বাসস দেশ-৭ : মাংসে দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ : গত এক দশকে উৎপাদন বেড়েছে ৭ গুণ

165

বাসস দেশ-৭
গবাদিপশু- উৎপাদন বৃদ্ধি
মাংসে দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ : গত এক দশকে উৎপাদন বেড়েছে ৭ গুণ
ঢাকা, ২ জুলাই ২০১৮ (বাসস): গত ৯ বছরে দেশে মাংসের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৭ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, গত তিনবছরে মাংসের চাহিদা পূরনের জন্য বিদেশ থেকে কোন গবাদি পশু আমদানি করতে হয়নি।
অন্য দিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মাংসের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় ৬০ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন বেশি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মাংস উৎপাদনের পরিমান ছিল ১০ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন
মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ন হওয়ার পাশাপাশি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৯ হাজার মেট্রিক টন মাংস উদ্ধৃত ছিল। এসময় দেশে দৈনিক মাথাপিছু মাংস প্রাপ্তির পরিমান দাঁড়িয়েছে ১২১ দশমিক ৭৪ গ্রাম।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক আজ সোমবার তার কার্যালয়ে আলাপকালে বাসস’কে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক সহযোগিতায় এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। একই সময়ে দুধ ও ডিম উৎপাদনেও সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান এই খাতে প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের মোট কর্মসংস্থানে ২০ শতাংশ সরাসরি এবং ৫০ শতাংশ আংশিকভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের উপর নির্ভরশীল।’ একই সঙ্গে বিগত প্রায় একদশকে সরকারি উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ খাতে প্রযুক্তির সম্প্রসারন হয়েছে। এক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে ব্যাপক সাফল্য। উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
আর এ কারণেই ‘দেশব্যাপী কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারনের ফলে ইতোমধ্যে প্রজননক্ষম গাভী-বকনার প্রায় ৪৫ ভাগ গবাদিপশুকে কৃত্রিম প্রজননের আওতায় আনা এবং মোট গবাদিপশুর ৫০ভাগকে সংকর জাতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে।’ কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদিত গবাদিপশুর গুনগতমান বৃদ্ধির ফলে উন্নত ব্যবস্থাপনায় সংকর জাতের গাভীর দুধ উৎপাদন দৈনিক গড়ে ১০ থেকে ১৫ লিটার পর্যন্ত হচ্ছে এবং ফ্রিজিয়ান সংকর একক গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ দিনে ৪০লিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে। পাশাপাশি সংকর ষাঁড় গরুর ওজন গড়ে ৪০০ কেজি থেকে ৫০০ কেজি পর্যন্ত হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘গত তিনবছর যাবৎ পবিত্র ঈদুল আযহায় দেশির চাহিদা পূরনের জন্য বিদেশ থেকে কোন কুরবানির পশু আমদানি করতে হয়নি।সরকারের বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগি নীতির কারনে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’
প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদার আলোকে প্রানিজ আমিষের ঘাটতি ও কোরবানির পশুর চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর দেশের ৪৮টি জেলার ১২৫টি উপজেলায় আবহাওয়া উপযোগি সংকর জাতের বীফ ব্রীড উৎপাদনের লক্ষ্যে শতভাগ ব্রাহমা জাতের হিমায়িত সিমেন আমদানি করে মাংসল জাতের গরু উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এই কার্যক্রমের আওতায় ঢাকার সাভারে একটি কৃত্রিম প্রজনন ল্যাব ও বুল স্টেশন এবং রাজশাহীর রাজবাড়িহাটে একটি আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন ল্যাব ও বুল স্টেশন রয়েছে। গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনননে জন্য দেশে মোট ২২টি জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে। আর মাঠ পর্যায়ে গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন বাস্তবায়নের জন্য বর্তমানে দেশে ৪৬১টি উপকেন্দ্র এবং ৩ হাজার ৪৮৪টি পয়েন্ট চালু রয়েছে।
এই খাতে গত অর্থবছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণেও সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সাফল্যের প্রমাণ মেলে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে গরুর সংখ্যা ছিল দুইকোটি ৩৯ লাখ ৩৫ হাজার, মহিষের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৭৮ হাজার, ছাগলের সংখ্যা ছিল দুইকোটি ৫৯ লাখ ৩১ লাখ এবং ভেড়ার সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ একহাজারটি। একই সময়ে দেশে মাংস ও দুধ উৎপাদনের পরিমান ছিল যথাক্রমে ৭১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন এবং ৯২ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন।
বাসস/এসপিএল/এমকে/১৭৩০/কেএমকে