নাটোরে আউশের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

482

নাটোর, ২৬ জুন, ২০১৮ (বাসস) : জেলায় আউশের আবাদি জমি ক্রমশঃ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় সাত হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক হাজার ৭৬২ হেক্টর অতিরিক্ত আবাদি জমিতে অর্থাৎ মোট আট হাজার ৮১২ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ করা হয়েছে। চালের বাড়তি বাজার দর ও আগাম বর্ষণের অনুকূল পরিবেশের পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনা ও প্রদর্শনী খামার স্থাপনের সুফল হিসেবে আউশের আবাদি জমি বৃদ্ধি পেয়েছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া,বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষকরা মূলতঃ আউশ আবাদ করেন। এরমধ্যে বড়াইগ্রাম উপজেলায় সর্বাধিক ২ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে, এরপর পর্যায়ক্রমে গুরুদাসপুর উপজেলায় ২ হাজার ৫১৫ হেক্টর এবং সিংড়ায় ২ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। এছাড়া লালপুর উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর এবং হালতি বিল অধ্যুষিত নাটোর সদর উপজেলায় ২৭৫ হেক্টর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় ২৫০ হেক্টরে আউশ ধান আবাদ করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত বছরগুলোতে জেলায় আউশ ধানের আবাদি জমির পরিধি ক্রমশঃ বেড়েছে। ২০১৫ সালে জেলায় ৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছিল। এর পরবর্তী ২ বছরে যথাক্রমে ৬ হাজার ২৬০ হেক্টরে এবং ২ হাজার ৭০৮ হেক্টরে আউশ আবাদ হয়। চলতি বছরে ৮ হাজার ৮১২ হেক্টর আউশের আবাদি জমি থেকে অন্ততঃ ২২ হাজার ৩০ টন চাল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেলায় স্থানীয় জাতের পাথরকুচি ও শনি ধান খুব সীমিত আকারে মাত্র ৩শ’ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। অবশিষ্ট জমির পুরোটাই উচ্চ ফলনশীল জাতের। এরমধ্যে ব্রি ধান-৪৮ সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া রয়েছে ব্রি ধান-৫৫ ও বিআর-২৬। দীর্ঘ সময় ধরে কৃষকরা জমিতে আউশ ধানের চারা রোপণ করেন। মধ্য মার্চ থেকে রোপণ কার্যক্রম শুরু করে অব্যাহত থাকে জুন মাস পর্যন্ত। বীজতলায় কাল গণনা শুরু করে ধান ওঠা পর্যন্ত জীবনকাল একশ’ থেকে ১১৫ দিন পর্যন্ত। বিঘা প্রতি ফলন ১৭ থেকে ২০ মণ। আগস্ট-সেপ্টেম্বর ধান কাটার ভরা মৌসুম।
কৃষি বিভাগ চলতি মৌসুমে জেলার এক হাজার কৃষককে আউশ প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় মোট পাঁচ টন বীজ, ২০ টন ইউরিয়া সার, ১০ টন করে ডিএপি ও এমওপি সার এবং পাঁচ লাখ টাকার সেচ সহায়তা প্রদান করেছে। প্রণোদনার পাশাপাশি ‘চাষি পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প’র আওতায় সারা জেলাতে আউশের ১৫০টি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়েছে। জেলার ১৫০ জন নির্বাচিত কৃষককে তাদের এক একর জমিতে আউশ আবাদের সহায়তা বাবদ প্রত্যেককে ১০ কেজি করে বীজ, ১৬ কেজি ইউরিয়া, ২২ কেজি টিএসপি, ১৫ কেজি এমওপি এবং এক কেজি করে দস্তা ও বোরণ সার প্রদান করেছে কৃষি বিভাগ। এসব খামারগুলোতে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের আউশ চাষাবাদ পদ্ধতির মান উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কে অবহিতকরণ তথা প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন।
নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর কৃষি ব্লকে ক্লাস্টার আকারে চারটি আউশের প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়েছে।
কৃষক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, সময়ে সময়ে কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমার জমির প্রদর্শনী খামারে আসছেন এবং সার ও সেচের প্রয়োগ, আগাছা ও কীটপতঙ্গ দমনের ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকদের সাথে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শস্য কর্তনের মাধ্যমে এসব প্রদর্শনী খামারের উৎপাদন চিত্র পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রদর্শনী খামারবিহীন অন্য জমির আউশ উৎপাদনের তুলনামূলক চিত্র কৃষকদের অবহিত করা হবে বলে জানালেন এ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল হোসেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ বলেন, এবার আগাম বর্ষার কারণে মুগ ডালের দ্বিতীয় পর্যায়ের জমি এবং আগাম পাটের পরিত্যক্ত জমিতে কৃষকরা আগ্রহ সহকারে আউশ চাষ করেছেন। আউশের আবাদি জমি এ কারণে অনেকটা বেড়েছে। ফলন বৃদ্ধির জন্যে কৃষি বিভাগের সবরকমের তৎপরতা অব্যাহত আছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, বাজারে চালের ন্যায্য মূল্য, আগাম বর্ষায় অনুকূল পরিবেশ ও আবহাওয়া, সর্বোপরি সরকারের প্রণোদনা ও প্রদর্শনী খামার স্থাপন কর্মসূচির কারণে জেলায় আউশের আবাদি জমির পরিধি বেড়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকদের নিরলস পরিশ্রম, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আশাকরি ফলনও হবে আশানুরূপ।