‘বদলি’ লাবুশেন নৈপুণ্যে ম্যাচ ড্র করলো অস্ট্রেলিয়া

351

লর্ডস, ১৯ আগস্ট ২০১৯ (বাসস) : টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ‘আলোড়ন সৃষ্টিকারী বদলির’ স্বীকৃতি পেলেন অস্ট্রেলিয়ার মার্নাস লাবুশেন। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ‘আলোড়ন সৃষ্টিকারী বদলি’ হিসেবে খেলতে নেমে এই স্বীকৃতি পান তিনি। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের পেসার জোফরা আর্চারের বাউন্সারে ঘাড়ের পেছনে আঘাত পাওয়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্মিভ স্মিথ। তাই তার পরিবর্তে ব্যাট হাতে নামেন লাবুশেন। এই নিয়মটি আগে ছিলো না। দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামলে শুধুমাত্র ফিল্ডিং-ই করা যাবে। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে আইসিসি এই নিয়ম পরিবর্তন করেছে। নতুন নিয়মে আছে, দ্বাদশ খেলোয়াড় ব্যাটিং-বোলিং ফিল্ডিং সবকিছুই করতে পারবেন। আর আইসিসির নতুন নিয়মের প্রথম ‘কংকাসন সাব’ হলেন লাবুশেন। সুযোগ পেয়েই ম্যাচ বাঁচালেন তিনি। স্মিথের পরিবর্তে চার নম্বরে ব্যাট হাতে নেমেই ৫৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ বাঁচিয়েছেন লাবুশেন।
গতকাল সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিনে, অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের জন্য ২৬৭ রানের টার্গেট দেয় ইংল্যান্ড। সেই টার্গেটে খেলতে নেমে ৪৭ রানেই ৩ উইকেট হারায় অসিরা। এরপর ইংল্যান্ডের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন ‘কংকাসন সাব’ লাবুশেন ও ট্রাভিস হেড। দু’জনে চতুর্থ উইকেটে ৮৫ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারের পথ থেকে সরিয়ে আনেন। ৮টি চারে ১০০ বলে ৫৯ রান করে ফিরেন লাবুশেন। তবে ৪২ রানে অপরাজিত থেকে টেস্ট ড্র করে মাঠ ছাড়েন হেড। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ২৫৮ ও অস্ট্রেলিয়া ২৫০ রান করে। এরপর ৫ উইকেটে ২৫৮ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। জয়ের জন্য ২৬৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৬ উইকেটে ১৫৪ রান করে ম্যাচ ড্র করে অস্ট্রেলিয়া। বার্মিংহামে প্রথম টেস্ট ২৫১ রানে জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া।
লর্ডস টেস্টে ‘কংকাসন সাব’-হিসেবে খেলতে পারায় ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ ম্যাচের মালিক হলেন লাবুশানেকে। দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আর্চারের বাউন্সারের মুখোমুখি হন তিনি। বলের গতি ছিলো ঘন্টায় ৯১ দশমিক ৬ কিলোমিটার। লাবুশেনের এমন দুর্দান্ত ইনিংসের প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পাইন। তিনি বলেন, ‘লাবুশেন দুর্দান্ত খেলেছে। শুরুতেই তাকে বাউন্সারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে । দুর্দান্তভাবে নিজের যোগ্যতা ও টেকনিক দেখিয়েছে লাবুশেন।’
ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় বেন স্টোকসের অপরাজিত ১১৫ রানে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২৬৭ রানের টার্গেট দেয় ইংল্যান্ড। শেষ দিনের চা-বিরতির এক ঘন্টা আগে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড।কিন্তু ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র’ই হয়। বৃষ্টির কারনে পুরো ম্যাচের পাঁচটি সেশন ভেস্তে যায়। ম্যাচের শেষদিনের খেলা শুরু হতেও এক ঘন্টা দেরী হয়। এ ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক হওয়া আর্চার দুই ইনিংসে শিকার করেন ৫ উইকেট ।
ম্যাচ ড্র হলেও, দলের পারফরমেন্সে খুশী ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা দারুণভাবে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছি এবং পরিকল্পনামত সবকিছু করতে পেরেছি।’
ইনজুরিতে পড়ায় তৃতীয় টেস্টে স্মিথের খেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যা অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় চিন্তার। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ১৪৪ ও ১৪২ রানের ইনিংস খেলে বিশ্বকে চমকে দেন স্মিথ। বল-বিকৃতির কারনে এক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি। ১৭ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেই রানের ফুলকি ফোটান স্মিথ। স্মিথের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক পাইন বলেন, ‘হেডিংলিতে তার খেলা নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারছি না। তার অবস্থার উন্নতির প্রয়োজন, এতে কোন সন্দেহ নেই। আশা করি, সে ভালোভাবে ফিরে আসবে।’
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, ‘স্মিথের ঘাড়ে স্ক্যান করানো হয়েছে রোববার। তবে তার ঘাড়ে কোন ক্ষতি হয়নি। স্ক্যানের পর টিম হোটেলে ফিরে এসেছে স্মিথ এবং বিশ্রাম নিয়েছে। তাকে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।’
দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের আর্চার সাত বলের ব্যবধানে দুই উইকেট নেন। অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজাকে শিকার করেন তিনি। আর্চারের প্রশংসা করে স্টোকস বলেন, ‘দলে এমন কাউকে পাওয়া আনন্দের। ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার গতিতে নয় ওভার বল করেছে সে। এটি ছিল খুবই বিপজ্জনক। আমরা সব সময় তাকে দলে পেতে চাই।’