হবিগঞ্জের কৃষ্ণপুর ট্রাজেডি দিবস ১৮ সেপ্টেম্বর

308

হবিগঞ্জ, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস): ১৮ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের কৃষ্ণপুর ট্রাজেডি দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার হাওর এলাকার অবহেলিত কৃষ্ণপুর গ্রামে ১২৭ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। পঙ্গুত্ব বরণ করে এখনও বেঁচে আছেন আরও অন্তত ১৫/২০ জন। কৃষ্ণপুর দিবস উপলক্ষে সেখানকার বধ্যভূমিতে এলাকাবাসী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা।
কৃষ্ণপুরের পার্শ্ববর্তী চন্ডিপুর। ১৬টি বাড়ি ছিল সেখানে। ’৭১ সালে পাক বাহিনী সবকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এখন সেখানে একটি পুকুর রয়েছে। গ্রামের ছিটেফুটাও নেই।
স্থানীয়রা জানান, খেলু রাজাকার ও লাল খা রাজাকার মিলিত হয়ে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে অবস্থানকারী পাক বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে কৃষ্ণপুর গ্রামের ১২৭ জনকে হত্যা করে।
এখনও বেঁচে থাকা পঙ্গু এক মুক্তিযোদ্ধা জানান, পাক বাহিনীর গুলিতে কে কোনদিকে মরছে তা দেখার উপায় নেই। চোখ বেঁধে লোকজনকে মারপিট করা হয়। ব্রাশফায়ারের মাধ্যমে হত্যার পর লাশগুলো ভাসিয়ে দেয়া হয় পানিতে। লাশ কোথায় গেছে তা কেউ জানে না। লাশের গলায় কলসি বা ইট বেঁধে লাশগুলো পাশের নদীতে ফেলা দেয়া হয়। সৎকার করার কোনো লোক ছিল না গ্রামে। তাছাড়া সেই সময় বর্ষা ছিল। লাশগুলো কোথায় রাখা যাবে? তাই আমরা লাশগুলোকে এক এক করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি। একজন স্বজনের লাশ সৎকার না করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া যে কত কষ্টের তা আমরা ছাড়া আর কে বুঝবে?
কৃষ্ণপুর গ্রামে গেলে দেখা মিলবে কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কারও বা আবার পিঠে মাত্র অর্ধেক মেরুদন্ড। ভুঁড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরও কিভাবে ৪৪ বছর বেঁচে থাকা যায় কৃষ্ণপুর না গেলে বুঝার কোনো উপায় নাই। একজন মহিলা কিভাবে সারিবদ্ধ লাশকে এক জায়গায় করে নিজের সন্তানের খোঁজ নিয়েছেন তাও জানা যাবে কৃষ্ণপুর গেলে। এমন সাহসী নারীও রয়েছেন যিনি লাশগুলো সৎকার করতে না পেরে একে একে লাশের গলায় কলসী বেঁধে ও ইট বেঁেধ সেগুলো পার্শ্ববর্তী নদীতে ফেলে দিয়েছেন।
কৃষ্ণপুরের গণহত্যার জন্য দায়ী করা হয় মুড়াকরি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীকে। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালে মামলা হয়েছে। চলছে স্বাক্ষ্য গ্রহণ। এরই মধ্যে গোপনে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছেন লিয়াকত আলী। এলাকাবাসী লিয়াকত আলীকে দেশে এনে বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।