ফেনীতে একটি ইনডোর ক্রিকেট একাডেমী চান সাইফুদ্দিন

2265

ফেনী, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাফুদ্দিন। ইতোমধ্যেই নজরকাড়া পারফরমেন্সে দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন ফেনী শহরতলীর ছেলে সাইফুদ্দিন। তবে পড়াশুনা, বড় হওয়া সব কিছুই ফেনী শহরে। সুযোগ পেলেই চলে আসেন নিজ শহরে। আর তাকে ঘিরে যেন জমে যায় উৎসুক মানুষের ভীড়। স্কুল ছাত্ররা ঘিরে রাখে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তরুণ অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিনকে। যেমনটা দেখা গেল বর্তমানে নিজ বাড়িতে বিশ্রামে থাকা সাইফুদ্দিনকে। বিশ্রামে থাকলেও ফেনী পাইলট স্কুলের মাঠের পশ্চিম প্রান্তে পাশাপাশি ইট সিমেন্টের দুইটি ক্রিকেট পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। নির্দেশনায় ব্যস্ত সাইফুদ্দিন। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত অব্দি পিচের পাশে দাঁড়িয়ে বসে পাহারা দেন, যেন অযাচিতভাবে পিচ নষ্ট না হয়।
মাত্র ১০ বছর বয়সে ফেনীর ফ্রেন্ডশীপ ক্রিকেট ক্লাবের মাধ্যমে ক্রিকেটে হাতে খড়ি হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত অনুশীলন ও অধ্যাবসয় দিয়ে আজ জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড় সাইফুদ্দিন। মুলত ফেনীর ক্রিকেটই এখন আবর্তিত হচ্ছে তাকে ঘিরে।
পুরনো ইনজুরির কারণে ভারত সফরে যেতে পারেননি। ফিজিওর পরামর্শমতে চলছে পূর্ণ বিশ্রাম। সাইফুদ্দিন এখন নিজ শহর ফেনীতে।
ফেনী পাইলট হাইস্কুল মাঠ এ জনপদের প্রাচীন স্থান। এ মাঠেই কেটেছে সাইফুদ্দিনের শৈশব, কৈশোর। ফেনী এলে বিকাল ও সন্ধ্যা নিয়মিত মাঠে কাটান। নিজ ক্লাব, ফ্রেন্ডশীপ ক্রিকেট ক্লাবের ক্রিকেট ইন্সটিটিউটে ক্ষুদে ক্রিকেটারদের টিপস দেন। মাঠে স্কুলের ছেলেরাও খেলে। তারা জড়ো হয় সাইফুদ্দিনকে ঘিরে। মাঠে খেলতে আসা সব খেলোয়াড়কে পরামর্শ দেন তিনি।
কথা প্রসঙ্গে সাইফুদ্দিন বলেন, মাঠে আসি ভালোবাসার টানে। আমি যখন ফেনী আসি তখন চেষ্টা করি কিছু করার জন্য। আমি যেহেতু এই মাঠ থেকে উঠেছি। এই মাঠের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। তাই চেষ্টা করি কিছু করার। যেহেতু আমি এখন অনুশীলন করতে পারছিনা, ইনজুরিতে আছি। তাই ফেনীতে এসে ক্রিকেটের কিছু সাধারন জ্ঞান একাডেমীর তরুণ প্লেয়াদের দেয়ার চেষ্টা করি। কামনা করি, আমার উত্তরসূরী কেউ উঠে আসুক এই মাঠ থেকে।
ফেনীর ক্রিকেটাঙ্গন নিয়ে চিন্তা করনে গেলো বিশ্বকাপে দ্যুতি ছড়ানো এ অলরাউন্ডার। তিনি বলেন, আমার ফোন নম্বর সবার কাছে রয়েছে। ফোনে কিংবা ম্যাসেঞ্জারেও আমি ক্রিকেটারদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, আমি সবসময় চাই ফেনীর ক্রিকেটারদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক ধরে রাখতে।
ফেনী এলে অনুশীলন নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরলেন সাইফুদ্দিন। তিনি বলেন, ভালো পিচ নেই ফলে বোলিং অনুশীলন করা খুব কষ্টকর। ক্লাব দুইটি পিচ করেছে আমার প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখে।
বর্ষা মৌসুমে ফেনী পাইলট হাইস্কুল মাঠ পানিতে ভেসে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় জলাবদ্ধতা স্বাভাবিক চিত্র। ফেনী ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়াম ক্রিকেটের জন্য উপযোগী নয়। আকারে ছোট এবং জেলার একমাত্র স্টেডিয়াম হওয়ায়, এখানে ফুটবল ক্রিকেট সবই একসাথে চলে। বছরজুড়ে ক্রিকেট অনুশীলনের সুযোগ নেই।
সাইফুদ্দিনের স্বপ্ন ফেনীতে একটি ইনডোর ক্রিকেট একাডেমী। যেখানে সারা বছর ফেনীর সব বয়সী ক্রিকেটাররা অনুশীলন করতে পারবে। তিনি বলেন, গত ১০ বছর ধরে শুনছি ফেনীতে একটি ভালো মানের স্টেডিয়াম হবে। বর্তমান যে স্টেডিয়াম আছে তা ক্রিকেট খেলার উপযুক্ত না। এখানে অনেক ফুটবলার খেলতে আসে। তাই ফেনীর ক্রিকেটের জন্য ইনডোর ক্রিকেট একাডেমী বা ভালো মানের স্টেডিয়াম বানানোর জন্য আমার পর্যায় থেকে আমি বলে যাচ্ছি। ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর কাছে আমি ইনডোর ক্রিকেট একাডেমীর কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, তিনি চেষ্টা করবেন।
সাংসদকে অনুরোধ করেছি, যদি জিমনেশিয়ামে আপাতত ক্রিকেট প্র্যাকটিস করার ব্যবস্থা করা যায় তবে সারা বছর আপাতত অনুশীলন করা যাবে। এমপি আশ্বাস দিয়েছেন তিনি ব্যাপারটি ভেবে দেখবেন।
ইনজুরি নিয়ে সাইফুদ্দিন জানান, গত দুই বছর ধরে এ সমস্যায় ভূগছি। বিশ্বকাপ খেলেছি ব্যথানাশক ওষুধ নিয়ে। গত কয়েকটিা সিটি স্ক্যানে ছোট চিড় ধরা পড়েছে। বোন-৪ এ ব্যাথা শো করছে এবং ৫-এও চিড় ধরা পড়েছে। যে কারনে ফিজিও আমাকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিয়েছেন। যে কারণে আমার লম্বা সময় ক্রিকেটের বাইরে থাকা।
ফ্রেন্ডশীপ ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম অপু জানান, ক্লাব সাইফুদ্দিনের প্রয়োজন বিবেচনায় যতটুকু সম্ভব তার জন্য অনুশীলনের পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ইনডোর ক্রিকেট একাডেমী তৈরী করা হলে ফেনী হতে জাতীয় দলে আরও সাইফুদ্দিন উপহার দেয়া যাবে।