সরকার প্রতিটি গ্রাম আলোকিত করতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

744

ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং দেশের প্রতিটি গ্রাম আলোকিত করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে আলোচনা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি গ্রাম আলোকিত করতে চাই, আর সেজন্য আমরা বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইন স্থাপন করছি এবং প্রতিবেশী দেশ- ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে আলোচনা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মোট ৪৩৫.৪ মেগাওয়াট উৎপাদন-ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ৩৩/১১ কেভি জিআইএস সাব-স্টেশন এবং ১০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার দেশে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভুটান ও নেপালে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে এবং মিয়ানমার ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দারিদ্র-মুক্ত দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ঘরে বিদুৎ পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কেননা বিদ্যুৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন আর দেশে এখন ২২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
সরকার দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের নাগরিক সুযাগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ধাপে ধাপে দেশের প্রতিটি গ্রাম, উপজেলা ও ইউনিয়নের সকল মানুষকে বিদ্যুতায়নের আওতায় অনা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, গ্রাম ও শহরের প্রতিটি ঘরে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দেওয়া এবং আমরা সে লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছি।’
যদিও প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার উৎপাদন খরচের অর্ধেক মূল্যে গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াত সরকার দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাই। সেই অবস্থা থেকে আমরা ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এই খাতকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস করে ৩২০০ মেগাওয়াটে নিয়ে গিয়েছিল।’
প্যারামাউন্ট বিট্রাক লি. এর বাঘাবাড়ি, সিরাজগঞ্জ ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইউনাইটেড জামালপুর পাওয়ার লি. এর জামালপুর ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, কনফিডেন্স পাওয়ার-২ লি. এর বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্রিড-কানেক্টেড পাওয়ার জেনারেশন প্লান্ট এর কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি ৭.৪ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
নতুন আটটি বিদ্যুৎ সবস্টেশন হলো- গোদনাইল, মন্ডলপাড়া, ফতুল্লাহ’র দাপা, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাহ্র নন্দলালপুর, শাহজানহানপুর, মুগদাপাড়া, রামপুরার বনশ্রী ও ঢাকার শাহবাগের জহির রায়হান সড়ক।
শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসা ১০টি উপজেলা হল- দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ ও সদর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি ও আক্কেলপুর, রাজশাহীর পবা, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও সদর, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর ও নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, দেশের মোট ৩৪০টি উপজেলা ইতোমধ্যে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।
অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মির্জা আজম এমপি, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও মো. হাবিবে মিল্লাত এবং এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)’র বাংলাদেশ শাখার কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বিদ্যুৎখাতের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর বাসিন্দাদের সাথে মতবিনিময় করেন।