রোহিঙ্গা গণহত্যার ওপর শুনানি শুরু করতে প্রস্তুত আইসিজে

536

ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : নেদারল্যান্ডের হেগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার ওপর শুনানি শুরুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়ার অভিযোগের পেক্ষিতে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সুচিকে এই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। যে সুচি মিয়ানমারে অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য এক সময় আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করেন এবং নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, তিনি তিন দিনের শুনানিতে তার দেশের অবস্থান তুলে ধরার জন্য রোববার নেদারল্যান্ড পৌঁছেন।
নেপিডোর পক্ষে নেতৃত্ব করবেন সুচি অপরদিকে একটি আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দেবেন গাম্বিয়ার এটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারিয়ে তাম্বাদো।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, একাধিক রোহিঙ্গা সার্ভাইভার গ্রুপের পাশাপাশি মিয়ানমারের সরকারি সমর্থকরা শুনানিকালে এই ডাচ সিটিতে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরিকল্পনা করেছে।
এদিকে একাধিক মানবাধিকার গ্রুপ শুনানির একদিন আগে সোমবার মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।
সামরিক বাহিনীর নির্মম হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে সাত লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। একে জাতিসংঘ জাতিগত নিধন হিসেবে বর্ণনা করেছে। অবশ্য নেপিডো এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার প্রেক্ষিতে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের কয়েক শ’ গ্রামে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে।
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়া গত ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এতে অবিলম্বে মিয়ানমারের গণহত্যা বন্ধে জরুরি হস্তক্ষেপের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া বলেছে, তারা ৫৭ সদস্যের ওআইসি’র পক্ষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজ (আইসিজে) এই মামলা দায়ের করেছে।
আইসিজে সূত্রে জানা গেছে, গাম্বিয়া আগামীকাল প্রথম দফায় মৌখিকভাবে বক্তব্য রাখবে। মিয়ানমারও প্রথম দফায় আগামী বুধবার মৌখিক বক্তব্য রাখবে।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল শুনানি পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এই প্রতিনিধিদলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বাসসকে বলেন, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল শুনানি পর্যবেক্ষণ করবে। তবে কোন বিবৃতি দেবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল মানবাধিকার গ্রুপ ও অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবে। কানাডা এবং নেদারল্যান্ডও শুনানিতে উপস্থিত থাকতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা আভাস দেন।
মিয়ানমারসহ ওআইসি সদস্য দেশ বাংলাদেশ এবং গাম্বিয়া ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। ওই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী সকল দেশের জন্য গণহত্যায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ। এর অন্যথা হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।
গাম্বিয়া অভিযোগ করেছে রক্তাক্ত সামরিক অভিযানের মাধ্যমে মিয়ানমার এই কনভেনশন লংঘন করেছে। মিয়ানমার এই অভিযানের মাধ্যমে সে দেশের রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে।
ওআইসি’র পক্ষে এই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে গাম্বিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘এটি শুভ সংবাদ যে, ওআইসি কিছুটা দায়-দায়িত্ব নিয়েছে।’ এই মামলা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ বৃদ্ধি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মিয়ানমার সংক্রান্ত জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান কমিটি তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশের এক মাস পর গাম্বিয়া এই মামলা দায়ের করে। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর মারাত্মক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে।
গত ১৪ নভেম্বর হেগ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ‘বাংলাদেশ/মিয়ানমার পরিস্থিতি’ তদন্তে সংস্থার প্রসিকিউটর অফিসকে কর্তৃত্ব প্রদান করে।
বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় দিয়েছে। এদের অধিকাংশই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট তাদের মাতৃভূমিতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর জোরপূর্বক বিতাড়িত।