গুজবে কান দেবেন না : প্রধানমন্ত্রী

1129

ঢাকা, ৩০ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : কোন প্রকার গুজবে কর্ণপাত না করে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিবর্গকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দয়া করে কেউ গুজবে কান দেবেন না এবং আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবেন না, বরং যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের পুলিশে সোপর্দ করুন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে লন্ডন থেকে এক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
এক সরকারি সফরে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত শেখ হাসিনা তাঁর এদিনের ভাষণে মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য দেশবাসীকে তাঁদের বাড়ি-ঘর এবং চারপাশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখারও আহবান জানান।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে।
তিনি বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে একজন মা’কে পিটিয়ে মেরে ফেললো, আজ সেই মায়ের শিশুটির কি অবস্থা?’
‘কাজেই সকলের কাছে আমার আবেদন-আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যদি আপনারা কাউকে দোষী মনে করেন, তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার দরকার নেই বরং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিন’, যোগ করেন শেখ হাসিনা ।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজব শুনে কোন নিরাপরাধ মানুষকে মেরে ফেলা গর্হিত কাজ, এটা হত্যাকান্ডের শামিল।
এ প্রসঙ্গে তিনি পত্র-পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত না করার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কাছে আমার একটা অনুরোধ, প্রকৃত ঘটনা না জেনে সংবাদ পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না।’

ডেঙ্গুর বিস্তার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি এই রোগটি ছড়িয়েছে এবং শুরুতে এটি শহরাঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকা শহরে বিস্তার লাভ করে। এখন এটি ক্রমশ অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়েছে।
সামনে কোরবানীর ঈদ এবং প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে জনগণ নিজ নিজ ঘরে ফিরবেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন রোগীকে কামড়ানোর পর অন্য কাউকে সেই মশা কামড়ালে তিনিও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।’
‘কাজেই আমি আহবান জানাবো সকলেই নিজ নিজ বাড়ি, অফিস এবং আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন, যাতে এই মশা সেখানে ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করতে না পারে, ’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্র-শিক্ষক এবং সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে মনযোগী হতে হবে।
বসবাসস্থলের কোথাও যেন পানি জমে এই মশার বংশ বিস্তার না ঘটে সেজন্য সকলকে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি এ সময় সকলকে মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমানোরও আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এই রোগ থেকে বাঁচার কৌশল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিফলেট প্রচার করা হচ্ছে।
তিনি এ সময় দলের নেতা-কর্মীদের এই লিফলেট সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ারও আহবান জানান।
তাঁর সরকার এ বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি সম্ভাব্য সকল ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি ঢাকার দুই মেয়রের সঙ্গেও কথা বলেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার বিষয়েও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকবৃন্দ প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ সময় তিনি এই রোগ প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার জন্যও জনগণের প্রতি আহবান জানান।
শেখ হাসিনা এদিন ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত তরল দুধ উৎপাদন, বাজারজাত এবং বিক্রয় নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে একজন অধ্যাপক এক পরীক্ষার পর জানালেন এসব কোম্পানির দুধ ব্যবহার উপযোগী নয় এবং একটি রিটকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট ১৪টি কোম্পানির দুধ পাস্তুরাইজেশনের ওপর ৫ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
তিনি বলেন, ‘কেউ এর ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা করেনি। যারা এই দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে, কেউ ভাবেনি। যদি তারা টাকা রোজগার করতে না পারে এবং তাদের গরুকে খাওয়াতে না পারে তাহলে কি অবস্থা দাঁড়াবে?’
‘এসব বাস্তবতার সম্পর্কে ভাবাটা খুব জরুরি,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, যে অধ্যাপক ১৪টি কোম্পানির দুধ পরীক্ষা করেছিলেন তিনি আমদানীকৃত দুধের ওপর সেটি করেছিলেন কিনা?
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় তিনি সেটা করেননি। কাজেই তাঁর দুধের আমদানী, মজুদ, মোড়কজাত এবং বাজারজাতকরণের ওপর পরীক্ষাটা করা উচিত।’
বাংলাদেশ আমদানীর ওপর নির্ভর করতে চায় না, বরং আত্মনির্ভরশীল হতে চায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সকল পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের চাহিদা মেটাতে চাই।’
কাজেই এখানে আমদানীকারকের কোন কারসাজি রয়েছে কিনা এবং এক্ষেত্রে তারা কাউকে উৎসাহিত করছে কি না তা দেখা উচিত।
তাঁর সরকার দুগ্ধ খামার গড়ে তোলায় জনগণকে উৎসাহিত করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, এখন আমরা তাঁদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে চাই।’
চলমান বন্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগও বন্যা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
এ তিনি এ সময় বন্যা দুর্গত জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দল এবং এর সহযোগী সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
নদী ভাঙ্গনকে একটি সমস্যা আখ্যয়িত করে শেখ হাসিনা নদীর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত নদী খননের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।