স্মিথের প্রশংসা করলেন পাইন, হতাশ রুট

239

বার্মিংহাম, ৬ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : বল টেম্পারিং-এর দায়ে এক বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে ১৬ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। ফিরেছেন বিশ্বকে চমকে দিয়ে। অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই করেছেন সেঞ্চুরি। তার ১৪৪ ও ১৪২ রানের ইনিংসের উপর ভর করে বড় জয় দিয়ে অ্যাশেজ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। তাই গতকাল ম্যাচ শেষে স্মিথের প্রশংসাই করলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক টিম পাইন। তবে প্রথম ইনিংসে লিড পেয়েও ২৫১ রানে ম্যাচ হারে হতাশ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক জো রুট।
অনেকটা ব্যাকফুটেই থেকেই অ্যাশেজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া। কারন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ১৬ মাস পর এক সাথে জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামেন স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরুন বেনক্রফট। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে পুরোপুরিভাবেই ব্যর্থ বেনক্রফট ও ওয়ার্নার। বেনক্রফট ৮ ও ওয়ার্নার ২ রান করেন। শুধু তারাই নন, দলের অন্যান্য স্বীকৃত ব্যাটম্যানরাও ব্যর্থ। তাই ১২২ রানে ৮ উইকেট হারিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। এই অবস্থায় দেখেও ভেঙ্গে পড়েননি স্মিথ।
টেল-এন্ডার পিটার সিডলকে নিয়ে দারুন লড়াই করেন স্মিথ। নবম উইকেটে ৮৮ রানের জুটি গড়েন তারা। এরমধ্যে ৪৪ রান অবদান ছিলো সিডলের। শেষ উইকেটে শেষ ব্যাটসম্যান নাথান লিঁওকে নিয়ে লড়াই করেন স্মিথ। শেষ উইকেটে ৭৪ রান যোগ করে দলকে ২৮৪ রানের সম্মানজনক স্কোর এনে দেন স্মিথ। নিজে ১৪৪ রানে আউট হন। তার ২১৯ বলের ইনিংসে ১৬টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।
এরপর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৭৪ রান তুলে ইংল্যান্ড। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ৯০ রানের লিড পায় ইংলিশরা। পিছিয়ে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ৭৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। এই ইনিংসেও ব্যর্থ বেনক্রফট ও ওয়ার্নার। বেনক্রফট ৭ ও ওয়ার্নার ৮ রান করেন। তাই আবারো কঠিন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে নামতে হয় স্মিথ। এখানেও হাল ছাড়েননি তিনি। চতুর্থ উইকেটে ট্রাভিস হেডকে নিয়ে ১৩০ ও পঞ্চম উইকেটে ম্যাথু ওয়েডকে নিয়ে ১২৬ রানের জুটি গড়েন স্মিথ। এই ইনিংসেও সেঞ্চুরি তুলে আউট হন স্মিথ। ১৪টি চারে ২০৭ বলে ১৪২ রান করেন তিনি। সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন ওয়েডেও। করেছেন ১১০ রান। ফলে ৭ উইকেটে ৪৮৭ রান তুলে ইংল্যান্ডের সামনে ৩৯৮ রানের টার্গেট দিতে পারে অস্ট্রেলিয়া।
৩৯৮ রানের টার্গেটে অস্ট্রেলিয়ার দুই বোলার স্পিনার নাথান লিঁও ও পেসার প্যাট কামিন্সের তোপে মাত্র ১৪৬ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। লিঁও ৬টি ও কামিন্স ৪টি উইকেট নেন। ফলে দুর্দান্ত জয়ে অ্যাশেজ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া।
তাই ম্যাচ শেষে স্মিথের প্রশংসা করলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক পাইন। তিনি বলেন, ‘স্মিথের সর্র্ম্পকে বলার কিছু নেই। আমরা টেস্টে সেরা পারফরমেন্স দেখলাম। দীর্ঘদিন পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে যেভাবে দু’টি ইনিংস খেললো স্মিথ। এটিই সত্যি অসাধারন। দলের বিপদের সময় জ্বলে উঠে তার ব্যাট। আমরা এটির সাক্ষী হতে পেরে ভাগ্যবান। আমি অবাক বলবো না, ভেবেছিলাম আমরা ব্যাকফুটে ছিলাম। তবে ক্রিজে আমাদের সেরা খেলোয়াড়ই ছিলো।’
স্মিথের পাশাপাশি ওয়েড ও লিঁওর প্রশংসাও করেন পাইন। তিনি বলেন, ‘তাসমানিয়া কয়েক বছর ওয়েডকে খুব কাছ থেকে দেখছি। সে ফর্মে ছিলো ও ভালো অবস্থানে ছিলো। সবসময় টেস্টের পঞ্চম দিন বড় ধরনের চাপ আসে। বল হাতে অন্য প্রান্ত দিয়ে সেই সামলে নেয় লিঁও। লিঁও সবকিছু ধ্বংস করে কিন্তু আমরা তা ভাগাভাগি করি। আজ সকালে আমাদের বোলিং ছিলো দুর্দান্ত। এটি কোন সমস্যা নয়, কোথায় আমরা খেলছি। আমরা জানি, দর্র্শকরা আমাদের বিপক্ষে থাকবে। ছেলেরা ভালোভাবে এই পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে এবং নিজেদের সেরাটা দিয়েছে।’
পাইনের মত মুখে হাসি নেই রুটের। বাজেভাবে টেস্ট হারে হতাশ তিনি। তবে স্মিথের প্রশংসা ঝড়েছে তার কন্ঠেও, তাই ম্যাচ শেষে রুট বলেন, ‘এমন হার কস্ট দেয়, হতাশ করা। আমরা ভেবেছিলাম, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। স্মিথের দু’টি অসাধারন ইনিংস। তাকে আউট করার জন্য আমাদের ভবিষ্যতে কাজ করতে হবে।’
ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয় ইংল্যান্ডের পেসার জেমস এন্ডারসনকে। মাত্র ৪ ওভার বল করেন তিনি। এখনও শংকামুক্ত নন এন্ডারসন। তাই দ্বিতীয় টেস্টে তার খেলার ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছেন না রুট, ‘ইনিংসের শুরুতে এন্ডারসনকে হারানোটা ডয়লো বড় ধাক্কা। এটি খুবই হতাশার, কিন্তু লর্ডসে আমরা তার জন্য চেষ্টা করবো। এখনো নিশ্চিত নয়, তবে তার স্ক্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
প্রথম টেস্ট হেরে সিরিজে পিছিয়ে ইংল্যান্ড। লর্ডস টেস্টেই ঘুড়ে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন রুট, ‘প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা তিন বিভাগেই খারাপ খেলেছি। তবে লর্ডসে আমরা নিজেদের সেরাটা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।’