বাসস দেশ-৩৯ : রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানসহ সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে ইইউ

499

বাসস দেশ-৩৯
ইইউ-বাংলাদেশ-সভা
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানসহ সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে ইইউ
ঢাকা, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইইউ প্রতিনিধিরা।
আজ ঢাকায় মেঘনা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতার সম্পর্ক বিস্তৃত ও জোরদারকরণের লক্ষ্যে সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ক সাব-গ্রুপের নবম সভায় এই কথা বলা হয়।
সভায় বাংলাদেশের উন্নয়নে তারা সহযোগিতারও আশ^াস দিয়েছেন। এছাড়া সু-শাসন ও মানবাধিকারের সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সাধিত অগ্রগতি স্থায়ী রূপদান করার ব্যাপারে ইইউ প্রতিনিধিরা সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে ইউরোপীয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক বিভাগের প্রধান কারোলিন ভিনত যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রধান কারোলিন ভিনত এর নেতৃত্বে একুশ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের বিশটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি অংশ নেন।
সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে ইইউকে জানোনো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতার প্রশ্নে মায়ানমার হতে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছেন। বাংলাদেশে অবস্থিত মায়ানমারের নাগরিকগণ পরিবেশ, প্রতিবেশ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ যে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে তা দীর্ঘায়িত হলে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিঘিœত হবে। রোহিঙ্গা সংকট বিশ^ মানবতার জন্য লজ্জাজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। সভায় মায়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহসহ সকলের সমর্থন চাওয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয় মায়ানমারের বিরুদ্ধে জোড়ালো ও শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে মায়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হবে না।
শ্রম অধিকার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়, শ্রমিকগণ আমাদের সহোদর, ভাই-বোন, কন্যা, স্ত্রী অথবা মা। সুতরাং তাদের প্রতি আমাদের যে মমত্ববোধ রয়েছে তারই প্রতিফলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার শ্রমিকগণের মজুরী ও সুযোগ-সুবিধা অনেক বৃদ্ধি করেছে। প্রয়োজনে তাদের এ সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধি করা হবে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পরামর্শ/সুপারিশ অনুযায়ী শ্রম আইন, ২০০৬ এ ব্যাপক ভিত্তিক সংশোধন করা হয়েছে এবং রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলসমূহের জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিধান সহজ ও উদার করার পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের পদ্ধতিও সহজ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) এ গৃহীত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এজেন্সিসমূহ একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার যেসব কনভেনশনে পক্ষভূক্ত সেগুলোর বিধি-বিধানের আলোকে শ্রম আইনের সংশোধন এবং বিধি-বিধান প্রণয়নের জন্য ইইউ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
নারী ও শিশু অধিকারের বিষয়ে বলা হয়, নারী ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার অনেক আইন, বিধি ও নীতি প্রণয়ন করেছে। নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য সকল ক্ষেত্রে তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। নারীরা যাতে নিজ বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রাণির শিকার না হন তা প্রতিরোধের জন্য সকল প্রতিষ্ঠানে গঠিত কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।
সভায় মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে ইইউকে জানানো হয়, বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত। সে কারণেই বহু সংখ্যক বে-সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদপত্র ও অনলাইন মিডিয়া তাদের মত করে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করছে। এ কারণে তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রসঙ্গে জানানো হয়, বাংলাদেশে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, জন্মস্থান ভেদে বৈষম্য না করার বিষয়টি সরকারের নজরদারিতে রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের সকলে তাদের নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে মিলে-মিশে পালন করছে।
২০১৮ সনের নির্বাচন সম্পর্কে ইইউ হতে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক তাদেরকে বলেন যে, নিবন্ধিত ৩৯টি দলের অংশগ্রহণে প্রায় সতের শতাধিক প্রার্থীর প্রতিযোগিতায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের চাহিত সকল ধরণের সহযোগিতা প্রদান করেছে। এই নির্বাচনে পূর্ববর্তী যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে কম সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে যেসব প্রার্থীর প্রশ্ন ছিল তারা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন। সে বিবেচনায় নির্বাচন সম্পর্কিত প্রশ্নসমূহ (সাব-জুডিস) সম্পর্কে এই ফোরামে আলোচনার অবকাশ নেই।
বাসস/সবি/এমএআর/২২১০/-এএএ