উত্তরণের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে : রাঙ্গা

355

ঢাকা, ২৪ মার্চ, ২০১৮ (বাসস) : বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীলে উত্তরণের ধারা টেকসইভাবে অব্যাহত রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের নিরলস পরিশ্রমে বাংলাদেশ বিগত এক দশকে ব্যাপক উন্নতি করেছে। আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীলে উত্তরণ করেছি, এই ধারা টেকসইভাবে অব্যাহত রাখতে হবে। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের সফলতার ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সবাইকে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।’
আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘উন্নয়নের গতিধারায় বাংলাদেশ- প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এলজিআরডি ও সমবায় বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বিষয়ে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কুমিল্লা এবং পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ), বগুড়া যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এন সিদ্দিকা খানমের সভাপতিত্বে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন আরডিএ-এর মহাপরিচালক এম মতিন, বার্ড-এর মহাপরিচালক ড. এম মিজানুর রহমান ও বিআরডিবির মহাপরিচালক মউদুদউর রশীদ সফদার। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বার্ড-এর পরিচালক মো. মিজানুর রহমান ও আরডিএ-এর পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম খান।
প্রতিমন্ত্রী ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৪৯৪ মার্কিন ডলার, সেখানে ২০১৭ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলারে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের নিরলস পরিশ্রমে বাংলাদেশ বিগত এক দশকে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীলে উত্তরিত হয়েছি। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিষদের উন্নয়ন নীতি বিষয়ক কমিটি (সিপিডি) সম্প্রতি বাংলাদেশের দারিদ্র্য হ্রাস ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করেছে।
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক- এ তিনটির যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই কাংখিত মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে। মানদন্ড অনুযায়ী বছরে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার, বর্তমানে বাংলাদেশের আ্য় ১ হাজার ৬১০ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ শতাংশ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থিৈনতক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হয় ৩২ শতাংশ বা তার কম, বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি এবং তা ভবিষ্যতে তা আরও বাড়াতে হবে।
বার্ড-এর মহাপরিচালক ড. এম মিজানুর রহমান বলেন, বার্ড প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার অংশগ্রহণকারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে, যাদের প্রায় ৩৬ শতাংশই নারী। বার্ড পল্লী অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও উন্নয়ন কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এছাড়া পল্লী মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য বার্ড ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ৬৪৫টি গবেষণা পরিচালনা করেছে।
আরডিএ-এর মহাপরিচালক এম মতিন বলেন, আরডিএ মঙ্গা নিরসন ও নারী ক্ষমতায়নে চর জীবিকায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ৩৩ হাজার অতি দরিদ্র চর পরিবারকে ৩ বেলা খাবারের সংস্থান নিশ্চিত এবং দারিদ্র্য ঝুঁকি কমিয়ে জীবন জীবিকার মানোন্নয়ন করেছে।
সভাপতির বক্তৃতায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এন সিদ্দিকা খানম বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করছে। বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের সমন্বয় করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তার সুফল পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, বরং সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশে উত্তরণের লক্ষ্য অর্জনের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে’।
বাসস/এমএন/১৩৩৫/শহক