বাজিস-৮ : কুমিল্লায় গোমতীর চরে বছরজুড়ে মুলা চাষ

110

বাজিস-৮
কুমিল্লা- মুলা চাষ
কুমিল্লায় গোমতীর চরে বছরজুড়ে মুলা চাষ
কুমিল্লা দক্ষিণ, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯(বাসস): সহজে চাষ এবং স্বল্প সময়ে উৎপাদন হওয়ায় কুমিল্লার জেলার গোমতী নদী তীরবর্তী চরের বিভিন্ন স্থানে মুলা বছরব্যাপী চাষ হচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে মুলা চাষ। কুমিল্লার প্রায় প্রতিটি পাইকারি ও খুচরা বাজারে মুলার ব্যাপক কেনাবেচা চলছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলা সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস উপজেলায় গোমতীর চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৪০০ হেক্টর জমিতে মুলা চাষ হচ্ছে। গোমতীর দু’তীরের চরাঞ্চলে সারা বছর ব্যস্ত সময় পার করেন মুলা চাষিরা।
সদর উপজেলার বিবিরবাজার, জগন্নাথপুর, শাহপুর, গাজীপুর, কৃষ্ণপুর, গোলাবাড়ি, সুবর্ণপুর, টিক্কাচর, শ্যামারচর, শ্রীপুর, নিশ্চিন্তপুর, বুড়িচংয়ের ভান্ডী, বালিখাড়া, পূর্বহুরা, কাহেতরা, ভরাসার, ফরিজপুর, রামপাল, নানুয়ারবাজার, কাঁঠালিয়া, বাগিলারা, বাজেহুরা, কিংবাজেহুরা, মিথিলাপুর, বাজেবাহেরচর, জালালপুর, মহেষপুর, এতবারপুর, মীরপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়ার মনোহরপুর, মালাপাড়া, চন্ডিপুর, বিষ্টিপুর, অলুয়া, রামনগর, দেবীদ্বারের কালিকাপুর, নাল্লা, সাইচাপাড়া, কামাল্লা, মুরাদনগরের নবীপুর, ডুমুরিয়া, করিমপুর, তিতাসের ভাষানিয়াসহ বেশকিছু চর এলাকায় কৃষকরা বারো মাসই চাষাবাদ করছেন মুলা। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার একাধিক কৃষক জানান, সারা বছরই নদীতীরে নানা জাতের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারদর ভালো হওয়ায় পুরো বছরই কৃষকরা মুলা চাষে ব্যস্ত থাকেন। সদর উপজেলার সুবর্ণপুর এলাকার কৃষক আলআমিন জানান, শীতকালীন সবজি হিসেবে মুলার কদর থাকলেও বাজারদর অন্য সবজি অপেক্ষা কম থাকে। তবে বছরের অন্য সময় বাজারদর বেশ ভালো থাকায় এখানকার কৃষকরা বছরজুড়ে মুলা চাষে ঝুঁকছেন। এতে একেকজন কৃষক বছরে ৪-৫ বার ফলন পাচ্ছেন। ময়নামতির বাজেহুরা এলাকার আলম, আবদি মিয়াসহ একাধিক কৃষক জানান, শীতকালে অন্য সবজির মতো মুলাও বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় দাম অনেক কম থাকে। কিন্তু বছরের অন্য সময় বাজারে মুলার ভালো দাম পাওয়া যায়। বর্তমানে জমিতেই প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক কৃষক গোমতী চরে ব্যাপকহারে মুলা চাষ করছেন। একবার ফলন উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে ফের জমি চাষ করে বীজ বপণ করা হয়। এভাবে পুরো বছরে অন্য সবজির তুলনায় ৩-৪ গুণ আবাদ করা যায়। তারা আরও জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালোসহ কাছাকাছি পাইকারি ও খুচরা অনেক বাজার থাকায় খুব সহজেই কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার বুড়িচংয়ের নিমসারে দুই পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুর রব ও জাহাঙ্গীর জানান, তারা সরাসরি জমি থেকে মুলা কেনেন। সেখান থেকে ঢাকা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন। কামাল্লা গ্রামের কৃষক ইউসুফ জানান, লাভ ভালো হওয়ায় এখানকার কৃষকরা দিন দিন ব্যাপকহারে মুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। প্রতিটি ফলন উঠতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগে। এককালীন ৫০ শতক জমিতে মুলা চাষ করতে ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় করে তিনি দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
নদী তীরবর্তী ময়নামতির বাগিলারা গ্রামের কৃষক হƒদয় জানান, এখানকার কৃষকরা লালতীর, সুফলা নামের হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করেন। কৃষি বিভাগ থেকে মাঠপর্যায়ের লোকজন এসে তাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ ছাড়াও সরকারিভাবে বীজ-সার সুবিধা পাচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুল হাদি জানান, জেলার মোট মুলার প্রায় ২০ শতাংশ উৎপাদিত হয় গোমতীর চরে। চরে ৪৩০ হেক্টরের বেশি জমিতে মুলা আবাদ হয়। এ ফসলটি স্বল্প সময়ে অর্থাৎ ৪৫-৫০ দিনে বিক্রির উপযোগী হওয়ায় অন্য ফসলের চেয়ে বেশি আবাদ হয়। এতে লাভও বেশি। ফলে দিন দিন বাড়ছে গোমতীর চরাঞ্চলে মুলা চাষ।
বাসস/সংবাদদাতা/১৩-৫৮/নূসী