ফলের বাগানে স্বপ্ন বুনলেন লক্ষ্মীপুরের আজিম

739

লক্ষ্মীপুর, ২ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : রাজধানী ঢাকায় কসমেটিক্সের ব্যবসা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। এরপর দুবাই ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ৪ বছর প্রবাসী ছিলেন। তখন টেলিভিশন ও ইউটিউবে সাংবাদিক শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতেন। সেই দেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে ফিরে প্রায় সাড়ে ৮ একর জমির উপর গড়ে তোলেন ফলের বাগান। এখন ফলের বাগান-ই তার স্বপ্ন। বলছিলাম, তরুণ উদ্যোক্তা আজিম উদ্দিন ভূঁইয়ার কথা। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাসিন্দা শাহ নেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে।
আজিম ২০১৭ সালে রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের হাজিমারা গ্রামে সাড়ে ৮ একর জমি দশ বছরের জন্য ইজারা নেন। এ জমিতে তিনি ‘ভূঁইয়া ফ্রুটস গার্ডেন’ নামে একটি ফলের বাগান গড়ে তোলেন। যদিও স্থানীয়দের কাছে এটি ‘মাল্টা বাগান’ বলে পরিচিত। বর্তমানে এ বাগানে প্রায় ৫ হাজার ৫শ’টি ফলের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বারী-ওয়ান জাতের ১ হাজার ৫শ’ মাল্টা গাছ, থাই জাতের ২ হাজার ৫শ’ পেয়ারা গাছ, হিম সাগর জাতের ১ হাজার আম গাছ এবং আপেল ও নারকেলী জাতের ৫শ’টি বড়ুই গাছ রয়েছে। বর্তমানে এ বাগানে দুজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। বাগান করার শুরুতে রাজশাহী থেকে এসব কলম গাছ সংগ্রহ করেছিলেন আজিম। ইতোমধ্যে এসব গাছ থেকে ফল আহরণ শুরু হয়েছে। যা স্থানীয় বাজার গুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফল গুলো সু-স্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা দিনদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করার পর পড়ালেখা আর এগোয়নি তরুণ উদ্যোক্তা আজিমের। তখন মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে রাজধানীতে পাড়ি জমান আজিম। সেখানে তিনি প্রায় ৩ বছর কসমেটিক্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরপর ২০১০ সালে পরিবারের ইচ্ছায় দুবাই যান। মাত্র এক বছর পরই দেশে ফিরে আসেন। পরে ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয় তার। সেখানে তিন বছর প্রবাস জীবন কাটান। এসময় টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাংবাদিক শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতেন আজিম। এভাবেই তিনি কৃষি কাজের প্রতি আকৃষ্ট হন। তখন থেকেই ফলের বাগান তৈরির স্বপ্ন তার।
২০১৬ সালে দেশে ফিরে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে সাড়ে ৮ একর জমির উপর গড়ে তোলেন বিশাল এক ফলের বাগান। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই কেবলমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফলের বাগান তৈরির ধারণা নিয়ে এ উদ্যোগ নেন তিনি।
তরুণ উদ্যোক্তা আজিম উদ্দিন ভূঁইয়া বাসসকে বলেন, বিদেশের মাটিতে বসে আমি যেই স্বপ্ন দেখেছি তা অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতোমধ্যে আমার বাগানের গাছ গুলো থেকে ফল আহরণ শুরু হয়েছে। যদিও এবছর উৎপাদিত ফলের পরিমাণ কম। তবে আমি আশাবাদি, সব ঠিক থাকলে আগামী বছরগুলোতে ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আজিম আরও বলেন, প্রথম বছর বাগানে শুধুমাত্র মাল্টা ফলের ৩ হাজার কলম লাগাই। আমার অনভিজ্ঞতা ও সার-কীটনাশক ব্যবহারে অদক্ষতার কারণে সবগুলো গাছই মারা যায়। পরবর্তীতে আরও ৫ হাজার ৫শ’টি মাল্টা, আম, বড়–ুই ও পেয়ারা গাছ লাগাই। সবমিলে এখন পর্যন্ত আমার প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বাসসকে বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফলের বাগান করে লাভবান হওয়া সম্ভব। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফলের চাহিদা বেড়েছে। যেকারণে ফল চাষ খুবই লাভজনক।