বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : বিএনপি খুনীদের দল : প্রধানমন্ত্রী

525

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-আলোচনা
বিএনপি খুনীদের দল : প্রধানমন্ত্রী

’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে একটি খুনী জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিলিটারি ডিকটেটররা যখন ক্ষমতা নেন তখন তাদের মনে ভেতর একটি সুপ্ত বাসনা থাকে রাজনৈতিক নেতা হওয়ার। যদিও প্রথমে তারা রাজনৈতিক নেতাদেরই গালি দেন। পরে আবার উর্দ্দি খুলে রাজনীতিবিদ সাজতে চান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘প্রথমে হ্যাঁ,না ভোট, তারপরে রাষ্ট্রপতির ভোট, অনেক নাটক করে এরপরে সে রাজনৈতিক দল করলো এবং সেটাও কয়েক দফা দলের নাম পরিবর্তন করে জিয়াউর রহমান বিএনপি সৃষ্টি করেন।’
তিনি বলেন, সেই দলে যোগ দিল আওয়ামী লীগের কয়েকটা বেঈমান-মোনাফেক, আর দলের অন্য সকল নেতা-কর্মীদেরই গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁরা কারাগারে ছিল। আবার ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হল জাতীয় চার নেতাকে। ’৭৫ সাল থেকে ’৭৯ সাল পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীরা কারাগারে বন্দি ছিল।
জিয়াউর রহমানই এদেশে গুম, খুনের রাজনীতির গোড়াপত্তনকারী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন- ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীর ওপর তারা অকথ্য অত্যাচার করেছে। অনেককে যে ধরে নিয়ে গেছে পরিবার লাশটিও পায়নি। আজ তারা গুম খুনের কথা বলে। এই দেশে গুম-খুনের কালচারটা শুরু করেছিল জিয়াউর রহমান।’
তিনি সে সময় গুমের শিকার কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের নারায়ণগঞ্জের ছাত্রনেতা মাহফুজ বাবুল, চট্টগ্রামে মৌলভী সৈয়দ, বগুড়ার যুবলীগ নেতা পটলকেও ধরে নিয়ে গিয়ে এমনভাবে খুন করে যে, পরিবার তাদের কোন হদিস পায়নি।’
শুধু আওয়ামী লীগ নয়, তথাকথিত ক্যু’য়ের নামে সেনা ও বিমান বাহিনীর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে জানতোনা তাদের কি অপরাধ এমনকি আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কোন সুযোগ ছিল না। ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে এসেছে এমন অনেককেও মেরে ফেলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘দিনের পর দিন ফাঁসি দিয়ে যেমন মেরেছে, গুলি করেও মেরেছে।’
তিনি বলেন ‘শোনা যায় জিয়াউর রহমান সকালে নাস্তার টেবিলে কাঁটাচামচ দিয়েই খেত। আর এ ধরনের মৃত্যুদন্ডের ফাইলে সই করতো’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অনেকেই সশ¯্র বাহিনীর জওয়ানদের ফাঁসি কার্যকরের সময়কার চিৎকারের আওয়াজ পেত, আকাশ-বাতাসও সে সময় ভারি হয়ে উঠতো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি’র চরিত্রটাই এ ধরনের খুনের। যেটা আপনারা দেখতে পেয়েছেন ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলায়। প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা করে আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হল।’
২১ অগাস্ট হত্যাকান্ডের শিকার নেতা-কর্মীদের লাশ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সরকার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে চায়নি উল্লেখ করে সেদিন গ্রেনেড হামলার সময় পুলিশের নীরব ভূমিকা, আলামত ধ্বংসের চেষ্টা এবং হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর উপর্যপুরী টিয়ারসেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ এবং হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া এবং আহসানউল্লাহ মাষ্টার হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৭ অগাস্ট দেশের ৬৪ জেলার ৫শ’ জায়গায় একযোগে বোমা হামলা হল। বোমা, খুন, হত্যা নির্যাতন জিয়াউর রহমান থেকেই শুরু। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ঠিক একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর প্রক্রিয়াতেই বিএনপি-জামায়াত হত্যাকান্ড এবং নির্যাতন চালিয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া, অস্ত্রের চোরাকারবারী, মানি লন্ডারিং-এমন কোন অপকর্ম নেই যা বিএনপি-জামায়াত করেনি। এর মাধ্যমে তারা সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া এসে আমাদের মেধাবী ছাত্রদের হাতে তার রাজনৈতিক দল করতে অস্ত্র ও অর্থ তুলে দিয়ে তাদের চরিত্র হনন করে তাদের লাঠিয়াল বাহিনী বানিয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করেছে। বহু ছাত্রনেতা এদের হাতে জীবন দিয়েছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত মোট ২৯ বছর এদেশে এই অরাজকতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল।
তিনি বলেন, জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বন্ধ করে কারাগারে থাকা সাড়ে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দিয়ে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দানের মাধ্যমে ব্যবসায়িকভাবেও প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে ঋণ খেলাপি’র কালচার শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র এটাও জানা উচিত, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন ও মার্শাল ল’ জারি করে নিজেকে নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার সামিল। আর এই ক্ষমতা দখলকে অবৈধই ঘোষণা করা হয়েছে উচ্চ আদালতের রায়ে। সেটা যদি হয় তাহলে বিএনপি’র সৃষ্টিওতো অবৈধ হয়ে যায়। সেটাতো তাদের মনে থাকা উচিত’।
পলাশির প্রান্তরে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতাকারী মীরজাফরের সঙ্গে সে সময়কার রাষ্ট্রপতি মোশতাকের তুলনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘মীরজাফরের মত সেও দুই মাসের বেশী ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। কিন্তু এই মোশতাকই জিয়াউর রহমানকে সেনা প্রধান করেছিল। কারণ জিয়া মোশতাকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘সেই জিয়াই পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেনাপ্রধান থাকার পাশাপাশি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা দেয়।’
কারবালায় নির্মম হত্যাকান্ডের সঙ্গে ১৫ আগস্টের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেন কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো ৩২ নম্বরে। আমরা দুইবোন ভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে যাই।’
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টে শুধু একটি পরিবারকে হত্যা নয়, দেশের ইতিহাস মুছে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে যার অবদান, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান তা মুছে দেয়ার অপচেষ্টা হয়েছিল।
বাসস/এএসজি-এফএন/এসএইচ/২২১০/-এবিএইচ