দেশী মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছে নড়াইলের মাহদী-মাহীর মৎস্য খামার

281

নড়াইল, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : দেশী প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদনে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছে জেলার কালিয়া উপজেলার পিরোলী মাহদী-মাহীর মৎস্য খামার।শুরুর চার বছরের মাথায় এ মৎস্য খামারে রেকর্ড পরিমাণ মাছের পোনা উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত পোনা জেলার বিভিন্ন এলাকা এবং আশপাশের জেলাগুলোতেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
মাহদী-মাহীর মৎস্য খামারের চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ সেখ জানান, ২০১৫ সালে ১ একর ৫৩ শতক জমিতে ঘের কেটে দেশী প্রজাতির রুই, কাতল, মৃগেল এবং কার্প জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন শুরু করা হয়।এখানে উৎপাদিত পোনার চাহিদা বাড়তে থাকায় ঘেরের পরিসরও বাড়ানো হয়। বর্তমানে ৩৩ একর জমিতে ১১টি ছোট বড় ঘের কেটে সেখানে মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে।এর মধ্যে ৮একর জমি নিজের বাকি ২৫ একর জমি লিজ নেয়া।মাছের পোনা উৎপাদনে সার্বক্ষণিক ১৪জন লোক নিয়োজিত আছেন।এদের দৈনিক মুজুরি ৫হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৫হাজার টাকা।২০১৬ সালে ঘেরের আশে-পাশের স্লুইচ গেট খুলে দেয়ায় ঘের তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে তিনি জানান।
চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ আরো জানান,সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি বিলুপ্ত প্রায় কই,শিং,মাগুর,টেংরা,পাবদা,শোলসহ অন্যান্য মাছের পোনা উৎপাদন এবং বড় মাছ চাষ করবেন।এসব মাছ চাষ করতে গেলে এক নাগাড়ে ৬মাস খাবার খাওয়ানোর পর মাছ বিক্রির উপযোগী হয়।মাছ চাষে ব্যাংক লোন হিসেবে সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে মাত্র ৭লাখ টাকা পেয়েছেন।প্রয়োজনের তুলনায় এ টাকা একেবারেই কম।কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার লোন সহযোগিতা পেলে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন মাছের পোনা এবং দেশি মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন বলে তিনি জানান।
মৎস্য খামারের ব্যবস্থাপক জামির হোসেন ও সর্বেশ্বর বিশ্বাস জানান,সারা বছর ধরেই এখানে মাছের পোনা উৎপাদন হয়ে থাকে।প্রতিমাসে কমপক্ষে ২১দিন মাছ ধরা ও বিক্রির কাজ চলে।এখানে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত থেকে দীপক,গৌতম,কুমারেশ,মনিশান্ত,তুফান,সুজল,গৌর,আলাল,নিখিল,আবুল বাশারসহ ১৪টি পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে।এখানকার পোনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ ছাড়াও গোপালগঞ্জ,খুলনা,যশোর ও বাগেরহাটের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
এ খামারে উৎপাদিত পোনা বিক্রিকারী পিরোলী গ্রামের উজ্জল শেখ জানান,তিনি এখান থেকে দেশি প্রজাতির মাছের পোনা কিনে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও ঘের মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন।এখানে উৎপাদিত ভালো মানের পোনার চাহিদা সর্বত্র রয়েছে।এ মৎস্য খামারে উৎপাদিত পোনা কিনে অন্যত্র বিক্রি করে প্রতিদিন তিনি কমপক্ষে ১হাজার টাকা আয় করে থাকেন। পোনা বিক্রি করে এখন তিনি স্বাবলম্বী বলে জানান।
মৎস্য খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল মামুন মোরশেদ জানান,১১টি ঘেরে া পোনা উৎপাদনের পাশাপাশি খাবার উপযোগী বড় আকারের মাছও চাষ হয়ে থাকে।আধাকেজি থেকে দু’কেজি পর্যন্ত ওজনের মাছ আলাদা করে তা বিক্রির জন্য বিভিন্ন হাটবাজারে পাঠানো হয়।এ ঘেরে খৈলসহ স্বাস্থ্যসম্মত বিভিন্ন খাবার দেয়া হয়।এ কারণে এখানে চাষ হওয়া মাছ খুব সুস্বাদু হয়।ক্রেতাদের কাছে এখানকার মাছের চাহিদাও ব্যাপক।তাদের ঘেরে মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা দেখে আশে পাশে অরো অনেক ঘের গড়ে উঠেছে বলে তিনি জানান।