শিশু শ্রম নিরসন কর্মসূচির আওতায় ২০২০ সালের মধ্যে এক লাখ শিশুকে পুনর্বাসন করা হবে

1135

ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নকে সামনে রেখে দেশ থেকে শিশু শ্রম নিরসন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০২০ সালের মধ্যে এক লাখ শিশুকে পুনর্বাসন করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশ থেকে শিশু শ্রম কর্মসূচি বাস্তবায়নে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২৮৪ কোটি টাকার একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইতোমধে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে বলে শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে জড়িত শিশুদের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের শিশু শ্রম নিরসনে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদের মাধ্যমে শিশু শ্রম নিরসনের কর্মসূচি বাস্তবয়ান করা হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ গত দেড় বছরেও পুরোপুরি শুরু হয়নি। তবে টাকা বরাদ্দ আছে, প্রকল্প অফিস আছে, কিন্তু বস্তবায়নে যেযসব এনজিওগুলো কাজ করবে সেসব এনজিও বাচাই ও নির্বাচন সম্পন্ন হলেই কাজ শুরু সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০১৮ থেকে এই প্রকল্প কার্যক্রম শুরু হয়ে ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে সময়মত শেষ নাও হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৮টি খাতে ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৪ শিশু শ্রমিক রয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯০ জন মেয়ে শিশু। শিশু শ্রমে নিয়োজিতদের ৫৭ শতাংশের কাজই অস্থায়ী। এক গবেষণা মতে, শিশু শ্রম বেশি কৃষি ও কল-কারখানায়। সেখানে ১০ লাখের বেশি শিশু কাজ করে। এছাড়া দোকানপাটে ১ লাখ ৭৯ হাজার, নির্মাণ শিল্পে ১ লাখ ১৭ হাজার শিশু কাজ করে। বর্তমানে শিশুশ্রমে নিয়োজিত আছে এমন ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু এক সময় স্কুলে গেলেও এখন আর যায় না। আর ১ লাখ ৪২ হাজার শিশু কখনোই স্কুলে যায়নি বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আইএলও’র তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু নানাভাবে শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি শিশু নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। বাংলাদেশে শিশু শ্রম নিরসনে সরকারের উদ্যোগ দেশ-বিদেশে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
এ বিষয়ে সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস গভর্নেন্স অ্যান্ড চাইল্ড প্রোটেকশন সেক্টরের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন বলেন, সরকার শিশুদের জন্য ৩৮টি কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে গাড়ির হেলপারি করা সবচেয়ে ঝুঁকির কাজ হলেও এতে টাকা বেশি। তাকে যখন পুনর্বাসনের কথা বলা হবে, তখন তার পরিবারের জন্য অবশ্যই আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। আবার যেখানে আয় কম, সেখানে পুনর্বাসনের ভিন্ন কৌশল হাতে নিতে হবে। কোনও একক পদ্ধতিতে সব ধরনের শিশুর পুনর্বাসন করা সম্ভব নাও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক শিশুকে গ্যারেজ, রেস্টুরেন্ট জাতীয় জায়গায় কেবল সারাদিন সুরক্ষিত থাকবে ভেবে বাবা-মায়েরা কাজে দেন। এজন্য তারা কোন পারিশ্রমিকও নেন না। কর্মজীবী বাবা-মা তার শিশুটিকে একটি জায়গায় রেখে যেতে চান মাত্র। এসব ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে।’
মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার ভুইয়া এমপি বলেন, সরকার শিশু শ্রম নিরসনের লক্ষ্যে যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন শ্রমজীবী শিশু ও তার পরিবারের আর্থসামাজিক পুনর্বাসনের কথা যেমন চিন্তা করতে হবে । তেমনি একটি শিশুও যেন আজ থেকে কাজে নতুন করে শিশু শ্রমে যুক্ত না হয়, সে বিষয়েও সবাইকে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, গ্রাম থেকে যেসব কারণে শিশুরা শহরে চলে আসছে এবং কাজে বাধ্য হচ্ছে, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে গোড়াতেই তা নির্মূল করার উদ্যোগও নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ-২০১৩’ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোন না কোন শ্রমে নিয়োজিত ছিল বর্তমানে সরকারের নানা উদ্যোগের কারনে তা কমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশুই বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। শিশু শ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে বন্ধের অঙ্গীকার করেছে। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রমজীবী শিশুদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা থেকে সাধারণ শ্রমে নিযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।