রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ জাতিসংঘ মহাসচিবের

800

ঢাকা, ১৮ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের সঙ্গে ১৬ জুলাই দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বৈঠকে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুটির টেকসই সমাধানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও জোরালো সহায়তা চাইলে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এই সঙ্কটের সমাধানে তিনি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয় সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট বেশকিছু বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয় বৈঠকে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণের উদারতা ও মানবিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও ধন্যবাদ জানান।
বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করার বিষয়ে জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের মহাসচিবের অংশগ্রহণ, উপস্থিতি ও সম্পৃক্ততার অনুরোধ জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এসকল বিষয়ে জাতিসংঘে যে অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করবে তাতে অংশগ্রহণের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহাসচিবকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানান।
এদিকে নিউইয়র্ক স্টেটের সিনেট ডিস্ট্রিক-৩২ এর সিনেটর লুইস্ সেপুলভেদা ১৬ জুলাই জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রতি তাঁর আগ্রহের কথা তুলে ধরে সিনেটরদের একটি টিম নিয়ে বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। এসময় মিশনে উপস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে ও সাক্ষাৎ হয় এই সিনেটরের। স্পিকারও সিনেটরদের এই টিমকে বাংলাদেশ সফরে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এই সৌজন্য সাক্ষাতে উঠে আসে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরেন। প্রাকৃতিক তন্তু পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহারের সুফল এবং এসকল দ্রব্য ও পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করার ক্ষেত্রে সিনেটরদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জিএসপি’র বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি সিনেটর লুইস্কে বলেন, তিনি যেন তাঁর ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ ব্যবহার করে এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ভূমিকা রাখেন। লুইস এ বিষয়টির সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করবেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান। এছাড়া রোহিঙ্গা বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারাকে আরও সম্পৃক্ত করতে সিনেটর লুইসসহ অন্যান্য সিনেটর ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
অন্যদিকে এদিন সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস্থ বেল্লোজিনো পার্টি হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন একটি প্রবাসী বাংলা টিভি চ্যানেল ‘বাংলা চ্যানেল’ এর সম্প্রচার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। প্রবাসী বাঙালি শাহ জে চৌধুরী এই চ্যানেলটির সিইও এবং প্রেসিডেন্ট।
অনুষ্ঠানটিতে মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার নিউইয়র্ক প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায়ের বরেণ্যজন উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে প্রবাসে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচার এবং শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠায় নতুন এই চ্যানেল ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায় আয়োজিত ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক আরেকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এখানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ আর সেই তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নেই, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় সৃষ্টিকারী একটি উন্নয়নশীল দেশ।’ বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ ও বিনিযোগ আরও বাড়াতে আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় প্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ করে রোহিঙ্গা বিষয়ে আরও ভূমিকা রাখার জন্য প্রবাসীদের তিনি উৎসাহিত করেন।
উভয় অনুষ্ঠানেই প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশপাশি মূলধারার রাজনীতিবিদ, কাউন্সিলম্যান ও কগ্রেসম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।
কমিউনিটির এসকল অনুষ্ঠানে অন্যন্যাদের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং নিউইয়র্কে কনসাল জেনারেল মিজ্ সাদিয়া ফয়জুন্নেছা।