ভোলায় আখের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে

494

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ২৭ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : জেলায় গত কয়েক বছর ধরে আখের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছরই এখানে আখ আবাদের জমি সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে আখ চাষ হয়েছিলো ৫৩৬ হেক্টর জমিতে। আর বর্তমানে (২০১৮-১৯) আবাদ হয়েছে ৮২৪ হেক্টর জমিতে। আখের রোগ বালাই কম হওয়া, দাম ভালো পাওয়া, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ সেবা,ও প্রশিক্ষণ দেয়ার কারণে আখের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে চলতি মৌসুমে আখের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪৪ হেক্টর জমিতে বেশি হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বরিশাল, নোয়াখালী, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এখান থেকে আখ বিক্রি করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বীনয় কৃষ্ণ দেবনাথ বাসস’কে বলেন, এ জেলায় গুড় করার চেয়ে চিবিয়ে খাওয়ার আখটা বেশি আবাদ করা হয়। কারণ চিবিয়ে খাওয়ার আখে গুড় করার চেয়ে অন্তত ১০ ভাগ লাভ বেশি হয়। তাই দাম বেশি পাওয়াতে চাষিরা আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়া সম্প্রতি ধান চাষে লাভ কম হওয়াতে অনেক চাষি আখের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৫০০ চাষিকে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। চারা রোপণ, রোগ-বালাই দমন, সার প্রয়োগসহ নানান বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এখানে আখ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির বাসস’কে জানান, জেলায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে আখ চাষ হয়েছিলো ৫৩৬ হেক্টর জমিতে। ২০১৩-১৪ বছরে ৪৪ হেক্টর জমি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫৮০ হেক্টর। ২০১৪-১৫ বছরে হয়েছে ৬১৩। ১৫-১৬ অর্থবছরে চাষ হয়েছে ৭০৫ হেক্টর জমি ও ১৬-১৭ বছরে হয়েছে ৭৬০ হেক্টর জমিতে। ১৭-১৮ বছরে ৭৮০ ও ১৮-১৯ বছরে ৮২৪ হেক্টর জমি। প্রতিবছরই জেলায় আখ চষের জমির পরিমান বাড়ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ভোলায় কালী বোম্বাই, বোম্বাই, ২০৮, ঈশ্বরদী-২০৮ জাতের আখের চাষ বেশি হয়। প্রায় বছরকালীন মেয়াদের ফসল আখ গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে ক্ষেতে রোপণ করেছেন কৃষকরা। আগস্ট থেকে অনেক স্থানে আগাম কর্তন শুরু হলেও অক্টোবর পর্যন্ত ফসল তুলবে চাষিরা। তবে বর্তমানে বাজার দর বেশি পাওয়ায় প্রথম দিকের আখ রোপণকারীরা লাভবান হচ্ছেন বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
তারা আরো জানান, জেলায় চলতি মৌসুমের আখের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৮৮০ মে:টন। যা হেক্টর প্রতি ৪৬ মে:টন করে। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৪’শ হেক্টর জমিতে আখ কর্তন করা হয়েছে। এছাড়া আখ চাষে উদ্বুু¢ুদ্ধ করার জন্য ১’শ চাষিকে উন্নত আখের চারা (কাটিং) বিতরণ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের কৃষক রহমত মিয়া,ও বারেক আলী বলেন, আখে সাধারণত রোগ বালাই তেমন দেখা যায়না। তারপরেও কখোনো রেড-রড রোগ দেখা দেয়। এবছর এ রোগের উপদ্রব ছিলোনা। তাই তাদের ৭ হেক্টর জমিতে আখের ফলন ভালো হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের আখ কর্তন শুরু হবে। আশা করছেন ভালো দাম পাবেন তারা।
উপ-পরিচালক বীনয় কৃষœ দেবনাথ বলেন, আখে সাধারণত রোগ-বালাই তেমন হয়না। তারপরেও রেড-রড ও মাজরা পোকার আক্রমণ মাঝে মাঝে দেখা দেয়। রেড-রড হলে সেই (আক্রান্ত) জমিতে পরের বছর আখ চাষ না করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। এছাড়া মাজরা পোকা হলে ক্ষেতে বল্লা পোকাই তা নিধন করে ফেলে। তাই ক্ষেতে বল্লা পোকার বাসা না ভাঙ্গতে কৃষকদের বলা হচ্ছে।