বাসস দেশ-৪১ : জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলক পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট করবে ভারত

487

বাসস দেশ-৪১
বাংলাদেশ-ভারত-নৌ-সচিব
জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলক পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট করবে ভারত
ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তির আওতায় জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলক পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট (ট্রায়াল রান) করবে ভারত।
দুই দফায় ট্রায়াল রান সফল হলে নিয়মিত ট্রান্সশিপমেন্ট করবে দেশটি। ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের উপর চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর নিজ নিজ প্রচলিত ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ি চার্জ ও ফি আদায় করবে।
আজ বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ-সচিব পর্যায়ের দ’ুদিন ব্যাপি বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নৌ-পরিবহন সচিব মোঃ আবদুস সামাদ একথা বলেন। এসময় ভারতের নৌ-সচিব গোপাল কৃষ্ণ উপস্থিত ছিলেন।
দুইদিনব্যাপি এই বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত আন্ত:সরকার কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে দুই দেশের সচিব নিজ নিজ পক্ষে নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌসচিব বলেন, অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নৌ পরিবহন সচিব মোঃ আবদুস সামাদ বলেন,‘আনন্দের বিষয় হচ্ছে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে দুই দেশের নৌ যোগাযোগ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সড়ক ও রেলের পাশাপাশি নৌযোগাযোগ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নৌপথে চলাচল অনেক সাশ্রয়ী ও পরিবেশ সম্মত।’
তিনি বলেন, ‘নৌপ্রটোকল চুক্তির আওতায় রাজশাহী-পাকশি-ধূলিয়ান নৌপথ ব্যবহার করতে চাই। এই নৌপথে কারিগরি কমিটি সমীক্ষার ভিত্তিতে খনন করা হবে। বাংলাদেশী জাহাজের ক্রুদের বন্দরে নামার বিষয়ে আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে বিদ্যমান নিয়ম বহাল থাকবে। এছাড়া আমরা ক্রুদের নির্দিষ্ট পরিচয়পত্রে কিউআর বারকোড ব্যবহার করার প্রস্তাব করেছি। তারা (ভারত) এ প্রস্তাবটি তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এটা ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় বলে আমাদের জানিয়েছে।
বাংলাদেশের ক্রুদের ভারতীয় বন্দরে নামার অনুমতির বিষয়ে সচিব বলেন, বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ি চলবে। বর্তমানে জরুরি প্রয়োজনে দুই-তিনজন ক্রু নেমে প্রয়োজনীয় ঔষুধ ও নিত্যপণ্য কিনতে পারে। তবে যেহেতু নিরাপত্তার বিষয় আছে, তাই আমরা পরিচয়পত্রে কিউআর কোড ব্যবহারের প্রস্তাব করেছি। বিষয়টি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
বাংলাদেশের নৌ-সচিব বলেন, জাহাজের নাবিকদের সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সি (সিওসি) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশ এটা দেখবে। বাংলাদেশের জাহাজ যখন কলকাতা বা অন্য কোনো বন্দরে যায়, সেসব জাহাজের ক্রুদের বিনোদনের জন্য একটি ড্রপ ইন সেন্টারের সুবিধা তৈরি করার অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে আশা কার ভারত ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তির ৬(১) ধারায় নাকুগাঁ ও ডামু স্থলবন্দরকে অন্তভর্’ক্ত করা হয়েছে। এতে ভারতের আসাম ও ভুটান থেকে এ রুটে পণ্য আসতে পারবে।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য আনা-নেয়ার উপর আন্ত:সরকার কমিটির বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশের নৌ-সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত গ্যাটের স্বাক্ষরকারী হিসেবে ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের উপর কাস্টমস প্রযোজ্য নয়। তবে অপারেশনাল ও সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য। মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে বিদ্যমান স্ব স্ব ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ি চার্জ আদায় করা হবে। তবে সকল চার্জই র‌্যাশনাল ও লজিকাল ওয়েতে (যৌক্তিক ও বাস্তবভিত্তিক) হবে। এ চুক্তির আওতায় ই-লক ব্যবহার হবে। অর্থাৎ ভারত থেকে কোনো পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর কাস্টমস সেটিকে ই-লক করবে। ওই পণ্য আখাউড়া দিয়ে গেলে সেই বন্দরে সেই লক কাস্টমস খুলে দিবে। এছাড়া এসব পণ্য আখাউড়া বা অন্য বন্দরে যেখানে যাক না কেন বাংলাদেশের ট্রাক-টেইলর বা নৌযান ব্যবহার করবে।
পর্যটকদের অন অ্যারাইভাল ভিসার বিষয়ে সচিব বলেন, দুই দেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অন অ্যারাইভাল ভিসা দরকার। আমরা প্রস্তাব করেছি। ভারতের নৌসচিব সম্মত হয়েছে। তবে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আমরা জানাবো যাতে পর্যটকদের এ ভিসা দিতে পারি।
ভারতের সচিব গোপাল কৃষ্ণ বলেন, দুই দেশের মধ্যে আলোচনা খুবই আন্তরিক ও ফলপ্রসু হয়েছে। বিগত চার বছরে তিনটি চুক্তি হয়েছে। আমরা নৌযোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুবই দ্রুত এগিয়েছি। নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃত্বের পর্যায়ে রয়েছে।
বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা দুই দেশই যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আলোচনায় আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আমরা আরও আলোচনা করবো। চার্জ নিয়ম অনুযায়ি হবে। আমরা দুটি ট্রায়াল রান করবো। প্রথমটি জানুয়ারিতে হবে। এরপর দ্বিতীয় ট্রায়াল রান। এপরই দ্রুততার সঙ্গে চালু করতে চাই। এর সুবিধা জনগণ পাবে। সেজন্য দুই দেশই একসঙ্গে কাজ করবে।
বাসস/এএসজি/এমএন/২০২৫/-আসাচৌ