুন প্রজন্ম ক্রোয়েশিয়াকে আবারো নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে শনিবার সোচিতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আগে তাই পুরো দল পুরোপুরি প্রস্তুত। পেরিসিচ বলেন, ‘আমরা সাফল্যের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। আশা করছি শেষটাও ভাল হবে। আমাদের নিজেদের ওপর আস্থা আছে। আমরা আমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানি।’
জার্মানীকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে ১৯৯৮ টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার দিন থেকে প্রায় ২০ বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ সম্পর্কে ফরোয়ার্ড আন্টে রেবিচ বলেছেন, ‘ফ্রান্স বিশ^কাপের ঐ ম্যাচটি দেখার সময় আমার বয়স মাত্র চার বছর ছিল। জার্মানদের বিপক্ষে স্মরণীয় ঐ জয়ে স্মৃতি এখনো আমার মনে আছে। পুরো পরিবারের পরিবেশটা দারুণ ছিল।’
এখন সেই সাফল্য পেতে হলে ক্রোয়েশিয়াকে স্বাগতিক রাশিয়র কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। শেষ ১৬’তে ২০১০ চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে পরাজিত করে রাশিয়া দারুল উজ্জীবিত অবস্থায় আছে। রাশিয়া অবশ্য ইউনি জিরকল ও এ্যালান জাগোয়েভের ফিটনেস নিয়ে সমস্যায় আছে। গোলরক্ষক আকিনফিভের দক্ষতায় স্পেনকে পেনাল্টি শ্যুট আউটে পরাজিত করে রাশিয়া শেষ আট নিশ্চিত করে।
রাশিয়ার ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার আলেস্কান্দার গোলোভিনকে নিয়ে চেলসি ও জুভেন্টাস আলোচনা শুরু করেছে। কালকের ম্যাচ সম্পর্কে গোলোভিন বলেছেন, ‘বিশে^র যেকোন দলের বিপক্ষে স্পেন বল নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা রাখে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে সমাধান খুঁজে পেয়েছিলাম। আশা করছি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আমরা আমাদের শক্তিশালী কৌশল কাজে লাগাতে পারবো। এর অর্থ এই নয় যে ক্রোয়েশিয়া স্পেনের থেকে দূর্বল। এর অর্থ হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার খেলার স্টাইলটা ভিন্ন। সুযোগ সৃষ্টির জন্য তাদের সবসময় বলের প্রয়োজন হয় না।’
চলতি বিশ্বকাপে আরটেম ডিজুবা রাশিয়া সাতটি গোলের চারটিতেই সম্পৃক্ত ছিলেন। এর মধ্যে নিজে করেছেন তিনটি গোল, বাকিটিতে এসিস্ট করেছেন। এদিকে ক্রোয়েশিয়ার সকল দৃষ্টি মড্রিচ ও রাকিটিচের ওপর থাকলেও মারিও মানজুকিচও নিজেকে একইভাবে প্রমান করে চলেছেন। বিশ্বকাপের তিনি ক্রোয়েশিয়ার জার্সি গায়ে তিনটি গোল করেছেন। একমাত্র সাকার বিশ্বকাপে ৬ গোল করে তার থেকে এগিয়ে আছে।
২০১০ বাদে আগের পাঁচটি বিশ্বকাপেই স্বাগতিক দেশ সেমিফাইনাল খেলেছে (১৯৯০-ইতালি, ১৯৯৮-ফ্রান্স, ২০০২-দক্ষিণ কোরিয়া, ২০০৬-জার্মানী ও ২০১৪-ব্রাজিল)। ইউরোপীয়ান কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়া আগের সাতটি বিশ^কাপের ম্যাচে মাত্র একটিতে পরাজিত হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া কখনই বিশ^কাপে কোন ইউরোপীয়ান দলকে পরাজিত করতে পারেনি। এর আগে ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপে দুইবার স্বাগতিক দেশের সাথে মোকাবেলায় দুইবারই পরাজিত হয়েছে (১৯৯৮ সালে সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ২-১ ও ২০১৪ সালে গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের কাছে ৩-১ গোলে)।