চাঁদপুরে ইলিশের আমদানি ভালো হওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন

286

চাঁদপুর, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস): জেলায় ইলিশের আমদানি ভালো হওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুরে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। এতে করে বেড়েছে দেশের ইলিশের সবচে বড় বাজার চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজারের শ্রমিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা ও। গত এক মাস আগের তুলনায় এখন আমদানি কিছু বাড়লেও তা উঠানামা করছে। তবে গত সপ্তাহে সাগর অঞ্চল থেকে চাঁদপুর মাছঘাটে প্রতিদিন প্রায় ১০০০/১২০০ মণ ইলিশ আমদানি হলেও গতকাল ও আজ তা ৮০০ মণ থেকে ৯০০ মণ আমদানি হয়েছে। এ কারণে ইলিশের দামও উঠা-নামা করছে। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে আগের থেকে এখন ইলিশের দাম কিছুটা বেড়েছে।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজারের আড়তদাররা জানান, গত প্রায় এক মাস আগে এখানে এক হাজার মণ থেকে বারোশ মণ ইলিশের আমদানি হতো। তবে গত সপ্তাহে হাতিয়া, সন্দীপ, বরিশাল, ভোলাসহ সাগর অঞ্চল থেকে প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার মণ ইলিশ এখানে আমদানি হয়েছে। কিন্তু গত দু’ দিন ধরে তুলনামূলক কমে গেছে ইলিশের আমদানি। শনিবার ও রোববার এ বাজারে প্রায় নয়শত থেকে এক হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। এতে করে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছের বাজারে সকাল ৮টার পর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত শ্রমিক, বিক্রেতা আর ক্রেতার ভিড়ে ঠাসা থাকছে বাজার।
সোমবার সকালে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ বাজারে গিয়ে দেখা গেল, হাতিয়া, সন্দ্বীপসহ সাগর অঞ্চল থেকে কয়েকটি ফিসিং বোট চাঁদপুর মাছঘাটে এসেছে। প্রতিটি ফিসিং বোর্টে রয়েছে ৭০ থেকে ১০০ মণ ইলিশ। সড়ক পথেও আসছে হাতিয়া লক্ষীপুরের মজু চৌধুরীর হাট থেকে পিকআপ ও ট্রাকভর্তি ইলিশ। এসব ইলিশ আনলোড করে আড়তের সামনে স্তুপ করে ডাক তুলছেন ব্যবসায়ীরা।
আড়তদার আমির হোসেন জানান, গত মাসের চেয়ে এখন ইলিশের দাম কিছুটা কম। যে বড় ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১৭শ’ টাকা তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩ শত টাকা থেকে ১৪ টাকা পর্যšন্ত। তবে এখনো ২ কেজি ওজনের বা তার থেকে ও বড় সাইজের দাম ২০০০-২৫০০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির নেতা মানিক জমাদার জানান, ঘাটে যে মাছ আসছে, তার অধিকাংশই চাঁদপুরের বাইরের মাছ। চাঁদপুরের লোকাল মাছ খুবই কম।দক্ষিণাঞ্চলের পাথরঘাটা, মহিপুর, শশীগঞ্জ, লেতরা ও হাতিয়ার গভীর সাগরের মাছ। আমদানিকৃত এসব ইলিশ এ বাজার থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, বর্তমানে চাঁদপুরের বাজারে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশের মণ ২৪থেকে ২৫ হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিমণ৩৩/ ৩৪ হাজার টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ৪৫ হাজার থেকে ৪৭ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি সাইজের ইলিশ এখানে দাম পড়ছে ১১শ ৫০ থেকে ১২৫০ টাকা পর্যন্ত। আর ১ লাখ টাকা দরে বিক্রি দুই কেজি ওজনের ইলিশের মণ। গত চার-পাঁচদিন আগে এ দরের চেয়ে ইলিশের দাম আরও কম ছিলো বলে জানান তিনি। সাগর অঞ্চল তথা নামার মাছ থেকে চাঁদপুরের লোকাল মাছের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা কেজি প্রতি বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, গত দু’ দিন ধরে চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের আমদানি কিছুটা কম।
ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুরে মাছ কিনতে আসেন ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ , সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ময়মনসিংহ, সাভার, গাজিপুরসহ
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা। তবে তারা স্থানীয় বাজারের দামের তুলনায় কিছুটা কম দামে কিনতে পেরে অনেকটাই খুশি।
হবিগঞ্জ থেকে মাছ কিনতে আসা আজগর আলী বলেন, চাঁদপুরের পদ্মার বড় ইলিশ কিনতে এসেছি এবং কিনেছিও, আমি দুই কেজি দুশ গ্রাম ওজনের দুটি ইলিশ কিনেছি ১০ হাজার টাকা দিয়ে।
তবে এ মাছ বিক্রেতা সোহেল জানান, গত ১৫ দিন আগেও এ মাছের দাম ছিল ১২/১৩ হাজার টাকা।
ঢাকা থেকে ইলিশ কিনতে আসা আরিফ ইউসুফ জানান, আমি চাঁদপুরের এ বাজারে এ প্রথম মাছ কিনতে এসেছি। পুরো বাজার ঘুরে মাছের দাম জানলাম। এখন ১ কেজি ১শত থেকে ২ শত গ্রাম ওজনের সাইজের ১৫ টি মাছ কিনেছি ১১৭৫ টাকা কেজি করে। তিনি বলেন, এখানে খারাপ-ভালো ইলিশ মাছ আছে। যে গুলো চাঁদপুরের স্থানীয় মাছ সেগুলো দাম একটু বেশি।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার বলেন, চাঁদপুরের লোকাল নদীর মাছ তেমন একটা নেই, আর যা ও পাওয়া যায় তার দাম একটু বেশি পড়ে। তবে বরিশাল, নোয়াখালীর হাতিয়া, লক্ষীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে মাছ ধরা পড়ছে। সেই মাছগুলো এখানে আমদানি হচ্ছে। আশা করছি, নদীগুলো সামনে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত মাছে ভরপুর থাকবে।
তিনি জানান, গত মাসে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। তবে গত শনিবার রোববার ও আজ মাছের আমদানি একটু কম হয়েছে। আশাকরি, দু’-তিন দিন পর আবার মাছের আমদানি আরও বাড়বে। তখন দামও আরও কমবে। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে মাছের দাম হাতের নাগালে রয়েছে। সবাই এখন ইলিশ খাওয়ার মতো পরিবেশ আছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে সহজেই ৪/৫/৬ শত গ্রামের মাছ পাওয়া যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারছেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান জানান, জাটকা ও মা ইলিশ নিধণের কারণে বাংলাদেশে ইলিশ একটা সময় কমে যাচ্ছিল। সরকার জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় অভয়াশ্রম কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রথম দিকে জেলেরা এ নিষেধাজ্ঞা মানছিল না। তাই সরকার তাূেদর বিকল্প আয়ের ও খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে এখন তারা কিছুটা সচেতন হয়েছে। এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে আজকে ইলিশের আমদানি বেড়েছে।
তিনি বলেন, এ জায়গায় খুশি হয়ে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা রক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সরকারের আইন মেনে জেলেরা চললে প্রতি বছরই সহনশীল মাত্রায় ইলিশ আসবে।
তিনি জানান, গত অর্থ বছরে ৫ লক্ষ্য ১৭ হাজার মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল। আর এবছর আগস্ট মাসে অন্য বছরের তুলনায় বেশি ইলিশ পাওয়ায় এবারো লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হবে এবং তা ৫ লক্ষ্য ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার মেট্টিকটন ইলিশ উৎপাদন হতে পারে।