নোয়াখালীতে স্পিরিট পানে ৬ জনের মৃত্যু, পিতা-পুত্র আটক

537

নোয়াখালী, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : জেলার কোম্পানীগঞ্জে স্পিরিট পান করে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পান বাজার সংলগ্ন রফিক হোমিও হলের স্পিরিট পান করে তাদের মৃত্যু হয় বলে পুলিশ জানায়।
এ ঘটনায় পুলিশ স্পিরিট বিক্রেতা ডাক্তার সৈয়দ জায়েদ উল্যাহ (৬৫) ও তার ছেলে সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রিয়ম (৩০) কে আটক করেছে।
শুক্রবার রাতে সৈয়দ জায়েদ উল্যাহকে ফেনীর দাগনভূইয়া ও তার ছেলেকে কোম্পানীগঞ্জ থেকে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার নূর নবী মানিক (৫০), একই এলাকার অনিল রায়ের ছেলে রবি লাল রায় (৫৫), মোহাম্মদনগর গ্রামের ফয়েজ আহমদের ছেলে মহিন উদ্দিন (৪০), চর কাঁকড়া ইউয়িনের ৪ নং ওয়ার্ডের আবদুল আজিজের ছেলে আবদুল খালেক (৫৮), সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মতলব মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন রইসুল হকের ছেলে মো. সবুজ (৬০) ও আবদুর রহমানের ছেলে ওমর ফারুক লিটন (৫৫) মারা গেছে। এরমধ্যে আজ সকালে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিটন মারা গেছে।
আশংকাজনক অবস্থায় চর কাঁকড়া ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মোস্তফার ছেলে মোজাম্মেল হোসেন দুলাল (৫৫) ফেনীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ রফিক হোমিও হলে অভিযান চালায়। এ সময় ৬০০ বোতল স্পিরিট জব্দ করা হয় এবং দোকানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত মমিন উল্যাহর ছেলে সৈয়দ জায়েদ উল্যাহ ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বসুর হাট পৌর বাজারের পান বাজার গলিতে রফিক হোমিও হল নামে একটি দোকান খুলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার আড়ালে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি নেশা জাতীয় দ্রব্য ও রেকটিফাইড স্পিরিট বিক্রি করে আসছেন। বসুরহাট বাজার ও পৌর এলাকার উঠতি বয়সের যুবক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের লোকদের কাছে তিনি স্পিরিট বিক্রি করতেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, একাধিক সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন বিভিন্নস্থানে স্পিরিট পান করে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ খবর শুনে তিনি ৫ জনের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে রবি লাল রায় এবং নূর নবী মানিনের লাশ উদ্ধার করে রাতেই থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
আজ সকালে রবি লাল রায় এবং নূর নবী মানিক এর লাশ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে, ৩ জনের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ সকালে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বসুরহাট পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাশেম বেপারি বাড়ির আবদুর রহমানের ছেলে ওমর ফারুক লিটন মারা যায়।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় পুলিশ স্পিরিট বিক্রেতা ডা. জায়েদ এর ছেলে প্রিয়মকে রাতে আটক করেছে। রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন-অপারেশন) দীপক জ্যোতি খীসা কোম্পানীগঞ্জ থানা পরিদর্শনে আসেন। ভোর রাতে তার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সৈয়দ জায়েদ উল্যাহকেও ফেনীর দাগনভূইয়া থেকে আটক করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান, কোম্পানীগঞ্জের নুরনবী মানিক ও রবি লাল রায় নামের ২ ব্যক্তির মৃতদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, চিকিৎসক হিসেবে জায়েদের কোন সনদ ছিল না। এ ছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সেরও কোন মেয়াদ ছিল না। তাই দোকানটি সিলগালা করা হয়েছে। জব্দকৃত স্পিরিট পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ৬ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে পুলিশ মামলা করবে।