বাসস ক্রীড়া-১৯ : চাহারের হ্যাট্রিকে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের স্বপ্ন চুরমার

516

বাসস ক্রীড়া-১৯
ক্রিকেট-টি-২০
চাহারের হ্যাট্রিকে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের স্বপ্ন চুরমার
নাগপুর, ১০ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : বাংলাদেশ দলের সিরিজ জয়ের স্বপ্ন শেষ করে দিল ভারতীয় হ্যাট্রিকম্যান দীপক চাহার। তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচে জয়ের জন্য ১৭৫ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। জবাবে ১২ রানেই ২ উইকেট হারায় টাইগাররা। এরপর তরুণ মোহাম্মদ নাইম ও মোহাম্মদ মিঠুন ৬১ বলে ৯৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ১১০ রানে পৌছে দেন। এরপরই ভারতের পেসার চাহারের হ্যাট্রিকে ৩৪ রান তুলতে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ ও সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। ১৪৪ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। ভারত ম্যাচ জিতে ৩০ রানে। হ্যাট্রিকসহ ৭ রানে ৬ উইকেট নেন ভারতের চাহার। এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৪ রান করে ভারত।
নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং-এর সিদ্বান্ত নেন সফরকারী বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শুরুতেই ভারতকে ধাক্কা দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো বাংলাদেশের। সেই কাজটি সাড়েন বাংলাদেশের পেসার শফিউল ইসলাম। ইনিংসের নবম বলে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন শফিউল। আগের ম্যাচে ৪৩ বলে ৮৫ রান রোহিত এবার ২ রানের বেশি করতে পারেননি।
অধিনায়ককে হারানোর ধাক্কাটা সামলে উঠার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও লোকেশ রাহুল। দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশের বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন তারা। তবে পাওয়া প্লে’র শেষ ওভারে শফিউলের হাত ধরে দ্বিতীয় সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ১৬ বলে চার বাউন্ডারি মেরে ১৯ রান করা ধাওয়ানকে থামিয়ে দেন শফিউল।
৩৫ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। তৃতীয় উইকেটে সর্তকতার সাথে সর্তকতার সাথে থেকে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন রাহুল ও শ্রেয়াস আইয়ার। মারমুখী মেজাজে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন রাহুল। ৩৩তম বলেই টি-২০ ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান রাহুল। হাফ-সেঞ্চুরির পর ভুল শট খেলে নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন রাহুল। বাংলাদেশের পেসার আল-আমিনের শিকার হবার আগে ৭টি চারে ৩৫ বলে ৫২ রান করেন তিনি। আইয়ারের সাথে ৪১ বলে ৫৯ রান যোগ করেন রাহুল।
রাহুলের ফিরে যাবার পর রানের জন্য মারমুখী হয়ে উঠেন আইয়ার। আগেই ২টি ছক্কা হাঁকানো আইয়ার ১৫তম ওভারে বাংলাদেশের স্পিনার আফিফ হোসেনের প্রথম তিন বলেই টানা ছক্কা মারেন। ঐ ওভারের পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে ২৭তম বলে টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান আইয়ার।
১৭তম ওভারের প্রথম বলে ভারতের উইকেটরক্ষক ঋসভ পান্থকে ৬ রানে বোল্ড করেন সৌম্য। একই ওভারের পঞ্চম বলে আইয়ারকেও বিদায় দিয়ে ভারতের রানের গতি কমানোর পথ তৈরি করেন সৌম্য। ১১তম ম্যাচে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৩৩ বলে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৬২ রান করেন আইয়ার।
কিন্তু পরের দিকে মনিষ পান্ডিয়ার ১৩ বলে ৩টি চারে অপরাজিত ২২ ও শিবম দুবের ৮ বলে ৯ রানে ৫ উইকেটে ১৭৪ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। বাংলাদেশের শফিউল ও সৌম্য ২টি করে উইকেট নেন।
