বগুড়ায় যমুনার পানি বেড়েই চলেছে

173

বগুড়া, ১৬ জুলাই, ২০১৯ (বাসস) : ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘন্টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ২৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে জেলার যমুনা তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ৩ টি উপজেলায় নতুন করে ৯ টি ইউনয়ন ও ৯৯ টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। তিন উপজেলায় ২৩ টি ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার ৯৬০ টি পরিবার নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৭৪০০ টি। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন, গ্রাম ও পরিবারের সংখ্যাবেশি সারিয়াকান্দি উপজেলায়। এ উপজেলায় ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯ টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ৬৪ টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবরের সংখ্যা ১২ হাজার ১০০ টি। ৩ টি উপজেলায় নদী ভাঙ্গনে ১৪৫ টি বাড়ি সম্পূর্র্ণভাবে এবং ২৯০ টি বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনটি উপজেলায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের অনেকে পরিবার বসত বাড়িতে ঘরের মাচা উঁচু করে কোনমতে দিন পার করছে। প্রায় ২ হাজার পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সারিযাকান্দি-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান উপস্থিত থেকে বন্যা কবলিত বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন।
বন্যা দুর্গত এলাকার ইউনিয়ন গুলোতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন গওসুল আজিম চৌধুরী। কোথাও ডায়রিয়া আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। বিশুদ্ধ পানির জন্য পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট সরবরাহ করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। বন্যায় ১৯০০ ল্যাট্রিন,২৪৫৭ নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ গুলো মেরামত করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার ত্রাণ কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানান, পানি বন্দি হয়ে পড়ার আগেই ২ হাজার পরিবার যমুনা ব্রহ্মপুত্র নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিপরীতে পূুর্বদিকে জেলার সারিয়াকান্দি , সোনাতলা ধুনট উপজেলায় বন্যার পানিতে ৮৯৭৮ হেক্টর কৃষি জমি প্লাবিত হয়েছে। কৃষি জামতে এখন আছে পাট, আউস ধান,সবজি,আমন বীজতলা,আখ।
আমন বীজতলা জলমগ্ন হলেও বন্যার পানি নেমে যাবার সাাথে সাথে নতুন করে বীজতলা তৈরী করা হবে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
সোনাতলা ও সারিয়াকন্দি উপজেলার ৫৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় জলমগ্ন হয়ে পড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের ২২২ টি পুকুরের ৭৩ দশমিক৯৭ মেট্রিক টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। যার মূল্য ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানান, ত্রাণ হিসেবে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৫১ মেট্রিক টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যমুনা তীরবর্তি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, সাড়ে ৩০ দশমিক ৫০০ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে বলে জানান ত্রাণ কর্মকর্তা।। ত্রাণও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ৫ লাখ টাকা, শনিবার বিকালে ৩০০ মেট্রিক টন চাল নতুন করে পাওয়া গেছে। এর আগে ত্রাণ হিসেবে জেলায় মজুদ ছিল ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ২০০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৩লাখ টাকা দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।