সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় ৮ উপজেলা প্লাবিত

572

সিলেট, ১২ জুলাই ২০১৯ (বাসস): মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এ অঞ্চলের বিভিন্ন নদনদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
এতে সিলেট জেলার ৩টি ও সুনামগঞ্জ সদরসহ ৫ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।পানিবন্দি হয়ে পয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।রাস্তাঘাট ও শ্রেণিকক্ষ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুই জেলার অন্তত দুই শতাধিক স্কুলে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়ক তলিয়ে গেছে। ফলে সুনামগঞ্জের তিন উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রন কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারাসহ প্রায় সবক’টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে ১১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, সুরমা নদীর পানির স্তর সিলেট সদর পয়েন্টে ১০.৫১ মিটার এবং এ পয়েন্টে বিপদসীমা ১০.১৫ নির্ধারিত। অর্থাৎ, সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুশিয়ারা নদীর পানি এর প্রবেশমুখ জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেটের সীমান্তবর্তী সারী ও পিয়াইন নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জেলায় গত তিনদিন ধরে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ঘন্টায় ৩৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৫৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বাসসকে জানান, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে, সিলেট জেলার চেয়ে সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বাসসকে বলেন, বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এই তিন উপজেলা ছাড়াও অন্যান্য উপজেলার নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। তবে বাড়িঘর কিংবা মানুষের ক্ষতি হয়েছে এমন খবর এখনও পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘আমরা সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৯টি স্থায়ী এবং ১৮৫ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য জন্য শুকনো খাবার ও নগদ অনুদান দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত টিআর চাল ও অর্থ রয়েছে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তা বন্যার্তদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।
এদিকে, সিলেটের তিন উপজেলায় ৩৫টি প্রাথমিক ও ২০টি মাধ্যমকি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসক জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্লাবিত এলাকায় পাঠদান অনুপযোগি স্কুলগুলোর ক্লাস স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, সুনামগঞ্জে জাদুকাটা ও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে জেলার পাঁচটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। দুই উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ শহরেও পানি প্রবেশ করেছে।
সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এ পাঁচ উপজেলায় ১৪ হাজার পরিবারের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বাসসকে জানান, জেলায় ১০টি আধুনিক আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তবে এখনও কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। পাঁচ উপজেলায় বেশকিছু স্কুলে পাঠদান বন্ধ রয়েছে ।
তিনি বলেন, ‘জেলা ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করেছে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৭৬৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে; যেখানে আছে চাল, ডাল, চিনি, লবনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এছাড়া ৩শ’ মেট্রিকটন চাল এবং আড়াইলাখ টাকা নগদ বিতরণ করা হয়েছে।’
তিনি জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী মজুদ রয়েছে।