মাসিক চলাকালে কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে

1118

ঢাকা, ২৭ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : যে কোন মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন। সু-স্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প নেই। তবে তারপরও প্রতিটি মানুষের জন্য বিশেষ সময়ে পুষ্টিকর খাদ্য পরিমাণমত না পেলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে পুষ্টিকর খাদ্য অবশ্যই দরকার। যেমন চৌদ্দ বছর বয়সী মারিয়া গত কয়েক মাস ধরে প্রায় সময় অসুস্থ থাকছে। আজ জ্বর তো কাল পেট ব্যাথা এমন অসুখ যেন তার নিত্যদিনের সঙ্গী। অসুখের কারণে প্রতি মাসে প্রায় দিনই স্কুল কামাই যায় তার। একেবারে কিছুই খেতে চায় না মেয়ে। না খেয়ে শরীর হয়ে গেছে শুকনো কাঠ। মুখেও ব্রণ হয়েছে বেশ।
এ রকম কয়েকদিন পরপর অসুস্থ থাকায় মা একদিন নিয়ে গেলেন এক গাইনী ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার রোগের ধরন আর মারিয়ার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন, সে আসলে অপুষ্টিতে ভুগছে।
ডাক্তার জানান, মূলত মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে তার এ ধরনের সমস্যা। এই বয়:সন্ধিকালে তার যে ধরনের খাবার দরকার তা সে খায়নি। সে কারণেই শরীর বারবার খারাপ হয়ে যায়।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মধ্য বেশ পরিবর্তন হয়। এ সময় তাদের মনের অবস্থার যেমন পরিবর্তন হয় তেমনি শারীরিক পরিবর্তনও হয়। মূলত ১১ বছর থেকে ১৮ বছর সময়কালকে বয়:সন্ধিকাল বলে। এসময় তাদের হরমোন নি:সরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, কিশোরীদের মাসিক শুরু হওয়ার সময় স্তনগ্রন্থি বৃদ্ধি পায়। আর মাসিকের সময় প্রায় কিশোরীদের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ এবং বেশী সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয়। আর এজন্যই এ সময় কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। অন্যথায় কিশোরী অপুষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগতে থাকে।
এ সময় কিশোরীদের মুখে বেশ ব্রণও দেখা যায়। আর তাই ব্রণ যাতে না হয় সেজন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ শাকসব্জি এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে কিশোরীদের।
ডা. মনোয়ারা বলেন, এই বয়ঃসন্ধিকালে বিশেষ করে অনেক কিশোরীই অতিরিক্ত ডায়েট করতে চায়। কিন্তু এই অতিরিক্ত ডায়েটিং এর ফলে মেয়েরা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে। অনেক মায়েরাও তাদের সন্তানদের এই অতিরিক্ত ডায়েটিং’ এ সমর্থন দিয়ে থাকে। যার ফলে ওই কিশোরী বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ভিটামিনের অভাব, রক্তশূন্যতায় ভুগতে থাকে। এজন্য প্রত্যেকের উচিত নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টিসম্মত খাবার খাওয়া।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের গাইনী এন্ড অবস্ বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, বয়:সন্ধিকালে সবার শরীর এবং মনের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। আর এ কারণেই অভিভাবকদের এ সময় খুব সচেতন থাকতে হয়। এ সময় কিশোরীদের কী কী খাবার দিতে হয় তা অনেক বাবা-মা’ই জানেন না। মূলত অসচেতনতার কারণেই এমন হয়। এই সময়কালে কিশোরীদের খাবারের তালিকায় কী কী রাখতে হবে তা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সে অনুযায়ী চলাই উত্তম।
তিনি বলেন, একটা বয়সে বিশেষ করে ১৮ বছর থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে মানব দেহের হাড় বৃদ্ধি পায়। পরে এই হাড় সাধারণত আর বাড়ে না। তাই এই সময় প্রচুর ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার থেতে হবে। শাক-সব্জি, ছোট মাছ, ডিম, দুধ, দই, বাটারজাতীয় খাবার খেলে হাড় বৃদ্ধি পায়। আর কিশোরীদের খাবারের তালিকায় এসব খাবারই রাখতে হবে।
ডা. রোকেয়া বলেন এই বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা খুবই দরকার। কিন্তু দেখা যায়, কৈশোরেই খাদ্যে অনিয়ম, অপুষ্টি বা অতিপুষ্টি, ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয় বেশি। এর প্রতিক্রিয়া পড়ে পরবর্তী সময়ে, দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। এ ছাড়া বয়ঃসন্ধিতে কিশোরীদের কিছু পরিচিত সমস্যার সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, যখন কিশোরীদের নিয়মিত মাসিক শুরু হয় তখন প্রচুর পরিমাণে ও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয়। প্রয়োজনীয় খাবার না খেলে দেখা দেয় এনিমিয়ি বা রক্তশূন্যতা। কিশোরীদের প্রতি মাসে লৌহ বা আয়রনের চাহিদা ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মাংস, কলিজা, শাক, মাছ, ডিম বেশি করে খেতে হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ ফল যেমন কলা, আনার, পেঁয়ারা, খেজুর থেতে হবে।