বাসস প্রধানমন্ত্রী-৪ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

256

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৪ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা- সেনাকুঞ্জ-সংবর্ধনা
দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নির্দেশে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে তাঁর সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
প্রত্যেকটি বাহিনীকে যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ তাঁর সরকার নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে কাজেই আধুনিকায়নের দিকে আমাদের যেতে হবে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্যই সেক্ষেত্রে আমাদের সরকার সবসময় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে,আমরা তাই নিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সিলেট, রামু এবং পটুয়াখালীতে তিনটি পূর্ণাঙ্গ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে।
জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে সমুদ্রসীমা আইন করলেও ১৯৭৪ সালেই জাতির পিতা বাংলাদেশে এই আইন করে যান বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আদালতের জয়লাভের মাধ্যমে আমরা ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে দু’দফায় এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি সমুদ্রসীমায় অধিকার লাভ করেছি। ’
সমুদ্রসীমা নিরাপদ রাখার পাশাপাশি ‘ব্লু ইকোনমি’র সর্বোচ্চ উপযোগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রসংগ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘বর্তমান সরকার দেশীয় শিপইয়ার্ডে যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পেট্রোলক্রাফট নির্মাণ করেছে।’
তিনি বলেন,আমাদের বিমানবাহিনীকে আমরা আধুনিক বিমানবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলায় বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কিনে দিচ্ছি এবং প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সশ¯্রবাহিনীর কল্যাণে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সরকার ইতোমধ্যে সশ¯্রবাহিনীর জন্য মেডিকেল কলেজ,ডেন্টাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল ও ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাঁদের আবাসন সমস্যার সমাধান করেছে।
’৯৬ সালে সরকারে থাকার সময় ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ স্থাপন(এনডিসি), ওয়ার কলেজ স্থাপন, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এ্যান্ড এ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে, বলেন তিনি।
আমাদের মিলিটারি একডেমী সারাবিশ্বে এখন প্রশংসিত এবং এখানে প্রশিক্ষণের জন্য সমগ্র বিশ্বের শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে উন্নত করার পাশাপাশি সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়নের দিকেও আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।’
এ সময় বাজেট বৃদ্ধি সহ সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই এবং নিজের দেশকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে ত’লতে চাই।’
দেশ পরিচালনায় জাতির পিতার দূরদর্শী নীতি কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি নিয়ে একটি আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্যই ছিল একটি দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা।’
বঙ্গবন্ধুর সময়ে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নতির জন্য মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ বিভিন্ন সামরিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং ১৯৭৩ সালেই বিমানবাহিনীতে অত্যাধুনিক সুপার সনিক মিগ অন্তর্ভুক্তির উল্লেখ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,‘ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি অত্যাধুনিক নৌবাহিনী গঠন করার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৩টি ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরআগে ১৯৬৬ সালে দেওয়া ছয় দফায় তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে নৌবাহিনীর সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছরে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয় বুঁনিয়াদ তৈরি করে দেন জাতির পিতা।’
প্রধানমন্ত্রী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ১১ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের নাগরিকদের সহায়তা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত নারী সদস্য সহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার ভ’য়শী প্রশংসা করেন।
জাতিসংঘ মিশনে বিশ্বশান্তি প্রচেষ্টার উদ্যোগকালে শাহাদৎবরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামণা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি ।
সশ¯্র বাহিনীর সঙ্গে তাঁর ‘সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধনের’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ভাই শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় ভাই শহিদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ১৯৭৫ সালে রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন লাভ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। আর ছোট ভাই রাসেলের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে সে।’
প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এবং জনগণের সহযোগিতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তোলায় সহযোগিতার মনভাব নিয়ে পাশে দাঁড়ানো দেশগুলোর প্রতি ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বিশ্ব শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী সৈনিকদের প্রেরণ করার মাধ্যমে তাঁর সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে আমরা যে স্বীকৃতি পেয়েছি তাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এজন্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
তিনি বলেন,‘২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। আর সে সময়কে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যখন বাংলাদেশে আর দরিদ্র থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিকল্পনা প্রণয়নে তাঁর সরকারের বর্তমান উদ্যোগ তুলে ধরে নেদারল্যান্ডের সহযোগিতায় শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়নের ও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তার সরকার ২০০৫-০৬ সালের ৪১ শতাংশ দারিদ্র থেকে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এটিকে অন্তত ১৫ থেকে ১৭ ভাগের মধ্যে নামাতে পারলে দেশে আর দরিদ্র থাকবে না। আর সেটা বাস্তবায়নেই তাঁর সরকার সকল কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।
বাসস/এএসজি-এফএন/২০৫৫/কেএমকে