বাসস সংসদ-৫ : বাংলাদেশের সব অর্জনই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার হাত ধরে এসেছে : আমু/ বাজেটের সুফল দেশের সব শ্রেণীর মানুষ ভোগ করবে : তোফায়েল

715

বাসস সংসদ-৫
বাজেট-আলোচনা
বাংলাদেশের সব অর্জনই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার হাত ধরে এসেছে : আমু/ বাজেটের সুফল দেশের সব শ্রেণীর মানুষ ভোগ করবে : তোফায়েল
সংসদ ভবন, ২৩ জুন, ২০১৮ (বাসস) : প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতাসহ বাংলাদেশের এযাবতকালের সব অর্জনই আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এসেছে।
পাশাপাশি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী উল্লেখ করে বলেন, এ বাজেটের সুফল দেশের সব শ্রেণীর মানুষ ভোগ করবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়।
গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ষষ্ঠ দিনে আজ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের নুরুল ইসলাম সুজন, নজরুল ইসলাম বাবু, নুুরুন্নবী চৌধুরী, পঞ্চানন বিশ্বাস, বেগম সাগুফতা ইয়াসমিন, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমর অংশ নেন।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামে দলটির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বারবার আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের চেষ্টা হয়েছে, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা এ দলকে ভাঙার ষড়যন্ত্রও করেছে। ইসকান্দার মির্জা থেকে শুরু করে আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ারা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন। তবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে বলেই বারবার আঘাত ও ভাঙার চেষ্টা করার পরও কেউ সফল হয়নি।
‘৭৫-পরবর্তী হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কথা তুলে ধরে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে পরিচালিত করা হয়েছিল। দেশকে তারা পাকিস্তানী ধারায় পরিচালনা করতে চায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ আবার মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ধারায় ফিরে আসে।
তিনি বলেন, ৬০ বছর ধরে হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্প সরানোর দাবি ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় চামড়া শিল্প সফলভাবে সাভারে সরানো সম্ভব হয়েছে এবং এর মাধ্যমে এই শিল্প পোশাক শিল্পের মতো বিশ্বে একটি নতুন সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই শিল্প ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
মন্ত্রী বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশে ১০ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে। এই শিল্প জিডিপিতে শতকরা ২৩ ভাগ অবদান রাখছে। বর্তমান সরকারের সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানার পারফর্মেন্স অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ১০ বছরে দেশের কোথাও সারের কোন সংকট হয়নি। সারের চাহিদা মেটাতে বার্ষিক ৫ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বৃটিশ শাসকরা এদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য নীল চাষ প্রবর্তন করেছিলেন। আর বিগত বিএনপি সরকারের আমলে তারা বলতেন, ‘ফসল উৎপাদন করে লাভ নেই, আমদানী করা ভালো’। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল খারাপ, কৃষকরা যখন সারের দাবি করেছিল তখন তাদেরকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে এদেশের কৃষি ব্যবস্থা রক্ষায় কৃষকরা যাতে এগিয়ে না আসে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের তান্ডবের মধ্যেও সরকার সারাদেশে কৃষকের কাছে সার পৌঁছে দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ওষুধ শিল্পকে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ১৫২টি দেশে এখন বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানী হয়। সেই শিল্পকে আরো বেশি বেগবান করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, প্লাস্টিক শিল্প, কেমিক্যাল ও ও মুদ্রণ শিল্পের জন্য আলাদা শিল্প নগরী স্থাপনের কাজ চলছে। যে কেমিক্যালের জন্য নিমতলী ট্র্যাজেডি ঘটেছিল সেই কেমিক্যাল শিল্প নিমতলী থেকে সরিয়ে নিয়ে ঢাকার বাইরে আলাদা শিল্প নগরী স্থাপন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কলগুলোতে আখ চাষীদের পাওনা সময় মতো পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব জাহাজ নির্মাণ ও রিসাইক্লিং শিল্প কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী বাজেট হিসেবে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সামগ্রিকভাবে অর্থমন্ত্রী একটি চমৎকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এই বাজেটের সুফল দেশের সকল মানুষ ভোগ করবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাসহ দেশের কল্যাণকর যা কিছু হয়েছে, তার সবকিছুই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্রে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপিরবারে হত্যা করে। এরপর বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে ঈশ্বরদীতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তিনি সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করেছেন, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি আজ এমন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, যখন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, তখন জাতির পিতার কন্যা ঘোষণা দেন- ‘আমি নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ করবো’ তাঁর দৃঢ়তা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। পায়রা বন্দর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, মাতার বাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেঘা প্রকল্প শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে আওয়ামী লীগ যাত্রা শুরু করেছিল, এখন তা ১৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। আগামী ২০২০ বা এর আগে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সম্মানজনক হারে বাড়ানোর দাবি জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি বিশেষ দিন। ওই দিন মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে অস্ত্র ধরেছিল। এজন্য তাদের জন্য তিনি ‘স্বাধীনতা ভাতা’ নামে একটি ভাতা প্রবর্তনের দাবি জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পহেলা বৈশাখ ও বিজয় দিবস ভাতা প্রবর্তনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
দেশের সংবিধানের প্রতি যাদের আনুগত্য থাকবে না তাদের এদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলাম দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। অথচ এখনো পর্যন্ত তারা দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়নি। তারা এখনো স্বীকার করেনি যে, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করে তারা ভুল করেছে। তারা দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব ও সংবিধানে বিশ্বাস করেন। আজ সময় এসেছে এই জাতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, জাতি কোন পথে চলবে। দুনিয়ার কোন দেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষ আর বিপক্ষ শক্তি বলে কিছু নেই।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বর্তমান সরকার একটি প্রযুক্তি নির্ভর জাতি গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। এদেশের যুব সমাজকে প্রযুক্তিতে পারদর্শী করার মধ্য দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শ্রম নির্ভর অর্থনীতি থেকে সরকার মেধা নির্ভর অর্থনীতিতে প্রণোদনা দিচ্ছে। ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ১৩ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। যারা বিগত ১ বছরে ১৬ লাখ ডলার আয় করেছে। আরো ৪০ হাজারকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। দেশে ২৮টি আইটি পার্ক নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সারাদেশে ৬৪টি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার হচ্ছে। যেখানে ২০২১ সাল নাগাদ ৩ লাখ তরুণ-তরুণকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং ওই সময়ের মধ্যে আইসিটি সেক্টরে ৩০ লাখ কর্মসংস্থান হবে।
তিনি বলেন, গত ৯ বছরে দেড় কোটি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এমন অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে, যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠাও, চলো, ওবার এর মতো রাইড শেয়ারিংয়ে ৬০ হাজার মোটর সাইকেল চালক ও টেক্সি চালকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার অনেক বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। আরো অনেক বিশাল বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির সহযোগিতা আর সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় এটা সম্ভব হয়েছে।
তিনি প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক খাতে সুস্থিরতা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি বলে উল্লেখ করেন। একইভাবে শেয়ার বাজার কেলেংকারির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন কথা বলা হয়নি। তিনি এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
বাসস/এমআর/এমএসএইচ/২২২৫/বেউ/-অমি