সিরিজ জয়ের জন্য ১৭৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আজও ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস। প্রথম ওভারে ২টি বাউন্ডারিতে ৮ রান তুলেন লিটন। কিন্তু তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে চাহারের শিকার হয়ে বিদায় নেন লিটন। ৮ বলে ৯ রান করেন তিনি।
এরপর ক্রিজে গিয়ে নিজের প্রথম বলেই আউট হন সৌম্য। পরপর দু’বলে উইকেট তুলে নিয়ে শুরুতেই বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেন চাহার। শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার পথ খুঁজেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও মোহাম্মদ মিঠুন। উইকেট বাঁচিয়ে খেলতে মনোযোগি হন তারা। তাই পাওয়ার প্লে’তে আশানুরুপ রান পায়নি বাংলাদেশ। রান উঠে ৩৩।
কিন্তু তাতেও শঙ্কিত হননি নাইম-মিঠুন। পাওয়ার প্লে শেষ করে রানের গতি বাড়াতে থাকেন তারা। বেশি মারমুখী মেজাজে ছিলেন নাইম। তাই ৩৩তম বলেই ৩ ম্যাচের টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান নাইম। তার মারমুখী ব্যাটিং-এ সাথে মিঠুনের ঠান্ডা মেজাজের পরিকল্পনায় ১২তম ওভারেই বাংলাদেশের দলীয় স্কোর তিন অংকে পা দেয়। আর এই জুটিও শতরানের দিকে এগোতে থাকে। দু’প্রান্ত দিয়ে বোলার ও ফিল্ডিং পজিশন পরিবর্তন করে নাইম-মিঠুন জুটি ভাঙ্গতে পারছিলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত। ফলে বাধ্য হয়েই ঐসময় পর্যন্ত ভারতের সফল বোলার চাহারের শরানাপন্ন হন রোহিত।
আগের স্পেলে ২ ওভারে ১ রানে ২ উইকেট নেয়া চাহার নাইম-মিঠুন জুটি ভাঙ্গেন। ১৩তম ওভারে আক্রমনে এসে শেষ ডেলিভারিতে মিঠুনকে বিদায় দেন চাহার। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৯ বলে ২৭ রান করেন মিঠুন। তৃতীয় উইকেটে নাইম-মিঠুনের ৬১ বলে ৯৮ রানের জুটিতে জয়ের পথ পায় বাংলাদেশ।
১৩ ওভারে দলীয় ১১০ রানে মিঠুনের বিদায় যেন বাংলাদেশের জন্য দুভার্গ্য বয়ে আনে। এরপর ১৩০ রানে পৌঁছাতে দ্রুতই ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা। অর্থাৎ ২০ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আর সেখানেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয় টাইগারদের। বাংলাদেশের আসল ক্ষতিটা করেছেন দুবে। চাহারের আঘাতের পর-পর ২ ওভারে ৩ উইকেট নেন দুবে। তার শিকার হন মুশফিকুর রহিম-আফিফ হোসেন ও নাইম। মুুশফিকুর ও আফিফ খালি হাতে ফিরেন। ২০ বছর বয়সী নাইমকে ৮১ রানে বোল্ড করেন দুবে। তার ৪৮ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো। ১৬তম ওভারের পরপর দু’বলে নাইম-আফিফকে বিদায় দেন দুবে। আর পরের ওভারে বাংলাদেশের শেষ ভরসা অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান ভারতের স্পিনার যুজবেন্দ্রা চাহাল। ১০ বলে ৮ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদুল্লাহ’র বিদায়ের ম্যাচ জয়ের আশা ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। কারন ঐসময় ১৯ বলে ৪৫ রান দরকার ছিলো টাইগারদের। হাতে ছিলো ৩ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ৪ বল বাকী থাকতে ১৪৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ১৮তম ওভারের শেষ বলে শফিউলকে ও শেষ ওভারের প্রথম দু’বলে যথাক্রমে মুস্তাফিজুর-আমিনুলকে শিকার করে হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন ভারতের চাহার। ভারতের প্রথম ও বিশ্বের ১২তম হ্যাট্টিক করা বোলার চাহার। ৩ দশমিক ২ বলে ৭ রানে ৬ উইকেট নেন চাহার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (টস-বাংলাদেশ) :
ভারত : ১৭৪/৫, ২০ ওভার (আইয়ার ৬২, রাহুল ৫২, সৌম্য ২/২৯)।
বাংলাদেশ : ১৪৪/১০, ১৯.২ ওভার (নাইম ৮১, মিঠুন ২৭, চাহার ৬/৭)।
ফল : ভারত ৩০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : দীপক চাহার (ভারত)।
সিরিজ সেরা : দীপক চাহার (ভারত)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী ভারত।
বাসস/এএমটি/২৩৪০/-স্বব