নকলায় আলু হিমাগারের দ্বিতল ভবনের ছাদে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ফলের গাছ

170

শেরপুর,২২ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : জেলার নকলায় বিএডিসি আলু হিমাগারের দ্বিতল ভবনের ছাদে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ফলের গাছে অসংখ্য ঝুলন্ত ফলের সমাহার সবার নজর কেড়েছে। চাকুরির ফাঁকে সংসার গুছিয়ে যে সময়টুকু বিশ্রামে থাকার কথা, সে সময়টুকু নিজের অফিস ভবনের ছাদে ও অফিস বাউন্ডারীর ভেতরের পতিত জায়গায় দেশী-বিদেশী ফুল, ফল, সবজি ও ওষুধী গাছের বাগান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বিএডিসি আলু হিমাগারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম। তাঁর দেখাদেখি উপজেলার প্রায় সকল বাসা বাড়ির ভবনের ছাদে ফুল, ফল, সবজি ও ওষুধী গাছের বাগান গড়ে তুলেছেন ভবন মালিকরা।
এরই মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও বাসভবনের ছাদে মিশ্র বাগান করা হয়েছে, আবার কেউ কেউ ছাদ বাগানের কাজ শুরু করেছেন। নকলা পৌরসভা ভবনের ছাদে বিশাল বাগান গড়ে উঠেছে, গড়ে উঠেছে এনজিও ব্র্যাক ও আশা অফিস ভবনের ছাদেও। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের ভবন, উপজেলা পরিষদ ভবন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অফিস ভবন এবং থানা ভবনসহ উপজেলার সকল সরকারি বেসরকারি অফিসের ছাদে বাগান করার কাজ শুরু হয়েছে।
বিএডিসি আলু হিমাগারের ছাদ বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগান নির্মাতা নকলা বিএডিসি আলু হিমাগারের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ও উপসহকারি পরিচালক মো. মিজানুর রহমান সকল প্রজাতির ওষুধী, বনজ ও ফলজ গাছের বাগান করেছেন। কি নেই নকলা বিএডিসি আলু হিমাগারের ছাদ বাগানে! দেশি বিদেশী ফুল-ফল, শাক-সবজি, সৌন্দর্য বর্ধক পাতাবাহার ও বিভিন্ন ওষুধী গাছ থেকে শুরু করে অসংখ্য জাতের গাছে সমৃদ্ধ ওই বাগানটি। দেখলে যে কোনো প্রকৃতি প্রেমীই আকৃষ্ট হবেন, এতে কারো কোন সন্দেহ থাকার কথা নহে। দূরে বা নিচে থেকে যেকেউ নকলা বিএডিসি আলু হিমাগারের ছাদ বাগান দেখেলে, আকৃষ্ট হবেন; ওই বাগানে ঘুরে কিছুক্ষণ সতেজ বাতাস নিজের শরীরে লাগাতে চাইবেন।
কোন রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া শুধু মাত্র মাটি ও জৈব সার প্রয়োগ করে ছাদে বিভিন্ন সাইজের ড্রাম ও টপে ওই সব গাছ রোপণ করা হয়েছে এবং অফিস বাউন্ডারীর ভেতরের পতিত জায়গায় রোপণ করা গাছগুলোর মধ্যে- কিউজাই, কেশওয়াই, বানানা, সিন্দুরী, আশ্বীনী, আ¤্রপালী, ফজলী ও বারমাসী আমসহ দেশি বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির আম; আছে বারী মালটা-১, চায়না কমলা, বারী আম-৪, থাই পেয়ারাসহ দেশি-বিদেশী পেয়ারা ও লেবু, খেজুর পাম, হাইব্রিড আমড়া, ভিয়েতনামী নারিকেল, চায়না লিচু-৩, উচ্চ ফলনশীল লটকন, বেদেনা, সফেদা, এ্যাভোকাডো, ড্রাগন, ডালিম, জাম্বুরা, আমলকী, কতবেল, পেঁপেসহ বিভিন্ন প্রজাতির আরও অনেক ধরনের ফল গাছ। ফুলের মধ্যে রয়েছে দেশী ও হাইব্রিড জাতের গোলাপ, রংগন, টগর, নানা প্রজাতির ক্যাকটাস, বেলী, রজনী গন্ধা, হাসনা হেনা ও রঙ্গন। ওষুধী গাছের মধ্যে অ্যালোভেরা, পাথরকুচি, ঘৃতকোমারী, তুলসী, বাসক, পুদিনা ও থানকুনী উল্লেখ্যযোগ্য। সৌন্দর্য বর্ধনে আছে ঝাউ, দেবদারু ও আকাশমণি, দেশি-বিদেশী বাহারী পাতাসহ সৌন্দর্য বর্ধক বিভিন্ন জাতের গাছ। তাছাড়া সবজির মধ্যে বেগুন, টমেটো, মরিচ, লাউ, কুমড়ো, পুঁই শাক, লাল শাক, কলমী শাক, শিম, ধনিয়া, পুদিনা, তেজপাতা ঢেঁড়শসহ আরও অনেক ধরনের মৌসুমী শাক-সবজি নিয়মিত চাষ করা হয় বলে বিএডিসি কর্মকর্তারা জানান।
উপসহকারি পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, যে ভূমিতে ভবন নির্মাণ করা হয়, ওই ভবনের ছাদে সবাই বাগান গড়ে তুললে, এক জমিতেই বাসা বা অফিস এবং বাগান হয়ে যায়। এতে জমির দুই স্তরে ব্যবহার হয়। ছাদ বাগান বাড়াতে পারলে জমির সুষ্ঠু ব্যবহারে পারিবারিক আয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বাগানের পরিচর্চায় শরীর ও মন সুস্থ থাকার পাশাপাশি পরিবেশ হবে সুন্দর এবং বেঁচে যাবে টাকাও, মিলবে নিরাপদ শাক-সবজি ও ফল। তাদের গড়া ছাদ বাগান দেখে এলাকার অন্যান্যরা ছাদ বাগান করতে আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে নকলা বিএডিসি আলু হিমাগারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কৃষিবিদ রিয়াজুল ইসলামের পরামর্শে ছাদ বাগান করার পরিকল্পনা হাতে নেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। তার পরামর্শেই এ ছাদ বাগানটাকে আরো সম্প্রসারণ করাসহ সৌন্দর্য বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান রফিকুল ইসলাম। কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, ছাদ বাগান শুধু সৌন্দর্যই বাড়ায় না। বর্তমানে এমন ছাদ বাগান নিরাপদ ফল, শাক-সবজি ও ওষুধী গাছের যোগানের অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোন বাড়ীর ছাদ বাগান থেকে পরিবারের শাক-সবজি ও ফলের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, গাছের পরিচর্যার ব্যাপারে বলেন, চাকরির ফাঁকে বা অবসরের অধিকাংশ সময় তিনি এ বাগানেই কাটান। বাগানের প্রতিটি গাছকে তিনি নিজের মতোকরে যতœ করেন।
বাগানে কাজ করায় মনে যেমন তৃপ্তি পাওয়া যায় তেমনি ব্যায়ামের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে, কম হলেও বাঁচছে টাকা, মিলছে নিরপদ শাক-সবজি ও ফল। এসব বিবেচনায় দেশের সকল ভবনের ছাদে আস্তে আস্তে বাগান গড়ে উঠবে বলে আশা করছেন কৃষি বিশেজ্ঞরা।