নার্সিং প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে : প্রধানমন্ত্রী

1433

কাশিমপুর, গাজীপুর, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশে এবং বিদেশে বিশেষায়িত নার্সদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জোগান দিতে তাঁদের প্রশিক্ষণকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমরা নার্সদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা আজ সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর তেঁতুইবাড়িতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ’র ১ম ¯œাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নিজেদেরও এখন প্রচুর নার্সের দরকার। তাছাড়া বিভিন্ন ইনষ্টিটিউট করে দিয়েছি সেখানেও আমাদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স দরকার হবে। ইতোমধ্যে বিদেশ থেকেও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসছি।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশে যেমন প্রশিক্ষণ চলবে তেমনি দেশেও যেন শিক্ষার মানটা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয় সে ব্যবস্থাটাও আমরা নেব।’
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহসভাপতি শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এই গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান দেশের আরো ছেলে-মেয়েকে মহান সেবামূলক নার্সিং পেশায় আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ আমরা চাই এই হাসপাতাল এবং নাসিং কলেজে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা রোগীরা পাবে এবং যা সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।’
শেখ হাসিনা নবীন নার্স গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম করে আর্ত মানবতার সেবায় আপনারা আপনাদের আজকের সার্টিফিকেট প্রাপ্তির মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবেন।’
জরুরি রোগী আনা নেয়ার জন্য তাঁর সরকার এখানে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সেবা দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘আগামীতে একটি মেডিকেল কলেজ আমরা প্রতিষ্ঠা করবো। ইতোমধ্যে সেজন্য হাসপাতালের পাশের খালের বিপরীত পাশে জায়গা নেয়া হয়েছে। আমরা সুন্দরভাবে এখানে একটি মেডিকেল কলেজ করতে চাই তাহলে পুরো জায়গাটি একটি স্বাস্থ্যসেবার হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে গ্রাজুয়েটদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন। তিনি রুবিনা জেসমিন (২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ), পোষ্ট বেসিক’র শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার (২০১৪-১৫ শিক্ষা বর্ষ) এবং রীনা আক্তার (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) কে প্রধানমন্ত্রী পদক প্রদান করেন।
৭৯ জন শিক্ষার্থী, এরমধ্যে ৫৭ জন পোষ্ট বেসিকের শিক্ষার্থী ১ম ব্যাচে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মালয়েশিয়ার কেপিজে হেলথ কেয়ার ইউনিভার্সিটি কলেজের উপাচার্য এবং স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের ডীন অধ্যাপক ড. দাঁতো লোকমান সাইম অনুষ্ঠানে গ্রাজুয়েমন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজের সিইও অধ্যাপক তৌফিক বিন ইসমাইল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
গ্রাজুয়েশন অর্জনকারী শিক্ষার্থীগণের মধ্য থেকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খায়রুল ইসলাম ও অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত সঙ্গীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী এবং শেখ রেহানা গ্রাজুয়েশন অর্জনকারি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফটো সেশনে অংশগ্রহণ করেন।
এনার্জি প্যাক লিমিটেড শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজের জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দাঁতোসেরি মোহাম্মদ নজিব বিন তুন আব্দুল রাজাক বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ট্রাস্টের সহ-সভাপতি শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে এই হাসপাতাল উদ্বোধন করেন এবং ৮ এপ্রিল ২০১৫ সালে বর্তমান নার্সিং কলেজটির যাত্রা শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নে দেশের সকল বিভাগে পর্যায়ক্রমে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।
তিনি বলেন, দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ২০০৬ সালে থাকা ৪৬টি থেকে বর্তমানে ১১১টিতে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে নার্সিং পেশাটি এক সময় অবহেলিত ছিল বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘নার্সিয়ের মত একটা সেবামূলক পেশা। যে পেশাটি আমি মনেকরি সবথেকে সম্মানজনক একটি পেশা। কারণ, একজন অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাঁর সেবা করা, তাঁর পাশে থেকে তাঁকে রোগমুক্ত করা এর থেকে বড় সেবা আর কি হতে পারে। অথচ আমাদের ডিপ্লোমা নার্সিংয়ের ওপরে আর কিছু ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘যে কারণে এই কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যেখানে গ্রাজুয়েটস্ নার্স হবে, নার্সরা ট্রেনিং নেবে, পিএইচডি করবে এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। নিজেদেরকে মানব সেবায় দক্ষ করে গড়ে তুলবে।’
‘আর সেজন্যই নার্সদের বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ চাকরির আপগ্রেডেশন করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মর্যাদা না বাড়ানো হলে হয়তো অনেকেই এই পেশায় আসতে চাইবে না’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস শিল্পনির্ভর গাজিপুরের শ্রমিক শ্রেনীর জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা ও এই কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার একটি উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, শুরুতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে প্রথমে ১০ কোটি টাকা এবং আরো ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে দিয়ে ২০ কোটি টাকার দিয়ে এখানে একটি ট্রাস্ট ফান্ড করে দেওয়া হয়। যাতে এখান থেকে একেবারে হতদরিদ্র রোগীরা যেন চিকিৎসা সেবাটা পেতে পারে।
এখানে আরো কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় রোগী আসে যাদের অপারেশন লাগে এবং অন্যান্য ব্যাপারেও অনেক অর্থ লাগে । সেখানে ৫ হাজার টাকার অধিক রোগীর জন্য বরাদ্দ করতে গেলে ট্রাস্টের অনুমোদন লাগে যে কারণে আমরা আরো কিছু অর্থ বরাদ্দ দেব।’
তবে, জরুরী অবস্থার কোন রোগীর ক্ষেত্রে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা অর্থের দিকে না তাকিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এখানকার চিকিৎসকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
দেশের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক স্বনামধন্য চিকিৎসকরা এই হাসপাতালে অন্তত সপ্তাহে একদিন করে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন, যার ফলে এই হাসপাতালটি নিয়ে মানুষের মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,তাঁর সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে এখন স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায়ের মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। যেখান থেকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ওষুধও বিতরণ করা হচ্ছে। অথচ,বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে সরকারে আসার পর এই ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধের যুক্তি হিসেবে তারা বলে, কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষ সেবা নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দিবে। অথচ প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য চালু করা এই স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমটি খুবই দরকারি।’
‘যেখানে দরিদ্র মানুষেরা সহজেই সেবা পেয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় প্রসূতী নারী ও শিশুরা। বাড়ির কাছেই থাকায় পায়ে হেটে এসেই তাঁরা ডাক্তার দেখাতে পারেন,’ যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়োচিত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বিগত সাড়ে দশ বছরে স্বাস্থ্য সেবার বিস্তার ও গুণগত মান উন্নত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই সময়ে প্রজনন হার ও মৃত্যু হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ নবজাত শিশু ও মাতৃ-মৃত্যু হার হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকে সমানভাবে যে উৎসাহিত করছে তারই এক উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ।
তিনি বলেন, ‘জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট-এর এটি একটি মানবিক উদ্যোগ যা আমি ও আমার বোন শেখ রেহানা ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল জাতির পিতার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে শুরু করি এবং সে বাড়িটিও আমরা ট্রাস্টকে দান করে দেই।’
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহতদের নিয়মিত সহযোগিতা প্রদানসহ যেসব সেবাধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের কাশিমপুর ইউনিয়নে ট্রাস্টের নিজস্ব জমিতে নির্মিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ট্রাস্টের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেয়েছে।’
তাছাড়াও বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট বিভিন্ন সময়ে সারাদেশে বিনামূল্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি পালন করে থাকে, বলেন তিনি।