বইমেলা দুই বাংলার মাঝে ঐতিহ্য আর নিবিড় সেতু বন্ধন রচনা করেছে

553

কলকাতা, ১১ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : দুই বাংলার ঐতিহ্যের এক নিবিড় সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে আজ এখানে মোহরকুঞ্জে শেষ হলো টানা দশ-দিনের বিশাল আয়োজনের নবম বাংলাদেশ বইমেলা-২০১৯।
বাংলাদেশের একক আয়োজিত এই বই মেলা গত নয় বছরে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে বিশাল জনপ্রিয় ও ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে পেরেছে। এই মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন এপারের কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের বক্তৃতা-আলোচনায় এর গুরুত্ব উঠে আসে। অপর দিকে ভাঙ্গনের মলিন চিত্র ফুটে উঠে শেষ দিনের মেলায় আসা দর্শক-পাঠকদের মনে।
একজন পাঠক জানালেন, ‘মোহরকুঞ্জের এই মেলা প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে আমরা প্রাণের টান অনুভব করি। এ কারণেই মেলাটি লেখকের মেলা-প্রকাশকের মেলা, এবং পাঠকের মেলায় পরণত হয়, তাইতো মেলার উঞ্চতায় চঞ্চল হয়ে উঠে নব প্রেরণায় উদ্দীপ্ত পাঠকের মন-প্রাণ। কোলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ শূর বলেন, বই মেলা সব মেলার সেরা। এখানে নতুনের স্বাদ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এই স্বাদটি হলো প্রতিদিন নতুন বইয়ের আকর্ষণ, নতুন বইয়ের গন্ধ, ঝক মকে রঙিন মলাট ছোট থেকে বড় সবার মন জয় করে নেয়। মেলার উদ্বোধনী আনুষ্ঠানে অতিথি ভারতের কবি ও প্রাবান্ধিক শঙ্খ ঘোষ বলেন ‘আমি প্রতিবছরই মনের টানে, আবেগতাড়িত হয়ে এখানে আসি। এই মেলার পরিবেশটি আমার ভালো লাগে’।
কলকাতাস্থ উপ-হাই কমিশনার তৌফিক হাসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত ১০ দিনের এই বইমেলার সমপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের লেখক, গবেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট সাংবাদিক দেবাশিষ ভট্টাচার্জ্য, সাংবাদিক আশিষ চট্রপাধ্যায়।
মুনতাসির মামুন বলেন, ‘এই অঞ্চলে মৌলবাদীদের বিশাল উত্থান আমাদের শঙ্কিত করে। কিন্ত এদের প্রতিহতের ব্যবস্থাটা সেই ভাবে নেয়া হচ্ছে না। লেখক-সাংবাদিকদের লেখনী শক্তিই পারে, আর এ জন্যই তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা এর বিরূদ্ধে কলম শক্তি আব্যাহত রাখুন’।
তিনি আরও বলেন, ‘উপমহাদেশের দুই বাঙালী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। এই দুই বঙ্গালি-ই আমাদের প্রেরণা আর আস্তিত্ব মিশে আছে’। মুনতাসির মামুন বলেন, জাতির জনক বঙ্গব্ন্ধু শেখ মুজুবুর রহমান এমনই একজন ব্যক্তি যিনি রাজনীতিতে ধর্মীয়করণ নিষিদ্ধ করেছেন। আর তাঁরই উত্তরসুরী সুযোগ্যা কন্যা শেখ হাসিনা সার্ক রাষ্ট্রসমূহে ধর্মকে প্রতিহত করতে পেরেছেন। তিনি বলেন জগদ্দলের মতো প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যুগান্তকারী সূচকে এনে সচল করেছেন শেখ হাসিনা।
সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্রাচার্য বলেন ‘আমি বাঙালি, দুই দেশের-ই নাগরিক। আমি রাষ্ট্রীয় সীমানা বুঝি না, বুঝি দুই বাংলার আমরা সমস্ত বাঙালি প্রাণের আস্তিত্বে একাকার হয়ে আছি’। তিনি মেলা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারে কাছে প্রস্তাব রাখেন, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী পালনের প্রাক্কালে কোলকাতার এই মোহর কুঞ্জে-ই আগমী ডিসেম্বর (১৫-১৭) তিনদিনের একটি অনুষ্ঠান করার জন্য।
সাংবাদিক আশ্ষি চট্রোপাধ্যায় বলেন, বইমেলার এই জনপ্রিয় হওয়ার মূলে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা।
মেলার শেষ দিনেও দর্শক পাঠকের উপচে পড়া ভীর ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলার আয়োজক ও স্টলের মালিকরা জানিয়েছেন এবারের মেলায় পশ্চিম বাংলার পাঠকের বিপুল সাড়া মেলেছে। বাংলাদেশের প্রতিতি স্টলেই ভালো বিক্রি হয়েছে বলে তারা জনিয়েছেন।
সব শেষে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেলার পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন আয়োজকরা।