বাসস ক্রীড়া-৯ : কোহলির ডাবল-সেঞ্চুরির দিনে বিপদে দক্ষিণ আফ্রিকা

256

বাসস ক্রীড়া-৯
ক্রিকেট-পুনে টেস্ট
কোহলির ডাবল-সেঞ্চুরির দিনে বিপদে দক্ষিণ আফ্রিকা
পুনে, ১১ অক্টোবর ২০১৯ (বাসস) : দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পুনে টেস্টের দ্বিতীয় দিন ডাবল-সেঞ্চুরি করলেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তার অপরাজিত ২৫৪ ও আগের দিন সেঞ্চুরি করে ১০৮ রানে আউট হওয়া ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৫ উইকেটে ৬০১ রান করে নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষনা করেছে স্বাগতিক ভারত। দিনের শেষ ভাগে ব্যাট হাতে নেমে ৩ উইকেটে ৩৬ রান তুলেছে প্রোটিয়ারা। ফলে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৫৬৫ রানে পিছিয়ে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলো-অন এড়াতে আরও ৩৬৫ রান করতে হবে প্রোটিয়াদের।
আগারওয়ালের ১০৮, কোহলির অপরাজিত ৬৩ ও চেতেশ্বর পূজারার ৫৮ রানের সুবাদে প্রথম দিন শেষে ৩ উইকেটে ২৭৩ রান করেছিলো ভারত। কোহলির সাথে ১৮ রান নিয়ে দিন শেষ করেছিলেন আজিঙ্কা রাহানে।
দ্বিতীয় দিনও ব্যাট হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকেন কোহলি ও রাহানে। প্রথম সেশনে অবিচ্ছিন্নই থাকেন তারা। আর ঐ সেশনেই ৮১তম টেস্টের ১৩৮তম ইনিংসে ২৬তম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন কোহলি। কোহলি ১০৪ ও রাহানে ৫৮ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান। এসময় দলের স্কোর ছিলো ৩ উইকেটে ৩৫৬ রান।
বিরতি পরই বিদায় ঘটে রাহানের। দলীয় ৩৭৬ রানে ফিরে যান রাহানে। বিরতির পর মাত্র ১ রান যোগ করতে পারেন রাহানে। তার ১৬৮ বলের ইনিংসে ৮টি চার ছিলো। চতুর্থ উইকেটে ১৭৮ রানের জুটি গড়েন কোহলি ও রাহানে। যার মধ্যে কোহলিরই ছিলো ১১৪ রান। রাহানের ৫৯।
রাহানের বিদায়ে উইকেটে কোহলির সঙ্গী হন রবীন্দ্র জাদেজা। কোহলির সাথে তাল মিলিয়ে দলের স্কোর বড় করতে থাকেন জাদেজা। পাশাপাশি বড় হতে থাকে রান মেশিন কোহলির ব্যক্তিগত ইনিংসও। দেড়শ পেরিয়ে ডাবল-সেঞ্চুরির দিকে ছুটতে থাকেন কোহলি। অবশেষে ভারতীয় ইনিংসের ১৪৪তম ওভারের চতুর্থ বলে ও নিজের মুখোমুখি হওয়া ২৯৫তম বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম ডাবল-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন কোহলি। এতে টেস্টে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ডাবল-সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন ভারত অধিনায়ক। ফলে পেছনে পড়ে গেলেন মাস্টার ব্লাস্টার ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার ও ওপেনার বিরেন্দার শেবাগ। দু’জনই ক্যারিয়ারে ছয়টি করে ডাবল-সেঞ্চুরি করেছেন। তবে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ ডাবল-সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের ওয়ালি হ্যামন্ড ও শ্রীলংকার মাহেলা জয়াবর্ধনেকে স্পর্শ করেন কোহলি। তারাও সাতটি করে ডাবল-সেঞ্চুরি করেছেন। এই তালিকায় সবার উপরে অস্ট্রেলিয়ার স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। ১২টি ডাবল-সেঞ্চুরি নিয়ে সবার উপরে ব্র্যাডম্যান।
