প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট বিসর্জন দেওয়া যাবে না : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী

549

ঢাকা, ৬ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলা ভাষার জাতীয় প্রমিত মান নিয়ে কোন আপস নয়। কোন অবস্থাতেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সকল ক্ষেত্রসহ বাংলা ভাষার ডোমেইনে নাম লিখার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বিসর্জন দেওয়া যাবে না।
মন্ত্রী আজ মঙ্গলবার ঢাকায় সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে বাংলা ভাষায় ডোমেইনে বাংলা নাম লিখার বিষয়ে আইক্যান বিষয়ক গভর্ণমেন্টাল এডভাইজারি কমিটির প্রস্তাব পর্যালোচনা সংক্রান্ত বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন।
বৈঠকে বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহফুজুল করিম মজুমদার, বিসিসি পরিচালক মো: এনামুল কবির এবং বাংলা ভাষা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো: জিয়াউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, বাংলা ডোমেইনের নামে বিদ্যমান জটিলতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। তিনি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা – আইক্যান এর পূর্ণ সহযোগিতা আদায়ে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে আমরা ইউনিকোড বাংলার প্রমিত মান ব্যবহার করার জন্য ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামকে সম্মত করিয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমরা বুকের রক্ত দিয়েছি। দুঃখজনক হলেও সত্য ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম বাংলা লিপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতামতকে অনকে ক্ষেত্রেই গৌণভাবে দেখছে। ফলে প্রযু্িক্তগত ক্ষেত্রে অক্ষর ব্যবহারে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষাকে দেবনাগরীর মতো করে দেখা হয়েছে। বাংলাদেশের ভাষাবজ্ঞিানীসহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ও মতামতকে বাংলা ইউনিকোড লিপি উন্নয়নে বিবেচনায় রাখা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলা ভাষার প্রযুক্তগিত ব্যবহারকে যুগোপযোগী এবং সহজসাধ্য করতে বেশ কছিু কর্মসূূচি হাতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নে সরকার ১শ’ ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাংলা ভাষা র্চচা ও গবষেণা, বাংলা ভাষার উন্নয়নে কাজ এগিয়ে নেওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে এর প্রয়োগ করা আলাদা কোনো এজেন্ডো নয়, এটির সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক আত্মার।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলায় ‘ড়, ঢ়, য় এবং ৎ বর্ণ আছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন ভারতে দেবনাগরীতে নোক্তা বলে একটা জিনিস আছে, এই নোক্তা তাদের নানা কাজে লাগে। আমরা নোক্তার যুগ থেকে বিদ্যাসাগরের আমল থেকেই বেরিয়ে এসেছি এবং আমাদের ভাষায় নতুন চারটি অক্ষর যোগ করেছি। দেবনাগরী যেহেতু ফলো করা হয়েছে তাই আমাদের দাঁড়ি, ডাবল দাঁড়ি দেবনাগরীতে রয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। আর আমাদের ড়, ঢ়, য় লিখতে ওরা নোক্তা ব্যবহার করে। আমাদের যে স্বরচিহ্নগুলো এগুলোকে আমরা কার চিহ্ন বলি আর ওরা বলে মাত্রা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা কিন্তু আমাদের প্রমিত মান তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু ইউনিকোডে বাংলার এই সমস্যার কারণে আমরা যখন ডটবাংলায় বাংলা ডোমেইনে লিখতে যাচ্ছি তখন বাংলার ড়, ঢ়, য় এর প্রতিটি ক্যারেক্টারের জন্য দুটি করে কোড দিতে হয়। নোক্তা একটা আর ড একটা, নোক্তা একটা ঢ একটা-এমন করে। এটির পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনেও বাংলায় তথ্য খুঁজতেও ঝামেলা তৈরি করছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে আমরা সার্বিক বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। ভবিষ্যতেও সেই গুরুত্ব অব্যাহত থাকবে।’