বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ব্যাপারে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

346

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বর্ধিত সভা
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ব্যাপারে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

অতীতে এসব অনুপ্রবেশকারীদের দলের কেউ কেউ প্রশ্রয় দিয়ে থাকলেও এখন এদের বিদায় দেয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে অনেক দুরভিসন্ধি নিয়ে দলে আসে। কাজেই এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে এবং নিবেদিত প্রাণ হয়ে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে।
আগামী নির্বাচন অতিব গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার হিসেব না মিলিয়ে দেশকে কি দিতে পারলাম বা আগামীতে কতটুকু কি দিতে পারবো তা মাথায় রেখেই ত্যাগের মনোভাব নিয়ে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়েও সকলকে কাজ করার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার হত্যাকারী এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দন্ড কার্যকর হবার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাক্ষীদের নিরাপত্তা প্রদানে সচেষ্ট থাকার জন্যও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী এ দিন আগামীর নির্বাচনও জোটবদ্ধভাবে করার দিকেও ইঙ্গিত দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জোট করেছি মহাজোট করেছি। নির্বাচনের স্বার্থে জোট করতে হয়। আমরাও করবো, আমরা বন্ধু হারাব না। সবাইকে নিয়েই করতে চাই।’
তবে, এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দায়িত্বটা অনেক বেশী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এদেশের সব থেকে বড় দল, তাঁর জনসমর্থন সব থেকে বেশি সেটা মাথায় রেখেই যাকে আমরা নৌকা মার্কা দেব যাকে আমরা নির্বাচনে প্রার্থী করবো তারপক্ষে সকলকে কাজ করতে হবে।’
কে প্রার্থী হলো সেটা বড় কথা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের এখন থেকেই জনগণের কাছে যেতে হবে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার জন্য।’ নৌকাই এদেশের মানুষকে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার, স্বাধীনতা এবং ভোট ও ভাতের অধিকার দিয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে বাস্তুুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের পুণর্বাসনে তাঁর সরকারের উদ্যোগ এবং তাঁদের আশ্রয় প্রদানে স্থানীয় জনগণের সমস্যা লাঘবে সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন।
নৌকার বিজয় হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত কাজ আমরা করেছি, যেভাবে দেশের উন্নয়ন আমরা করেছি। এরপরও নৌকা মার্কায় ভোট না পড়লে সেজন্য দলের প্রচার বিমুখতাই দায়ী হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী অতীতে জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে আগামীর নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে সে জন্য সচেষ্ট থাকার জন্যও দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে। ‘ভোট চুরি, ভোটডাকাতি’- যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি-সেভাবে কেউ জিততে পারবেন না। আওয়ামী লীগ এ বদনাম নেবে না। জনগণ স্বতস্ফুর্ত হয়ে আপনাকে আপনার কাজে খুশি হয়ে ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ কিন্তুু ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। নির্বাচন যেন স্বচ্ছ হয়। নির্বাচন নিয়ে কেউ যেন কোন কথা বলতে না পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের মন জয় করে তাদের ভোট নিয়েই ক্ষমতায় আসতে হবে এবং উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
প্রায় দেড় ঘন্টার দীর্ঘ ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীকার আন্দোলনসহ সকল গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গৌরবদীপ্ত অতীতের স্মৃতি স্মরণ করেন ।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ দিনটিতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তিনি।
সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাগত ভাষণ দেন। এর আগে দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ শোক প্রস্তাব পাঠ করেন।
সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম, কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ চার হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৮৪৫/আরজি