রেললাইন ও সেতু আধুনিকায়ন করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

600

ঢাকা, ১৭ জুলাই, ২০১৯ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের রেললাইন ও রেলসেতুগুলো আধুনিকায়ন এবং মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সরকার বৈদ্যুতিক ও উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা ও দেশের বৃহত্তম স্থল বন্দর বেনাপোলের মধ্যে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেস উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রেলখাতের উন্নয়নের জন্য শুধু নুতন বগি ও ইঞ্জিন সংগ্রহ করলেই হবে না। পাশাপাশি রেললাইন ও সেতুগুলোরও আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পতাকা নেড়ে ও বাঁশি বাজিয়ে ট্রেনটি উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, রেল সেবাকে দ্রুততম ও আরামদায়ক করতে বর্তমান সরকার দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রেনের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য রেল সেবাকে আধুনিকায়ন ও গতিশীল করার পাশাপাশি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া আমাদের লক্ষ্য।’
একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী চাপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত ঢাকা-রাজশাহী রুটের বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’-এর উদ্বোধন করেন। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল তিনি উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে রেল যোগাযোগ বাড়াতে এই ট্রেন সার্ভিসটি চালু করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সড়ক, নৌ ও বিমানপথের যেমন উন্নয়ন করেছে, ঠিক তেমনি বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে একটি আলাদা রেল মন্ত্রণালয় গঠন করেছে।
তিনি বলেন, ‘দেশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা রেললাইন দেখেনি এবং আমরা রেললাইনকে তাদের কাছে নিয়ে যাচ্ছি এবং এভাবে আমরা রেল নেটওয়ার্ক তৈরি করছি।’
শেখ হাসিনা রেললাইনের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে আধুনিক ট্রেন পরিচালনায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, রেলওয়ের পরিষেবাগুলোর পাশাপাশি এর ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নতুন ইঞ্জিন, কোচ এবং নতুন জনশক্তিও নিয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এডিবি সবসময় দেশের উন্নয়নে পাশে থেকেছে, বিশেষ করে রেলওয়ের জন্য।
তিনি বলেন, ‘রেলওয়েকে নতুন জীবন দেয়ার জন্য আমি এডিবিকে ধন্যবাদ জানাই’।
কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, অন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা রেল পরিষেবা বন্ধ করতে চেয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেললাইন চালু করে সরকার সেতুটিকে বহুমুখী করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা নদীতে দেশের বৃহত্তম সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, ভাঙ্গায় একটি রেলওয়ে জংশন নির্মাণ করা হবে এবং ফরিদপুর হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল নেটওয়াার্ক বিস্তৃত করা হবে। ‘এরফলে, ঢাকা-বেনাপোল রুটে দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার কমে যাবে এবং ঢাকা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও কমবে প্রায় ৪/৫ ঘণ্টা।’
নতুন ট্রেন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহার আগে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জনগণের জন্য এটি তার সরকারের উপহার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিরতিহীন আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে আমের মৌসুম চলছে। আম চাষীরা সম্প্রসারিত এই ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে লাভবান হবেন। তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সহজেই আম বাজারজাত করতে পারবেন।
রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক’র (এডিবি) আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে রেলখাতের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেনাপোল এবং চাপাইনবাবগঞ্জ প্রান্তের জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিদিন ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’-এর এক জোড়া ট্রেন ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচল করবে। এরমধ্যে যাত্রাপথে ঈশ্বরদী, যশোর এবং ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেনটি যাত্রা বিরতির কথা রয়েছে।
৮৯৬টি আসন এবং ১২টি কম্পার্টমেন্ট সমৃদ্ধ টেনটি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১১টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে এসে সন্ধ্য ৭ নাগাদ ঢাকায় পৌঁছবে এবং রাত সাড়ে ১২ টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে সকাল ৮টা নাগাদ বেনাপোল গিয়ে পৌঁছবে।
ট্রেনের টিকিট শোভন চেয়ার শ্রেণীর জন্য ৫শ’ টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসনের জন্য এক হাজার টাকা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনের জন্য ১২শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ট্রেনের কম্পার্টমেন্টগুলো ইন্দোনেশিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, জনগণ তাঁদের ঈদের সময় এই ট্রেনে ভ্রমণের সুবিধা নিতে পারবে।