অবৈধ অর্থের প্রবাহই উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় : দুদক চেয়ারম্যান

293

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থপাচার এবং অবৈধ অর্থের প্রবাহই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।
তিনি বলেন, দুর্নীতি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
দুদক চেয়ারম্যান আজ রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে “ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফিন্যান্সিং অব টেরিরিজম-২০১৯-২০২১” শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যার বলেন, ২০১৬ সাল থেকে কমিশন ১৬৫টি ব্যাংক হিসাবে ২০ কোটি ১৮ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। একই সময়ে ২১টি ভবন বা বাড়ি, ২৪টি ফ্ল্যাট, ৭৭ একর জমি, ৫টি বিলাসবহুল গাড়িও ক্রোক করা হয়েছে। এছাড়াও দুদকের মানিলন্ডারিং মামলায় ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আদালতের আদেশে বাজেয়াপ্তকৃত ৫৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ পুনরুদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এছাড়া মিউচুয়াল লিগ্যাল রিকয়েস্ট অ্যাসিসটেন্সের মাধ্যমে দুটি মানি লন্ডারিং মামলায় ১৬ মিলিয়ন হংকং ডলার এবং শূন্য দশমিক ৮০ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড যথাক্রমে হংকং ও বৃটেনে জব্দ করা হয়েছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এর আগেও ২ দশমিক ৬মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার এবং শূন্য দশমিক ৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুনরুদ্ধার করে দেশে আনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং মডারেটর ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির প্রমুখ।
এ সময় প্রধান অতিথি বলেন দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মানিলন্ডারিং জাতির এক নম্বর শত্রু। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সোনালী ভবিষ্যতের জন্য এসব প্রতিরোধ করতে হবে।
অপরদিকে আজ একই হোটেলে বিশ^ব্যাংক আয়োজিত “সাউথ এশিয়া একাউন্ট্যাবিলিটি রাউন্ড টেবল : প্রোমটিং একাউন্ট্যাবিলিটি এ্যন্ড ইন্টিগ্রিটি ইন গভার্নমেন্ট স্পেন্ডিং” শীর্ষক সেমিনরে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সিএজি রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয় যাতে না ঘটে সে বিষয়ে কাজ করে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সু-সমন্বয়ের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তা পাবলিক ফান্ড আত্মসাৎ করেছেন বা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন এমন কোনো ঘটনা যদি অডিটর কর্তৃক উদঘাটিত হয়, এই তথ্য বিশ^স্ততার সঙ্গে কমিশনে পাঠানো হলে- কমিশন আইনি প্রক্রিয়ায় তা অনুসন্ধান করে ঘটনা ঘটার আগেই প্রতিরোধ করে পাবলিক ফান্ড আত্মসাৎ থেকে রক্ষা করতে পারে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, সিএজি কর্মকর্তারা পোস্ট অডিটের মাধ্যমে যেসব দুর্নীতির ঘটনা উদঘাটিত করেন এবং সেই রিপোর্টটি কমিশনে পাঠালে কমিশন তা তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেও দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে। প্রয়োজনে দুর্নীতিপ্রবণ সরকারি দপ্তরসমূহে দুদক এবং সিএজি যৌথ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে একসঙ্গে প্রি এবং পোস্ট অডিটের মাধ্যমে সম্ভাব্য দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক ও সিএজি দপ্তর যৌথভাবে সরকারি ক্রয় এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ করে মেগা প্রকল্পের ঝুঁকি নিরুপণ করতে পারে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী প্রমুখ।