সৌদি নারীর স্বপ্ন পূরণ হলো

306

রিয়াদ, ২৪ জুন, ২০১৮ (বাসস ডেস্ক) : নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। রোববার থেকে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীরা গাড়ি চালাচ্ছে। এটা রক্ষণশীল দেশটির জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
রিয়াদ নগরীতে জন্মগ্রহণকারী এক নারীকে তার অনুভূতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার নাম সামার আলমোগরেন। আমি একটি টকশো’র উপস্থাপিকা ও লেখিকা।’
তিনি আরো বলেন, ‘বহুদিন পর আমি আমার মুখ থেকে নিকাব সরালাম। প্রথম যেদিন আমি টেলিভিশনে আমার চেহারা দেখানোর সিদ্ধান্ত নেই। আমার পরিবারের সবার কাছ থেকে সমর্থন পাইনি। আমার এই সিদ্ধান্তে আমার ভাইয়েরা খুবই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু আমার বাবা সবসময়ই আমার পাশে ছিলেন। তিনি আমার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে আমাকে সমর্থন করেছেন। একমাত্র তিনিই আমার বিদেশে লেখাপড়ায় সমর্থন দিয়েছেন।’
সামার বলেন, ‘এর আগে বিভিন্ন দেশে আমি গাড়ি চালিয়েছি। আমার আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু নিজের দেশে, নিজের শহরে গাড়ি চালানো অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্যরকম।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মূলত গাড়ি চালাতে অপছন্দ করি। কিন্তু এটা ভিন্ন ইস্যু। এখানে আমার অধিকারের প্রশ্ন। গাড়ি চালানো, বা না চালানোটা আমার একান্ত নিজের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। আমার ইচ্ছে হয়ে চালাবো, ইচ্ছে না হলে চালাবো না।’
এই প্রত্যয়ী নারী বলেন, ‘উত্তেজনায় আমার সারা শরীর এখন কাঁপছে। খুব খুশির অন্যরকম একটা অনুভূতি। আমার আমার গাড়িতে বসে স্টিয়ারিং হুইল ধরবো। আমাকে এতোদিন দেশে গাড়ির পেছনের আসনেই বসতে হতো। এখন আমি চালকের আসনে বসতে পারবো। আমি আত্মনির্ভরশীল একজন নারী।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি জানতাম একদিন না একদিন আমার দেশে নারীদের গাড়ি চালানো অনুমতি দেয়া হবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আকস্মিকভাবে অনুমতি দেয়া হবে ভাবতেই পারিনি।’
সামার বলেন, ‘আমি আজ রাতে সাদা বুরকা পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কালো বুরকা মুসলিম নারীর বিশেষ পোশাকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থে এমন একটি শব্দও নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, নারীদের কালো বুরকা পড়তেই হবে। ইসলাম ধর্মে নারীদের মার্জিত শালিন পোশাক পড়তে বলা হয়েছে। আমি কালো পোশাকের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু জোর করে এটাকে চালিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিদেশে গাড়ি চালিয়েছি। আমার আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। তাই ইতোমধ্যে সবাই (নারীরা) আমাকে তাদের কর্মস্থলে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেছেন। অনেকে আমার গাড়িতে চড়ে কফিশপে যাবারও ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আমি আমার মাকে আমার গাড়িতে চড়াবো, ভাবতেই খুব ভালো লাগছে। আমার মা এই বয়সে গাড়ি চালাবেন না। আমি ও আমার বোনেরা আমাদের গাড়িতে করে তাকে বেড়াতে নিয়ে যাবো।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমার সন্তানকে নিয়ে গাড়ি চালাতে পারবো। সে বিশ্বাস করবে আমি তাকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমি সবসময় গাড়িতে তার সাথে থাকছি।’
সাদা শান্তির পোশাক। সামার তাই আজ রাতে এই পেশাকটি বেছে নিয়েছেন। তিনি নিজেকের পাখি নয়, প্রজাপতি ভাবছেন। মুক্ত স্বাধীন।