নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ

678

নাটোর, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : দেশের ফল ভান্ডার খ্যাত নাটোরের সোনা ফলানো মাটিতে এবার মাল্টার চাষ হচ্ছে। বাগাতিপাড়া উপজেলার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে এ বিদেশী ফলের বাগান করে সফলতা পেয়েছেন। ২০১৩ সালে প্রদর্শনী খামারের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হওয়া মাল্টার আবাদি জমি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে সাড়ে চার হেক্টর।
ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকার কৃষক কালাম মেম্বার ছয় বছর ধরে মাল্টা চাষ করছেন। ১০ শতক জমিতে চাষাবাদ শুরু করলেও এখন জমি বেড়ে হয়েছে প্রায় পাঁচ বিঘা। ফলের পাশাপাশি চারার ব্যবসায় করছেন ব্যাপকভাবে। গত বছর কালাম মেম্বার প্রতিটি ৫০ টাকা দরে প্রায় সাত লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন নাটোর ছাড়াও পাবনা, রাজশাহীর আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে।
বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান দুই বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, মাল্টা চাষ যে কোন শস্য আবাদের চেয়ে লাভজনক। আর মাল্টার চাষাবাদকে ভবিষ্যতের জন্যে সম্ভাবনাময় বললেন তমালতলা এলাকায় দেড় বিঘা জমিতে মাল্টা আবাদকারী কৃষক মকবুল হোসেন। উভয়ের ধারণা, বাগাতিপাড়ার উর্বর মাটি মাল্টা চাষের জন্যে খুবই উপযোগী।
মাল্টার সাথে উপজেলার দয়ারামপুর এলাকার কৃষক জাহিদুল এবং চক গোয়াস গ্রামের কৃষক শিঠুর সহাবস্থান শুরু হয় ছয় বছর আগে। উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় এ দু’জন কৃষকের জমিতে প্রথম প্রদর্শনী খামার তৈরী করা হয়। ফলাফল আশাব্যঞ্জক। আশাবাদী কৃষক জাহিদুল মাল্টা চাষের পরিধি বাড়িয়ে এখন দুই বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করেন। ভবিষ্যতে বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনার কথা জানালেন জাহিদুল।
আট থেকে দশ ফুট উচ্চতার মাল্টা গাছের পরিচর্যায় তেমন কোন বেগ পেতে হয়না। এর পরিচর্যা অনেকটা পেয়ারা গাছের মত। আগাছা পরিষ্কার আর ক্ষেত্র বিশেষে সেচের প্রয়োজন হয়। জৈব সার হলেই চলে। তবে পাতাকে মাকড়শার হাত থেকে রক্ষা করতে সীমিত কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। দশ থেকে পনের বছর ধরে একটানা ফল দেয় এক একটি গাছ। মৌসুমে এক একটি গাছ থেকে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ মাল্টা পাওয়া যায়। পাঁচটি মাল্টার ওজন এক কেজি।
এ সেপ্টেম্বরে ভরা মৌসুমে মাল্টা বাগানের গাছে গাছে মাল্টার সমারোহ। ফলের ভারে নুব্জ হয়ে গেছে এক একটি গাছ। প্রত্যেক গাছে ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক করে মালটা শোভা পাচ্ছে। বাগানগুলোতে এখন ক্রেতাদের সমাগম। তমালতলা থেকে আসা ফল ব্যবসায়ী জাফর বলেন, আমি বাগাতিপাড়ার বাগানগুলো থেকে তিন-চারদিন পর পর মাল্টা কিনে ঢাকায় পাঠাচ্ছি। অপর ক্রেতা ফিরোজ জানালেন, এ মাল্টা উপরে সবুজ, ভেতরে খুব মিষ্টি। তাই বাজারে চাহিদা ব্যাপক। বাগান থেকে একশ’ থেকে একশ’ কুড়ি টাকা কেজি দরে কিনে বিক্রি করি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে।
মাল্টার বাগান আশা জাগিয়েছে উপজেলার কৃষকদের। তাই এর পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। শুধু মাল্টা উৎপাদনই নয়, গাছের চারা তৈরীতেও ঝুঁকছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। বাতাবী লেবুর গাছের ডালের সাথে মাল্টা গাছের ডাল গ্রাফটিং করে মাল্টার চারা তৈরী সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী।
মোমরেজ আলী বলেন, কৃষির বহুমুখীকরণে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ উপজেলায় ইতোপূর্বে ফুল চাষে সফলতা এসেছে। এখন হচ্ছে মাল্টা ও কমলার চাষ।
উৎপাদিত মাল্টার স্বাদ সম্পর্কে বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মাসুম বলেন, পাহাড়ের মাল্টা এখন সমতলে চাষ হচ্ছে এবং এর মিষ্টতা ও স্বাদ বাজারের প্রচলিত মাল্টার চেয়েও বেশী। ক্ষতিকর কীটনাশক এবং প্রিজারভেটিভ না থাকায় সজীব এ মাল্টা অর্গাণিকও বটে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত সরকার বাসস’কে বলেন, বিভিন্ন অপ্রচলিত ফল ও ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে নাটোরের কৃষি। জেলায় মাল্টা চাষের পরিধি বাড়াতে কৃষি বিভাগ সব রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বাজারে চাহিদা থাকায় সম্ভবানাময় ফল হিসেবে ভবিষ্যতে জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও মাল্টার চাষ সম্প্রসারিত হবে। এতে মানুষের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে।