গ্রেনেড হামলা মামলার পেপার বুক প্রস্তুত হবে ২ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই : আনিসুল

256

ঢাকা, ২১ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : আইন, বিচার ও সংসদীয় বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, উচ্চ আদালতে জেল আবেদন ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানীর জন্য সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপার বুক প্রস্তুত করছে। দুই থেকে চার মাসের মধ্যে এটা প্রস্তুত হবে।
তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকর করতে উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের উপর শুনানীর প্রয়োজন। এই রুলে আবেদকারীদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেয়া যাবে। ডেথ রেফারেন্সের উপর শুনানীর আগে পেপার বুকের প্রয়োজন এবং এটি প্রস্তুত হচ্ছে। দুই থেকে চার মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হবে। এরপর মামলাটি শুনানীর জন্য তালিকাভূক্ত হবে।’
আজ রাজধানীর সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মন্ত্রী একথা বলেন।
আনিসুল হক আরো বলেন, সরকার তারেক রহমানসহ ২০০৪ সালের বর্বরোচিত ওই হামলার ঘটনায় দু’টি মামলার পলাতক সকল আসামীকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশা করি সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে সম্ভাব্য অল্প সময়ের মধ্যেই সকল পলাতক আসামীকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
এদিকে এটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম মঙ্গলবার বলেন, মামলা দুটির পেপারবুক প্রস্তুত হলেই তারা শুনানীর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
তিনি বাসসকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি নিজেই পদক্ষেপ নিব এবং প্রয়োজন হলে শুনানীর জন্য আবেদন জানাব।’
এর আগে ১৩ জানুয়ারি উচ্চ আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দুটি মামলার শুনানীর আবেদন আমলে নেন।
ঢাকার একটি আদালত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদ-াদেশ এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ প্রদান করেন।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাবুনালের বিচারক শাহেদ নূরুদ্দিন তারেক ও আরো ১৮ জনকে এই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ- এবং লুৎফজ্জামান বাবর ও সাবেক উপ-মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু ও কয়েকজন সাবেক সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে ফাঁসির রায় প্রদান করেন।

আদালত গ্রেনেট হামলা মামলায় ৪৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিযেছে। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত ও ৫০০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক সারা জীবনের জন্য পঙ্গুও হয়ে গেছে।
আদালত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সেসময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে ওই হামলার পটভূমি, উদ্দেশ্য ও পরিনতি সম্পর্কে ১২-দফা পর্যবেক্ষণও তৈরি করে। হামলায় ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন- লুৎফুজ্জামান বাবর, সালাম পিন্টু, মাওলানা তাজউদ্দীন, গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, পরিবহন মালিক মো. হানিফ, জঙ্গি মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল মালেক, শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ, আবু সাইদ, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ আবু তাহের, হোসেন আহমেদ তামিম, মইন উদ্দীন শেখ, রফিকুল ইসলাম ও মো. উজ্জল।
রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে তারেক রহমান ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তদানিন্তন রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিস চৌধুরী ও বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। অন্যান্য যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলো-জঙ্গি শাহাদৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, আব্দুর রউফ, সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান, হাফেজ ইয়াহিয়া, আবু বকর, আরিফুল ইসলাম,মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোহাম্মদ ইকবাল, লিটন, শফিকুর রহমান, আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ বাবু। এছাড়া বিস্ফোরকদ্রব্য আইন মোতাবেক তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়াও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আদালত লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, মাওলানা তাজউদ্দীন, মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, মো. হানিফ, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল মালেক, শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ, আবু সাইদ, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ আবু তাহের, হোসেন আহমেদ তামিম, মইন উদ্দীন শেখ, রফিকুল ইসলাম ও মো. উজ্জলকে ২০ বছরের কারাদ- দিয়েছে ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে।
এই মামলায় আদালত তারেক রহমান, হারিস চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, শাহাদৎ উল্লাহ, আব্দুর রউফ, সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান, হাফেজ ইয়াহিয়া, আবু বকর, আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিম, আনিসুল মুরসালিন, মোহাম্মদ খালিদ, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোহাম্মদ ইকবাল, লিটন, ও রাতুল আহমেদ বাবুকে ২০ বছর করে কারাদ- দিয়েছে ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।