মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

959

ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বোঝা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া উচিৎ।
বৃহস্পতিবার গণভবনে ইউকে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি)’র দু’টি পৃথক প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কারণ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরাও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। সে সময়ে ১ কোটি বাংলাদেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।’
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এদের কারণে স্থানীয় মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
মানবিক কারণে ভোগান্তি মেনে নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সফররত ইউকে কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ (সিএফওবি) ও ইউকে এপিপিজি অন পপুলেশন, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেল্থ এর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
ইউকে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি)’র সভাপতি অ্যানী মেইন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
ইউকে এপিপিজি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের সফরের উপর লেখা একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ায় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যহত থাকবে বলে আবারো প্রতিশ্রুতি দেন।
দুই বছর আগে বাংলাদেশে তাদের সফরের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, সেই সময়ের তুলনায় এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ অনেক ভাল হয়েছে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটেন বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহতভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক আরো গভীর থেকে গভীরতর হবে।’

ইউকে এপিপিজি অন পপুলেশন, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ এর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহিত পরিবার পরিকল্পনা নীতির প্রশংসা করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি এ নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, ‘জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু গৃহিত নীতিটি খুবই কার্যকরী হয়েছে।’
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আরো বলেন, পরিবার পরিকল্পনা ইস্যুতে সাফল্যের কারণে এ সংক্রান্ত যুক্তরাজ্যের অনেক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম আছে।
বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রশংসনীয়।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা আরো বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশেকে ক্ষুধা ও দরিদ্রমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি বাংলাদেশকে তাঁর কাঙ্গিত লক্ষের দিকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এভাবে তিনি যখন দেশকে সমৃদ্ধির পথে এনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময়ে তিনি ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশের উন্নয়নে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার গ্রামীণ এলাকার আর্থ -সামাজিক উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ জনপদ ও গ্রামীণ জনমানুষের অবস্থার উন্নয়ন আমার প্রধান কাজ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০০৬ সালে এটা ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। ২০০৬ সালে দেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন ছিল ৩২শ’ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার মেগাওয়াটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে তার সরকার ১৯৯৬-২০০১ সালে দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিল।
তিনি আরো বলেন, কিন্তু বিএনপি-জামাত সরকার ক্ষমতা দখল করে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আবার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম চালু করে।
বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের মতো কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে এবং এগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘নারী ও শিশুরা এইসব ক্লিনিকের প্রকৃত উপকারভোগী।’
শিক্ষা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন।
এ সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট উইনিংটন গিবসন।