বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৫ : নিয়ম মেনে চললে হাঁপানী থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব

102

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৫
এ্যাজমা-চিকিৎসা
নিয়ম মেনে চললে হাঁপানী থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব
ঢাকা, ২২ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : দেড় বছর বয়সী মিথিলা গত কয়েকদিন ধরেই ঠান্ডায় ভুগছে। রাতের বেলা যেন কষ্ট আরো বেড়ে যায়। খুব কান্নাকটি করে । এভাবে তিন-চারদিন চলার পর মিথিলার মা সিদ্ধান্ত নিল ডাক্তারের কাছে যাবে। সন্ধ্যায় স্বামী বাসায় ফিরলে সবাই মিলে যান কাছের এক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। ডাক্তার বাচ্চাকে অনেকক্ষণ দেখার পর জানালেন বাচ্চা হাঁপানীতে ভুগছে। এ কথা শোনার পর মিথিলার মা আফরোজা আর বাবা শাহেদ’র মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আফরোজা তো কান্নাই শুরু করে দিল।
ডাক্তার অনেক কষ্টে তাদের থামিয়ে তাদের জানালো অল্প কিছু ঔষুধ আর কিছু নিয়ম মেনে চললেই হাঁপানী থেকে বাঁচা যায়। সেক্ষেত্রে বাচ্চার আর তেমন কোন অসুবিধায়ই হয় না।
আরেক শিশু তিন বছর বয়সী আয়ান দুপুর বেলায়ও ভালই ছিল । কিন্তু সন্ধ্যা হতে না হতেই সে যেন কেমন নেতিয়ে যায়। মনে হচ্ছে তার শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। সারাক্ষণ ঘর মাতিয়ে রাখা আয়ানকে এমন চুপচাপ শুয়ে থাকতে দেখে মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল। ভালো করে ছেলেকে লক্ষ্য করে বুঝতে পারল ছেলে খুব জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। আর বুকে কেমন জানি গড়গড় আওয়াজ হচ্ছে।
আয়ানের মা ¯িœগ্ধা আর এক মুহূর্ত দেরী না করে ছেলেকে নিয়ে চলে যান তাদের পারিবারিক ডাক্তারের কাছে যিনি শিশু রোগ বিশেষজ্ঞও। আয়ানকে দেখেই ডাক্তার বুঝতে পারলেন তার হাঁপানী হয়েছে। আর এতেই তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের প্রফেসর ডা. এখলাসুর রহমান বলেন, শিশুরা মূলত বড়দের চেয়ে বেশি হাঁপানী রোগে আক্রন্ত হয়। মূলত শীতের শুরুতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তিনি বলেন, শিশুদের সব কিছুই খুব সংবেদনশীল। তাদের শ্বাসনালীও খুব সংবেদনশীল। তাপমাত্র মাত্র তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেলেই শিশুরা তা সহ্য করতে পারে না। এর ফলে তারা বেশী আক্রান্ত হয়। এ সময় অনেক শিশুর হাঁপানী দেখা দেয়। মূলত কাঁশি, শ্বাস কষ্ট, নিশ্বাস নেওয়ার সময় বুকে গড়গড় আওয়াজ এবং শোঁ শোঁ আওয়াজ হলে প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যায় যে, বাচ্চার হাঁপানি হয়েছে। মূলত ঘুমানোর সময় এসব সমস্যা বেশী দেখা যায়।
তিনি বলেন, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এ ধরনের লক্ষণ দেখা গেলেই বাচ্চাকে খুব দ্রুত নিকস্থ মেডিকেল অথবা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের প্রফেসর ডা. খায়রুল আমিন বলেন, অনেক কারনে শিশুদের হাঁপানী হতে পারে। ঠান্ডা, তাপমাত্রার পরিবর্তন, ধুলো-বালি থেকেও বাচ্চার হাঁপানী হতে পারে। অনেক সময় ধুলো-বালি অনেক বাচ্চাই সহ্য করতে পারে না। মূলত ধুলো-বালি থেকে অ্যালার্জির কারণে তাদের হাঁপানী হয়। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের ধুলো-বালি থেকে ধুরে রাখতে হবে। এছাড়া এসব বাচ্চাদের আঁশ জাতীয় পুতুল, বা তাদের ব্যবহারের জন্য লোমযুক্ত কম্বল দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, খাবারের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অনেক বাচ্চারই কিছু কিছু খাবার থেকে এলার্জি থাকতে পারে। সে সব খাবার কোনভাবেই বাচ্চাকে খাওয়ানো যাবে না। এছাড়াও হাঁপানী যদি বেশী হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ঔষুধ সেবন এবং নেবুলাইজার করানো যেতে পারে।
একই হাসপাতালের প্রফেসর ডা. মনির হোসেনের মতে শিশুকে হাঁপানী থেকে বাঁচানো না গেলেও এটা প্রতিরোধ করলে বাচ্চা সারা জীবন সুস্থভাবে বেঁচে থাকে।
তিনি বলেন আমরা বিশেষ করে বাবা-মা যদি একটি সচেতন হয় তবে বাচ্চাকে হাঁপানী অথবা অ্যাজমা থেকে দূরে রাখা যায়। এজন্য দরকার সচেতনতা। বাচ্চার সামান্যতম শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিলেই তা নিয়ে বসে না থেকে অথবা নিজে নিজে চিকিৎসা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে কোন অসুখ হলে প্রথমে আমরা নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা শুরু করি। আর এতে ভালো না হলে তবেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। শিশুদের বেলায় তো কোনভাবেই কাম্য নয়। যেকোন ধরনের সন্দেহ হলেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে তার পরামর্শ অনুযায়ী চলার মত দেন এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/স্বব/১৮১০/আহো/এসএইচ