তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

615

ঢাকা, ১২ জুলাই ২০১৯ (বাসস) : নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি আজ বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ দুইজেলার ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ বন্যার কারনে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তবে শুক্রবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ দুই জেলায় বন্যাপরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।
বাসস’র নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ওই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপরে উঠেছিল।
ডালিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, তিস্তা ব্যারাজ পয়েণ্টে বৃহস্পতিবার রাতে পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে এবং সেখানে পানির উচ্চতা ৫২ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়।তবে আজ শুক্রবার সকাল থেকে কয়েকদফায় পানি কমে বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ডালিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাত ৯টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে। ওই পয়েন্টে আজ সকাল ছয়টায় ২৪, সকাল নয়টায় ২২ এবং বেলা ১২টা ও বিকাল তিনটায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। সেখানে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেণ্টিমিটার। শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুর্বল স্থানগুলো শক্তিশালীকরণে জরুরী রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, তিস্তানদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেস্টিত প্রায় ১৫ টি চরাঞ্চল গ্রামের প্রায় ১০ সহ¯্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। শুক্রবার সামান্য কমলেও ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরশ্বর ও পুর্ব ছাতনাই গ্রামের প্রায় ৯০০ পরিবারের ঘরবাড়ি হাটু পানির নিচে তলিয়ে আছে। পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে দূর্ভোগে রয়েছে।
একই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি ও পূর্বখড়িবাড়ি মৌজা প্লাবিত হয়ে দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। পানির তোরে চরখড়িবাড়ি গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত দুই কিলোমিটারের বালুর বাধটি হুমকির মুখে পড়েছে।’
এদিকে নীলফামারীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নীলফামারী জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত বুড়িতিস্তা, দেওনাই, চাড়ালকাটা, ধাইজান, খড়খড়িয়া যমুনেস্বরীসহ সকল নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, নীলফামারী জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা এসএ হায়াৎ বলেন, তিস্তার পানিবৃদ্ধির ফলে ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই এবং টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ওই উপজেলায় ৫০ মেট্রিকটন চাল, ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে। ওই বরাদ্দ থেকে উপজেলা পরিষদ প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে পারবে।
এদিকে, বাসস’র লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে চরবাসিকে সতর্ক করে তাদেরকে নিরাপদস্থানে সরে যেতে বলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে গত চারদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় তিস্তাও ধরলা নদীর অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। তিস্তায় প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ৩০টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট এবং মোগলহাট ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
লালমনিহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, ‘জেলা ত্রাণ তহবিলে একহাজার ৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৫০ মেট্রিকটন জিআর চাল ও আড়াইলাখ টাকা মজুদ রয়েছে। উপজেলা থেকে তালিকা পেলে বরাদ্দ দেওয়া হবে।’