আগারওয়ালের ডাবল-সেঞ্চুরিতে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ

208

ইন্দোর, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ডাবল-সেঞ্চুরিতে ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ব্যাকফুটে চলে গেছে সফরকারী বাংলাদেশ। আগাওয়ালের ২৪৩ রানের সুবাদে দ্বিতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান করেছে ভারত। ফলে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৪৩ রানে এগিয়ে টিম ইন্ডিয়া। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১৫০ রানে অলআউট হয়েছিলো।
ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে প্রথম দিনই বাংলাদেশকে অলআউট করে দেয় ভারত। এরপর নিজেদের ইনিংস শুরু করে দিন শেষে ১ উইকেটে ৮৬ রান করেছিলো টিম ইন্ডিয়া। ওপেনার রোহিত শর্মা ৬ রানে ফিরলেও আরেক ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল ৩৭ ও চেতেশ্বর পূজারা ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন।
দ্বিতীয় দিনের দশম ও এগারতম বলে বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদের বলে পরপর দু’টি বাউন্ডারি মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পূজারা। হাফ-সেঞ্চুরির পর পূজারাকে থামিয়ে দেন জায়েদ। অফ-স্টাম্প দিয়ে বের হয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুইয়ে চতুর্থ স্লিপে দ্বাদশ খেলোয়াড় সাইফ হাসানকে ক্যাচ দেন পূজারা। ৯টি চারে ৭২ বলে ৫৪ রান করেন পূজারা। আগারওয়ালের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৯১ রান যোগ করেছিলেন পূজারা।
এরপর ক্রিজে আসেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। পূজারাকে ফেরানোর পরের ওভারে কোহলির বিপক্ষে বল করার সুযোগ পান জায়েদ। নিজের প্রথম ডেলিভারিতেই কোহলিকে পরাস্ত করেন জায়েদ। ভারত অধিনায়কের বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করে বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি অন-ফিল্ড আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিতে ভুল করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক। ভারতের সেরা ব্যাটসম্যানকে ফেরাতে ঝুঁকি নেন তিনি। পরে সেই রিভিউতেই আউট হতে হয় কোহলিকে। ২ বল খেলে শুন্য হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন কোহলি।
১১৯ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলির বিদায়ে কিছুটা চাপ অনুভব করে ভারত। কিন্তু ভারতকে সেই চাপ থেকে মুক্ত করেন আগারওয়াল ও আজিঙ্কা রাহানে। বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিয়ে রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন তারা। প্রথম সেশনে আর কোন উইকেট পড়তে দেননি আগারওয়াল-রাহানে। ফলে ঐ সেশনেই লিড নিয়ে ৩ উইকেটে ১৮৮ রান তুলে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় ভারত। সেঞ্চুরির পথ তৈরি করে বিরতিতে যাওয়া আগারওয়াল ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন।
বিরতি থেকে ফিরে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ নেন আগারওয়াল। নিজের অষ্টম টেস্টে তৃতীয়বারের মত তিন অংকে পা দিলেন তিনি। ১৮৩ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ভারতের এই ডান-হাতি ওপেনার।
অপরদিকে, ব্যট হাতে বেশ স্বাচ্ছেন্দ্যে ছিলেন রাহানেও। তাই তরতর করে বাড়ছিলো ভারতের স্কোর। এতে দ্বিতীয় সেশনেও কোন উইকেট হারায়নি ভারত। তাই ৩ উইকেটে ৩০৩ রান তুলে চা-বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।
জমে যাওয়া আগারওয়াল-রাহানে জুটি ভাঙ্গতে সর্বাত্মক চেষ্টাই করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল। কিন্তু প্রায় ৫৪ ওভারে এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরাতে পারেনি বাংলাদেশের কোন বোলার। অবশেষে আবারো বাংলাদেশের ত্রানকর্তা হন জায়েদ। সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা রাহানেকে নিজের চতুর্থ শিকার বানান জায়েদ। ডিপ পয়েন্টে তাইজুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে ৮৬ রানে আউট হওয়া রাহানে ১৭২ বলের ইনিংসে ৯টি চার মারেন। আগারওয়ালের সাথে ১৯০ রানের বড় জুটি দলকে উপহার দেন রাহানে।
