বরিশালে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী

310

॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : জেলায় প্রতিবন্ধীদের মানসম্পন্ন শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম। এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিবন্ধীরা পাচ্ছে শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সুযোগ। অসচ্ছল শারীরিক প্রতিবন্ধীরা পাচ্ছে উন্নতমানের চিকিৎসা। উন্নত চিকিৎসা পেয়ে ঘুরে যাচ্ছে প্রতিবন্ধীদের জীবনের মোড়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবন্ধী শিক্ষা নিশ্চিত করতে জেলায় সরকারি ৩টি ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বেসরকারি ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৫’শ ৫০ জন আবাসিক প্রতিবন্ধীকে উন্নত শিক্ষা প্রদান করে আসছে। এরমধ্যে নগরীর আমতলার মোড় (পশ্চিম আলেকান্দা) সরকারি দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে প্রায় ৭৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে ৪০ জন ছাত্রী ও ৩৫ জন ছাত্র রয়েছে। এদের বই, খাতা, কলমসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ প্রদান, আবাসিক সুবিধা, ভরণ-পোষণ ও নিয়মিত ভাতা প্রদান করছেন। নগরীর কাশিপুর সমন্বিত দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী কেন্দ্র এবং নগরীর রূপাতলী শেখ রাসেল দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রায় ২’শ ১০ জন শিক্ষার্থীকে একই ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
এছাড়া জেলায় সর্বমোট প্রায় ১ হাজার ৪শ’ ৩৯ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ প্রদান ও নিয়মিত ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে ১’শ ১০ জনকে নিয়মিত, ৭’শ টাকা করে এবং স্মাতক পর্যায়ে ৭৫ জনকে নিয়মিত ১ হাজার ২’শ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
নগরীর সরকারি দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সোহরাব হোসেন, আসলাম, হাসান এবং ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী সৃষ্টি দাস, হুমাইরা ও আয়শা জানায়, আগে তারা তাদের পরিবারের সাথে ছিলো। তখন তাদের পড়াশুনায় অনেক কষ্ট হতো। বর্তমানে তারা বিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এখন লেখাপড়ার পাশাপাশি একাধিক সুযোগ পেয়ে তারা অনেক খুশি।
সরকারি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম জানান, বর্তমানে দুটি আবাসিক ভবনে ৭৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ভাতা পাচ্ছে। বর্তমান সরকার এদের শিক্ষার যাবতীয় উপকরণ প্রদান, ভরণ পোষণের খরচ ও নিয়মিত প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫’শ টাকা ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৭’শ টাকা হারে মাসিক ভাতা প্রদান করছেন। এটি আগে ছিল ২’শ ও ৩’শ টাকা। পরে এটি দু’দফা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে সুনাগরিক ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার বিকল্প অন্য কিছু নেই।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সুবিধাভোগী সরকারি বিএম কলেজের দর্শন বিভাগে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজমল হোসেন জানান, সরকারি ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে প্রায় ৩৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা নিয়মিত সরকারি সুবিধা ভোগ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
এব্যপারে সরকারি ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় (বিএম) কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শফিকুর রহমান শিকদার জানান, তার কলেজে বর্তমানে ৩৭ জন দৃষ্টি প্রতিন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে প্রতিবন্ধী চিকিৎসা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মারুফ আহমেদ বাসস’কে জানান, জেলার ১টি স্থায়ী এবং কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ ইউনিটের মাধ্যমে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ জনকে নিয়মিত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ মোবাইল থেরাপী ইউনিটের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, চলতি বছরে ২৫ হাজার প্রতিবন্ধীকে ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। একটি স্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র ও ৭টি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা ইউনিটের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সর্বোমোট প্রায় ৩০ হাজার উপকারভোগী নিয়মিত সরকারের অনুদান পেয়ে অপেক্ষাকৃত উন্নত জীবন যাপন করছেন।