বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : সন্তান ধারণের পর একজন নারীর অবশ্যই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে

273

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
গর্ভবতী-চিকিৎসা
সন্তান ধারণের পর একজন নারীর অবশ্যই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে
ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : মানুষ সাধারণত অসুস্থ হলে কিংবা কোন রোগ দেখা দিয়ে ডাক্তারের কাছে যায় বা চিকিৎসা নিয়ে থাকে। তবে বিশেষ করে একজন নারীকে বিশেষ সময় অর্থাৎ গর্ভে সন্তান ধারণ করার পর স্বাস্থ্যের প্রতি অতিরিক্ত নজর দিতে হবে। নতুবা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ঝুমা। প্রথমবারের মত মা হতে চলেছেন ঝুমা। ডাক্তারের মতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মে মাসের পাঁচ থেকে সাত তারিখের মধ্যে প্রথম সন্তানের জননী হওয়ার কথা ঝুমার। আর তাই বাসায় একটা উৎসব উৎসব রব। সবাই খুব খুশি। এমনকি স্বামী রাইহান আর ঝুমা তো ছেলে হলে কী না রাখবেন আর মেয়ে হলে কী নাম রাখবেন তাও ঠিক করে ফেলেছেন।
কিন্তু এপ্রিলের শেষের দিকে ঝুমার শরীরটা কেমন জানি খারাপ লাগতে শুরু করে করে। সবার মত তিনিও ভেবেছিলেন সন্তান জন্মদানের সময় চলে এসেছে, তাই শরীর এমন খারাপ করছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মে’র তিন তারিখে নগরীর একটি ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু ঝুমার শরীর কিছুটা খারাপ থাকায় ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেয় চার তারিখেই সিজার করবেন। সিজার শেষে ডাক্তার রাইহানকে জানান, ঝুমাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কারণ সিজারের একটু পরেই হার্ট এ্যাটাকে মারা যায় ঝুমা। কিন্তু তার সন্তান বেঁচে আছে।
প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল কর বিভাগে সদ্যনিয়োগ পাওয়া শ্যামলীর (ছদ্ম নাম) ক্ষেত্রেও। তবে শ্যামলীর বাচ্চা প্রি-ম্যাচিউরড। বাচ্চা বেঁচে থাকলেও সন্তান প্রসবের সময় হার্ট এ্যাটাকে মারা যান শ্যামলী।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা হক বলেন, মাঝে মাঝেই এ ধরনের ঘটনা শোনা যায় যে, অন্তঃসত্ত্বা নারী গর্ভকালে অথবা প্রসবের সময় অথবা প্রসবের পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মূলত ওই নারী অথবা তার পরিবার হৃদরোগের কথা না জানার কারণেই এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, একজন নারী যখন গর্ভবতী হন তখন তার শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মত হৃদযন্ত্রও খুব বেশি কাজ করে। যার কারণে যেসব নারীদের আগে থেকে হৃদরোগ রয়েছে তাদের ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে। আর এই হৃদরোগ সমস্যা প্রসবকালীন সময়ে প্রকট আকার ধারণ করে। এসময় রক্তচাপও বেড়ে যেতে পারে নারীর। রক্ত জমাট বেঁধে ফুসফুসের রক্তনালিতে বা পায়ের রক্তনালিতে আটকে গিয়ে নারী মৃত্যুর কোলে ঢলে যেতে পারে মুহূর্তের মধ্যে।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুন্নাহার সুলতানা বলেন, সবারই উচিত সচেতন হয়ে চলাফেরা করা। প্রতিটি মানুষেরই দরকার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। আর নারীরা যখন গর্ভে সন্তান ধারণ করেন তখন তাদের প্রতি অতিরিক্ত যতœ নিতে হয়। সন্তান ধারনের আগে জেনে নিতে হয় তার কি কি রোগ আছে। সন্তান ধারণের পর সেসব রোগ কি পরিমাণ ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সন্তান ধারণের পর অবশ্যই নিয়মিত চেকআপের মধ্যে থাকতে হয় একজন নারীকে।
তিনি বলেন, গর্ভকালে অনেক সময় নারী শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারে। এ সময় নারী অল্প পরিশ্রমেই খুব হাঁপিয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। অসম্ভব রকম ঘাম হতে পারে। এ সময় বুকের হার্টবিট অনেক বেড়ে যেতে পারে। হঠাৎ করেই রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বুকে ব্যাথা ও বমি হতে পারে। এছাড়াও পা ফুলে যেতে পারে অথবা শরীরে পানি জমতে পারে।
এসব লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই অতি দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। ডাক্তারের দেয়া নিয়মানুযায়ী চলতে হবে। অন্যাথায় যেকোন সময় দুর্ঘটনা হতে পারে বলে মত দেন এই গাইনী বিশেষজ্ঞ।
ডাক্তার সুলতানা বলেন, আমরা অনেক সময় নিজেরাই না জেনে অনেক কিছু করে থাকি। বিশেষ করে কারো শরীর খারাপ লাগলে শুরুতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে চাই না। ফার্মেসীতে গিয়ে ওষুধ খেয়ে খাই। যা কোনভাবেই উচিত নয়। হুটহাট করে ওষুধ খেলে অন্য কোন সমস্যাও তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর তাই সবসময় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলে তার পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত এবং এতে করে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়।
বাসস ইউনিসফে ফিচার/ফই/স্বব/১০০০/আহো/-এসএইচ