রাহানে ফিরে যাবার পর আগারওয়ালকে দারুন সঙ্গ দেন রবীন্দ্র জাদেজা। যথার্থ সঙ্গ পেয়ে মারমুখী হয়ে উঠেন আগারওয়াল। ওয়ানডে স্টাইলে খেলতে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল-সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকেন আগারওয়াল। শেষ পর্যন্ত ৯৯তম ওভারে বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে ছক্কা মেরে ডাবল-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আগারওয়াল। গত মাসে নিজ মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের ডাবল-সেঞ্চুরি করেন তিনি। যা ছিল ছিলো তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির ইনিংসও।
৩০৩ বলে ডাবল-সেঞ্চুরিতে পা দিয়ে নিজের ইনিংস বড় করতে থাকেন আগারওয়াল। প্রথমবারের মত আড়াইশ রানের দিকে ছুটছিলেন তিনি। কিন্তু তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান মিরাজ। যার বলে ছক্কা মেরে ডাবল-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন আগারওয়াল। সুইপ করে মিড উইকেটে বাংলাদেশের সফল বোলার জায়েদকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন আগারওয়াল। ২৮টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৩৩০ বলে ২৪৩ রান করেন আগারওয়াল। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটিই তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। জাদেজার সাথেও পঞ্চম উইকেটে শতরানের জুটি গড়েন আগারওয়াল, ১২৩ রানের জুটি।
দলীয় ৪৫৪ রানে আগারওয়াল ফিরে যাবার পর দিনের বাকী সময়ে ভারতের হাল ধরেন জাদেজা ও উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা। কিন্তু দিনের খেলা শেষ হবার ১৯ বল আগে সাহাকে বিদায় দেন বাংলাদেশের আরেক পেসার এবাদত হোসেন। ১১ বলে ১২ রান করা সাহাকে বোল্ড করেন এবাদত।
এরপর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ক্রিজে যান উমেশ যাদব। ব্যাট হাতে স্ট্রাইকে গিয়ে ভয়ংকর রুপ দেখান বোলার উমেশ। বাংলাদেশের দুই পেসার জায়েদ ও এবাদতকে তিনটি ছক্কা মারেন উমেশ। এছাড়াও ১টি চার ছিলো তার উইলোতে। জায়েদকে ১টি করে চার-ছক্কা ও এবাদতকে ২টি ছক্কা মারেন উমেশ। শেষ পর্যন্ত জাদেজা-উমেশ অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করেন। জাদেজা ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৬০ রানে ও উমেশ ১০ বলে ২৫ রানে অপরাজিত আছেন। জাদেজা ৭৬ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ২টি ছক্কা হাকান। বাংলাদেশের জায়েদ ১০৮ রানে ৪, এবাদত-মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড (টস- বাংলাদেশ) :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৫০/১০, ৫৮.৩ ওভার (মুশফিক ৪৩, মোমিনুল ৩৭, লিটন ২১, মিঠুন ১৩, মাহমুদুল্লাহ ১০, আবু জায়েদ ৭, সাদমান ৬, ইমরুল ৬, এবাদত ২, তাইজুল ১, মিরাজ ০, সামি ৩/২৭, ইশান্ত ২/২০, অশ্বিন ২/৪৩, উমেশ ২/৪৭)।
ভারত প্রথম ইনিংস : আগের দিন ৮৬/১ (আগারওয়াল ৩৭*, পূজারা ৪৩*)
মায়াঙ্ক আগারওয়াল ক আবু জায়েদ ব মিরাজ ২৪৩
রোহিত শর্মা ক লিটন ব আবু জায়েদ ৬
চেতেশ্বর পূজারা ক অতি (সাইফ) ব আবু জাায়েদ ৫৪
বিরাট কোহলি এলবিডব্লু ব আবু জায়েদ ০
আজিঙ্কা রাহানে ক তাইজুল ব আবু জায়েদ ৮৬
রবীন্দ্র জাদেজা অপরাজিত ৬০
ঋদ্ধিমান সাহা বোল্ড ব এবাদত ১২
উমেশ যাদব অপরাজিত ২৫
অতিরিক্ত (লে বা-১, নো-৩, ও-৩) ৭
মোট ৬ উইকেট, ১১৪ ওভার) ৪৯৩
উইকেট পতন : ১/১৪ (রোহিত), ২/১০৫ (পূজারা), ৩/১১৯ (কোহলি), ৪/৩০৯ (রাহানে), ৫/৪৩২ (আগারওয়াল), ৬/৪৫৪ (সাহা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
এবাদত : ৩১-৫-১১৫-১ (ও-৩),
আবু জায়েদ : ২৫-৩-১০৮-৪ (নো-৩),
তাইজুল : ২৮-৪-১২০-০,
মিরাজ : ২৭-০-১২৪-১,
মাহমুদুল্লাহ : ৩-০-২৪-০।