গত অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রফতানি খাতে আয় বেড়েছে ৫.৮১ শতাংশ

403

ঢাকা, ৪ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : সদ্যবিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রফতানি থেকে আয় হয়েছে তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ মার্কিন ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার।তবে রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে আছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার। তবে বরাবরের মতো প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক খাতের আয় ধারাবাহিকভাবে ভালো হওয়ায় রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বাসসকে বলেন, বাংলাদেশের রফতানি খাত মূলত পোশাক নির্ভর। রফতানিতে পোশাক খাতের অবদান দিন দিন বাড়ছে। তবে রফতানি আয় আরো বাড়াতে প্রচলিত বাজার ছাড়াও নতুন বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগানো এবং পোশাকের পাশাপাশি পণ্য বহুমূখীকরণ বিশেষ করে বেশি মূল্য সংযোজন হয় এমন পণ্য রফতানির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী বাসসকে বলেন,রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে পোশাক খাত রফতানিতে ভাল করছে। তিনি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য রফতানি বাড়াতে বৈচিত্র্যপূর্ণ শিল্প পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা ও প্রনোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেন।
এদিকে ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় ও প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দুই-ই বেড়েছে। তিন হাজার ১৬ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৬১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে।
বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরি পোশাক পণ্যের রফতানি আয় ছিল দুই হাজার ৮১৪ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।
নিট পণ্যের (সোয়েটার, টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) রফতানি আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।এক হাজার ৫১০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি আয় দাঁড়িযেছে এক হাজার ৫১৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় শুন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি রফতানি আয় হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট পণ্যের রফতানি আয় ছিল এক হাজার ৩৭৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার।
আলোচ্য সময়ে ওভেন পণ্যেও (শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাক) রফতানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এক হাজার ৫০৬ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ওভেন পণ্য রফতানি হয়েছে এক হাজার ৫৪২ কোটি ৬২ লাখ ডলারের। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৩৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার।
সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্যের রফতানি আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।এই খাতে রফতানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ কোটি ৩৭ লাখ ডলার,যার প্রবৃদ্ধি ২১ দশমিক শুন্য ৭৯ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে উল্লেখ করার মত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই সময়ে এ খাত থেকে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রফতানি আয় এসেছে। বেডশীট,কিচেন টয়লেট লাইনস্সহ হোম টেক্সটাইল পন্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৮৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এ ছাড়া প্রাথমিক পণ্য, হিমায়িত মাছ, রাসায়নিক পণ্য সিমেন্ট, সল্ট, স্টোন, ইমারত তৈরির সরঞ্জাম ও সিরামিকের রফতানি আয় বেড়েছে। তবে চামড়া ও চামড়জাত পণ্যের রফতানি কমেছে। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়জাত পণ্যের রফতানি ছিল ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার,এবারে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।