এইচএসসিতে পাসের হার ৭৩.৯৩ শতাংশ : জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন

309

ঢাকা, ১৭ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার সারাদেশে গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী।
গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৯ হাজার ২৬২ জন। সেই অনুযায়ী এবার পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। এছাড়া জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৮ হাজার ৩২৪ জন।
আজ বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ কথা জানান।
এর আগে সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর সংশ্লিষ্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানরা তাদের স্ব স্ব বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫। এর মধ্যে ৮টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০। এছাড়া মাদরাসার আলিমে ৮৮ হাজার ৪৫১ এবং কারিগরিতে এইচএসসি (বিএম) ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬৪ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে অর্থাৎ এইচএসসিতে পাস করেছেন ৮লাখ ৯ হাজার ১৪৯ শিক্ষার্থী, যা গড়ে ৭১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে চলতি বছর ৮৬ হাজার ১৩৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এরমধ্যে পাস করেছেন ৭৬ হাজার ২৮১ জন। গড় পাশের হার ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষার্থী।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অর্থাৎ ভোকেশনালে এবার পাস করেছেন ১ লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন, যা গড়ে ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৩২০ জন। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী পেয়েছেন জিপিএ-৫।
এছাড়াও বিদেশ কেন্দ্রে মোট ২৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২৫৪ জন। যা শতকরা পাশের হার ৯৪.০৭ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৬ জন শিক্ষার্থী।
গত ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ১১ মে। এরপর ১২ মে থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়ে ২১ মে শেষ হয়।
এবছর সাধারণ ৮টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারে এগিয়ে কুমিল্লা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, পাস করেছে ৭৩ হাজার ৩৫৮ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭১ জন শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বোর্ডে। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ, পাস করেছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫০ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৭২৯ জন।
তৃতীয় অবস্থানে যশোর বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, পাস করেছে ৯৫ হাজার ৪৯৫ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৩১২ জন। চতুর্থ অবস্থানে দিনাজপুর বোর্ড। পাসের হার ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ, পাস করেছে ৮৯ হাজার ২৩৩ জন। পঞ্চম ঢাকা বোর্ড। পাসের হার ৭১ দশমিক ০৯ শতাংশ, পাস করেছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৭৯ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ১৮৭ হাজার জন।
ষষ্ঠ অবস্থানে বরিশাল বোর্ড। পাসের হার ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, পাস করেছে ৪৪ হাজার ৮৮৭ জন, জিপিএ-৫ ১ হাজার ২০১ জন। সপ্তম অবস্থানে সিলেট বোর্ড। পাসের হার ৬৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, পাস করেছে ৫১ হাজার ১২৪ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৯৪ জন এবং অষ্টম অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ, পাস করেছে ৬১ হাজার ৫২৩ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৮৬০ জন।
পরীক্ষায় কৃতকার্য সকল পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে সাংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণলয়, জেলা ও মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, বিটিআরসি, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর সমূহ, কলেজ প্রশাসন, কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, প্রত্যবেক্ষক, প্রধান পরীক্ষক, পরীক্ষক, নিরীক্ষক, বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পর্ণ হয়। এবছর ফল প্রকাশের জন্য নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যে ৫৫ তম দিনেই ফলাফল প্রকাশ করা হল।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে পূর্ব থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও পরামর্শে পাবলিক পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল প্রয়োগ করা হয়। যে কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার সময়ে প্রশ্ন পত্র ফাঁসের কোন ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। তবে শুধু পাসের হার ও জিপিএ-৫ বাড়লে ভালো মানুষ তৈরি হয় না। শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণে গুণান্বিত হতে হবে। নীতি নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে হতে হবে।
এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯০৯টি। এদিকে কেউ পাস করেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ৪১টি।