নবীর ব্যাটিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশকে হারের লজ্জা দিলো আফগানিস্তান

232

ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীর ৫৪ বলে অপরাজিত ৮৪ রানে ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে হারের লজ্জা দিলো আফগানিস্তান। টুর্নামেন্টের তৃতীয় ও নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানরা ২৫ রানে হারায় বাংলাদেশকে। এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৪ রান করেছ আফগানিস্তান। জবাবে ১৯ দশমিক ৪ ওভারে ১৩৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় আফগানিস্তান। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করেন পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। প্রথম ডেলিভারিতেই আফগানিস্তানের ওপেনার রহমনউল্লাহ গুরবাজকে দুর্দান্ত আউট সুইং-এ বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। শূন্য হাতে ফিরেন গুরবাজ।
আরেক ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাইকে বিদায় দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১ রানে থামেন জাজাই।
১০ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। সেই চাপ দূর করার চেষ্টা করেছিলেন পরের দুই ব্যাটসম্যান নাজিব তারাকাই ও আসগর আফগান। কিন্তু তাদের উইকেটে থিতু ঘাটতে দেননি সাইফউদ্দিন। ১১ রান করা তারাকাইকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান সাইফ। দলীয় ১৯ রানে আউট হন তারাকাই।
এরপর দলকে বড় জুটি এনে দেয়ার ইঙ্গিত দেন আসগর ও নাজিবুল্লাহ। চতুর্থ উইকেটে ২১ রানের জুটিও গড়েছিলেন তারা। তবে এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরিয়ে আফগানদের চাপ আরও বাড়িয়ে দেন সাকিব। ৫ রান করা জাদরানকে তুলে নেন টাইগার নেতা। ফলে ৪০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বড় ধরনের চাপে পড়ে আফগানিস্তান।
ষষ্ঠ ওভারে চার ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর দলকে খেলায় ফেরানোর দায়িত্ব নেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আসগর ও নবী। দ্রুতই উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন তারা। এতে আসগর-নবীর ওপর ভর শতরানের পৌঁছায় আফগানিস্তানের সংগ্রহ।
দলকে ১১৯ রানে থামেন আসগর। নো-বলে একবার জীবন পেয়ে দায়িত্বপূর্ণ ৪০ রান করেন তিনি। তার ৩৭ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো। সাইফউদ্দিনের তৃতীয় শিকার হবার আগে নবীর সাথে ৬৩ বলে ৭৯ রান যোগ করেন আসগর।
আসগরের বিদায়ের পর ব্যাট হাতে বিধ্বংসী রুপ নেন নবী। ৪১তম বলে টি-২০ ক্যারিয়ারে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। সৌম্য সরকারের করা ১৮তম ওভারে শেষ পাঁচ বল থেকে ২২ রান নেন নবী। সাইফউদ্দিনের পরের ওভারে ৫ বল মোকাবেলা করে ১৬ রান তুলে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা তৈরি করেন নবী। আফগানিস্তানের শেষ ওভার শুরুর আগে নবীর রান ছিলো ৫১ বলে ৮৪। কিন্তু ইনিংসের শেষ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন মুস্তাফিজুর রহমান। মাত্র ৩ রান দেন তিনি। ফলে সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে পারেননি নবী। ৩টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৫৪ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন নবী। ৬ উইকেটে ১৬৪ রানের সংগ্রহ পায় আফগানরা। বাংলাদেশের সাইফউদ্দিন ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেন। সাকিব নেন ২ উইকেট।
জয়ের জন্য ১৬৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আফগানিস্তানের মত প্রথম বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ডান-হাতি অফ-স্পিনার মুজিব উর রহমানের ঘূর্ণিতে কাবু হন ওপেনার লিটন দাস। শূন্য হাতে ফিরতে হয় তাকে।
