ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩১ হাজার ৩২৮ কোটি টাকার পরিবেশ বান্ধব অর্থায়ন

154

ঢাকা, ২ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবছরের (২০১৮) ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩১ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা পরিবেশ বান্ধব অর্থায়ন করেছে। প্রত্যক্ষ পরিবেশ বান্ধব অর্থায়নের পরিমাণ ২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮-এর পানি ও পরিবেশ বিষয়ের প্রতিবেদনে এতথ্য তুলে ধরে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৫ মাস এ ৪টি নদীর পানিতে অক্সিজেন চূড়ান্ত মাত্রায় কমে যায়। ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর পানির দুষণীয় মাত্রা সীমার বাইরে চলে গেছে।
ইট ভাটার চুল্লির দক্ষতা উন্নয়নে কার্বন নির্গমণ হ্রাসে জ্বালানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংক ৬টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৯টি প্রকল্পে ১৩৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা প্রদান করেছে।
চলতি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি ৩১দশমিক ৩২৮ কোটি টাকা পরিবেশ বান্ধব অর্থায়নের মধ্যে প্রত্যক্ষ পরিবেশ বান্ধব অর্থায়নের পরিমাণ হচ্ছে মাত্র ২দশমিক ১৭২ কোটি টাকা।
সরকার পরিবেশ বান্ধ্ব শিল্প প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশের নদ-নদীর পানির দূষণ বন্ধ করা। কারণ বর্জ্য ও শিল্প বর্জ্যে সরাসরি নদ-নদীর পানিতে এবং পানির উৎসে গিয়ে মিশে নদীর পানি দুষণ হয় এবং পানির গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। তাই পরিবেশ বান্ধব শিল্প স্থাপনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে পরিবেক্ষণ স্থিতিমাপকগুলো তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলা হয়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত পদ্মা, মেঘনা, যুমনা, করোতোয়া, ধলেশ্বরী, সুরমা, নদীর পানির গুণগত মান সীমার মধ্যে ছিল। কিন্তু ঢাকার চারপাশের নদীর পানির দূষণ মাত্রা সীমার বাইরে চলে গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৭৩ সাল থেকে নদীর পানির মান পরিবেক্ষণ করছে। দেশের ৬৩টি স্থানে ২৭টি নদীর পানি পরিবীক্ষণ করা হয়।
২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীতে বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড ছিল ৫০ দশমিক ২০ মিলিগ্রাম। কিন্তু ছিল মাত্র ৬ মিলি গ্রামের নিচে। এমনি করে ময়ূরী, রূপসা, পশুর, খেকশিয়ালী নদীতে অক্সিজেনের পরিমাণও সীমার বাইরে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকার ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬৩৪টি কারখানায় তরল বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা ইনফ্লোয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট(ইটিপি) স্থাপন করেছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৮৮টি কারখানায় পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ আরোপপূর্বক ৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আদায় করেছে। দেশের সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হলেও অধিকাংশ শিল্প কারখানায় ইটিপি চালু না হয় শিল্প বর্জ্যে নদ-নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাক কারখানার ওয়াশিং প্ল্যান্টগুলি নদীর পানি সব চেয়ে বেশি দূষণ করছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের একজন শিল্প মালিক জানান, জেলায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ছোট বড় ওয়াশিং প্ল্যাট তুরাগ নদীসহ আশপাশের খাল বিলের পানি দূষণ করছে। এখানে পরিবেশ অধিদপ্তর তেমন কোন কার্যকর ভূমিকা পালন না করায় নদী ও খালের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.ফিরোজ আহমেদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বর্জ্য ও শিল্প বর্জ্যরে কারণে ৯০ ভাগ পানি দূষণ হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পানি দূষণের বিষয়টি সম্পর্কিত, শিল্প কারখানা, জনবসতি যেখানে বেশি সেখানকার পানি বেশি মাত্রায় দূষিত।
এসডিজির লক্ষ্য ৬ বাস্তবায়ন করতে হলে অবিলম্বে পানিতে বর্জ্য দূষণ বন্ধ করতে হবে। বর্জ্য পানি শোধনের হার দক্ষিণ এশিয়ায় ১০ শতাংশ। এই হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করলে পানি দূষণ সহনীয় মাত্রায় ফিরে আসবে।
বাসস/ নিজস্ব/ এমএআর/১৮১০/কেএমকে