ডাবল-সেঞ্চুরির পরও স্বাচ্ছেন্দ্যে ব্যাট করতে থাকেন কোহলি। অন্যপ্রান্তে সেঞ্চুরির দিকে ছুটতে থাকেন জাদেজা। ততক্ষণে দলীয় স্কোরও রানের পাহাড়ে চড়ে বসে। তারপরও ইনিংস ঘোষনার জন্য জাদেজার সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন অধিনায়ক কোহলি। কিন্তু কোহলি ও ভারতকে হতাশ করেন জাদেজা। নার্ভাস-নাইন্টিতে ফিরেছেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার সেনুরান মুথুসামিকে ছক্কা মারতে গিয়ে ডি ব্রুইনের হাতে ক্যাচ দেন জাদেজা। ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৪ বলে ৯১ রানে আউট হন জাদেজা। তার আউটের সাথে-সাথে ৬০১ রানে ইনিংস ঘোষনা করেন কোহলি। তখন কোহলির নামের পাশে ঝকঝক করছিলো অনবদ্য ২৫৪ রান। তার ৩৩৬ বলের ইনিংসে ৩৩টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।
এই ইনিংস খেলার পথে টেস্টে ৭হাজার রান পূর্ণ করেন কোহলি। ১৩৮তম ইনিংসে ৭হাজার রান পূর্ণ করে রেকর্ড বইয়ে চতুর্থ স্থানে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যারি সোর্বাস-শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারাকে স্পর্শ করেন কোহলি। দ্রুত ৭হাজার রান পূর্ণ করতে ১৩৮ ইনিংস লেগেছিলো সোর্বাস ও সাঙ্গাকারার। এই তালিকায় সবার উপরে আছেন হ্যামন্ড। ১৩১ ইনিংসে ৭ হাজার রান করেছিলেন হ্যামন্ড।
এছাড়াও এই ইনিংস খেলার পথে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন কোহলি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে কোন অধিনায়কের এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। এই ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সফল বোলার কাগিসো রাবাদা ৯৩ রানে ৩ উইকেট নেন।
ভারতের ইনিংস শেষে দিনের শেষ ভাগে ব্যাট হাতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। রানের খাতা খোলার আগেই প্রোটিয়া ওপেনার আইডেন মার্করামকে আউট করেন ভারতের পেসার উমেশ যাদব। পরের ওভারে সফরকারীদের আরেক ওপেনারকেও বিদায় দেন উমেশ। ৬ রান করে থামেন ডিন এলগার। তাই ১৩ রানেই দুই ওপেনারকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এরপর শুরুর ধাক্কাটা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন ডি ব্রুইন ও তেম্বা বাভুমা। ২০ রানের জুটিও গড়েন তারা। কিন্তু তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাড়ান ভারতের আরেক পেসার মোহাম্মদ সামি। ৮ রান করা বাভুমাকে দলীয় ৩৩ রানে বিদায় দেন সামি।
দশম ওভারের প্রথম বলে তৃতীয় উইকেট পতনের পর দিনের বাকী সময়টা বেশ সর্তকতার মধ্যে পার করেন ব্রুইন ও নাইটওয়াচম্যান এনরিখ নর্টি। তাই দিনের বাকী সময়ে আরও উইকেটের পতন হয়নি। ব্রুইন ২০ ও নথি ২ রানে অপরাজিত আছেন। ভারতের উমেশ ২টি ও সামি ১টি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৬০১/৫ ডি, ১৫৬.৩ ওভার (কোহলি ২৫৪*, আগারওয়াল ১০৮, রাবাদা ৩/৯৩)।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৩৬/৩, ১৫ ওভার (ব্রুইন ২০*, বাভুমা ৮, উমেশ ২/১৬)।
বাসস/এএমটি/১৮৪৫/স্বব