চমক দিয়ে লিটনের সাথে ওপেনার হিসেবে নেমেছিলেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। দুর্দান্ত এক শটে বাউন্ডারিতে ভালো কিছুর ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন মুশি। কিন্তু ৫ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। বাউন্ডারি মারার পরের বলেই আফগান পেসার ফরিদ মালিককে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন মুশফিক।
১১ রানের মধ্যে ২ ওপেনারের বিদায় চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশকে। দলকে চাপ মুক্ত করার দায়িত্ব পান তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক সাকিব ও চার নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দেখেশুনেই এগোচ্ছিলেন তারা। কিন্তু পঞ্চম ওভারের মুজিবের ঘুর্নির কাছে হার মানেন সাকিব। ২টি চারে ১৩ বলে ১৫ রান করে আউট হন তিনি।
সাকিবের বিদায়ে ব্যাট হাতে নামেন সৌম্য সরকার। মুশফিক ওপেনিং-এ যাওয়ায় পাঁচে খেলতে নামেন সৌম্য। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই মুজিবের ঘুর্ণিতে লেগ বিফোর হন সৌম্য। তাই লিটনের মত শুন্য হাতে ফিরেন সৌম্যও। এতে ৩২ রানেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে জুটি বাঁেধন মাহমুদুল্লাহ ও সাব্বির রহমান। উইকেট বাঁচিয়ে খেলার দিকে মনোযোগি হন তারা। শুরুতে সাবধানী হলেও উইকেটে সেট হয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন মাহমুদুল্লাহ-সাব্বির। তাই ১৩ ওভারে শতরানের কাছাকাছি লড়াইয়ে ফেরার পথ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ১৪ ও ১৫তম ওভারে বিদায় ঘটে দুই সেট ব্যাটসম্যানের। ৫টি চারে ৩৯ বলে ৪৪ রানে প্রথমে মাহমুদুল্লাহ, ১টি চারে ২৭ বলে ২৪ রান করে পরে আউট হন সাব্বির। মাহমুদুল্লাহকে শিকার করেন নাইব এবং সাব্বিরকে আউট করেন মুজিব। তাই শতরানে পৌঁছানোর আগে দু’জনের বিদায়ে, ৯৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পথ দেখে ফেলে বাংলাদেশ।
তবে আশা ছাড়েনি বাংলাদেশ। কারণ এরপরই উইকেটে যোগ দেন আগের ম্যাচের দুই হিরো আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন। ঐ সময় বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিলো ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৩ বলে ৬৮ রান। কিন্তু আফগানিস্তান বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং-এ দ্রুত রান তোলার কাজটি করতে পারছিলেন না আফিফ-মোসাদ্দেক। ফলে শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের সমীকরন দাড়ায় ৫১ রান।
কিন্তু ১৮তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন আফিফ। ২টি চারে ২৭ বলে ২৪ রান করেন আফিফ। তার বিদায়ের পরের ওভারে বাংলাদেশের বাকী তিন উইকেটের দু’টি তুলে নেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ। সাইফউদ্দিন ২ ও মোসাদ্দেক ১২ রান করে রশিদের শিকার হন। তখন ঐ ওভারের তিন বল বাকী ছিলো। তাই অনেকেই ভেবেছিলেন, ১৯তম ওভারেই শেষ হবে বাংলাদেশের ইনিংস। কিন্তু তা হয়নি। তবে শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা, তৃতীয়-চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে শেষদিকে দর্শকদের কিছুটা আনন্দ দেন বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজ। তবে পঞ্চম বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ফলে ২ বল বাকি থাকতে ১৩৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ফিজ ৬ বলে ১৫ রান করেন। আফগানিস্তানের মুজিব ৪ ওভারে ১৫ রানে ৪ উইকেট নেন।
২ খেলায় দু’টি জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আফগানিস্তান। অপরদিকে, ২ খেলায় একটি জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। ২ খেলায় ২ হারে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে জিম্বাবুয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আফগানিস্তান : ১৬৪/৬, ২০ ওভার (নবী ৮৪*, আসগর ৪০, সাইফউদ্দিন ৪/৩৩)।
বাংলাদেশ : ১৩৯/১০, ১৯.৪ ওভার (মাহমুদুল্লাহ ৪৪, সাব্বির ২৪, মুজিব ৪/১৫)।
ফল : আফগানিস্তান ২৫ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মোহাম্মদ নবী (আফগানিস্তান)।